ভারতে চক্রের ফাঁদে কিডনি হারান অনেক বাংলাদেশি

ভারতে চক্রের ফাঁদে কিডনি  হারান অনেক বাংলাদেশি

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে একটি আন্তর্জাতিক কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট চক্রের সন্ধান পেয়েছে দিল্লি ক্রাইম ব্রাঞ্চ। ওই চক্রের হোতা চিকিৎসক বিজয়া কুমারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, চক্রটি বাংলাদেশ থেকে ভারতের রাজস্থান রাজ্য পর্যন্ত বিস্তৃত। এর আগে গত মাসে চক্রের তিন বাংলাদেশি সদস্য ও ত্রিপুরার এক বাসিন্দাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার চিকিৎসক বিজয়া ১৫ বছর আগে দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালে জুনিয়র চিকিৎসক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, তিনি হাসপাতালের বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিলেন না। অভিযোগ ওঠার পর তাঁকে বরখাস্তও করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, ৫০ বছর বয়সী বিজয়ার মাধ্যমে উত্তরপ্রদেশের নয়ডার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে অন্তত ১৬ জনের দেহে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, এ কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট চক্র চালানো হচ্ছিল রাজস্থান ও বাংলাদেশ থেকে। পুরো বিষয়টি নিয়ে দিল্লি পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে রাজস্থান পুলিশও।

এ বিষয়ে দিল্লির পুলিশ কমিশনার অমিত গোয়েল জানান, দিল্লির সরিতা বিহার হাসপাতালেও কাজ করেছেন ওই নারী চিকিৎসক। বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করা আরেক চিকিৎসকও তাঁর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে রোগীরা ভারতে এসে বিপুল অর্থের বিনিময়ে কিডনির চিকিৎসা করান। যাদের শরীর থেকে কিডনি নেওয়া হয়, তাদের টাকা ছাড়া চাকরির প্রলোভন দেখানো হয়। অনেক ক্ষেত্রে জোর করে বা ভয় দেখিয়েও কিডনি নেওয়া হয়ে থাকে। মূলত বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা ভিসার মাধ্যমে ভারতে আসার পর তাদের রাখা হয় দিল্লির আশপাশে গ্রামের ফ্ল্যাটে। যারা কিডনি নিতেন, তাদের দিতে হয় ন্যূনতম ৩০ লাখ রুপি। এ ক্ষেত্রে ডোনার পান মাত্র ৫ লাখ রুপি। চিকিৎসক বিজয়া পেতেন ৩ লাখ রুপি। অনেক ক্ষেত্রে ডোনারদের জানানো হয় না, তাদের কিডনি নেওয়া হচ্ছে।

দিল্লি ক্রাইম ব্রাঞ্চের দাবি, ডোনার হিসেবে যাদের কিডনি নেওয়া হয়, তাদের অনেককে জানানোই হয় না। তাদের কিডনি রোগী জানিয়ে বলা হয়, কিডনি পরীক্ষা করতে তাদের নেফ্রন নেওয়া হবে। ফলে না বুঝেই চিকিৎসক বিজয়ার ফাঁদে পা দিতেন তারা।

অন্যদিকে নয়ডার হাসপাতালের দাবি, গত তিন মাসে মাত্র একটি অস্ত্রোপচার করেছেন বিজয়া। পরিচিত দাবি করে ওই রোগীকে হাসপাতালে তিনি নিজেই নিয়ে এসেছিলেন। হাসপাতাল কোনো রোগীকে তাঁর হাতে কখনোই দেয়নি।

গত মাসে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট চক্রের তিন বাংলাদেশি সদস্য ও ত্রিপুরার একজনকে গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশ। তারা হলেন– রাসেল, সুমন মিয়া ও ইফতি। ত্রিপুরার ওই ব্যক্তির নাম রতিশ পাল। তারা প্রতারণা করে লোকজনকে দিল্লিতে নিয়ে যেতেন এবং প্রতিস্থাপন করার জন্য ৪-৫ লাখ রুপি দিতেন। অথচ কিডনি গ্রহীতাদের কাছ থেকে আদায় করতেন ২৫ থেকে ৩০ লাখ রুপি।

samakal