ভারতের সঙ্গে চুক্তিতে দেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার শঙ্কা বিএনপির

চিত্র:প্রথম আলোর লোগো.svg - উইকিপিডিয়া

ঢাকা

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। গুলশান, ঢাকা, ২৫ জুন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। গুলশান, ঢাকা, ২৫ জুনছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সম্পাদিত চুক্তিগুলোয় বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে করে বিএনপি। এতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ারও আশঙ্কা দেখছে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটি। এর বিরুদ্ধে আগামী শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি দেবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় নেওয়া এ সিদ্ধান্তের কথা আজ মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম।

বিএনপি বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর ওই সফরে ভারতের সঙ্গে ২টি চুক্তি, ৫টি নতুন সমঝোতা স্মারক, ৩টি চুক্তি নবায়নসহ ১০টি চুক্তি-সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। এসব চুক্তিতে বাংলাদেশের লাভ কী, সে প্রশ্ন তুলেছেন মির্জা ফখরুল।

সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এসব চুক্তি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় বলে জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘চুক্তিগুলো বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী হওয়ায় বিএনপি এই চুক্তিগুলো প্রত্যাখ্যান করছে। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, বিএনপি সৃষ্টিই হয়েছে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে। বিএনপি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে আমরা ২৮ তারিখে (শুক্রবার) সংবাদ সম্মেলন করব। এরপর আমরা প্রয়োজন হলে কর্মসূচি নেব।’

এই আন্দোলন ভারতের বিরুদ্ধে নয়, সরকারের বিরুদ্ধে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হচ্ছে ভারতের কাছ থেকে দাবিগুলো আদায় করে নিয়ে আসতে। পানির হিস্যার মীমাংসা না করেই সে চুক্তিতে সই করতে চাইছে। পানি সবচেয়ে আগে দরকার। সেটা না করেই তিস্তা প্রকল্পের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। কারণ, প্রকল্প করলে অনেক টাকা। এ টাকাই আসল উদ্দেশ্য।

মির্জা ফখরুল জানিয়েছেন স্থায়ী কমিটি মনে করে, এই অবৈধ সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল করে ফেলছে।

‘এসব চুক্তিতে বাংলাদেশের লাভ কী’

ভারত থেকে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী কানেকটিভিটি (সংযুক্তি), রেলযোগাযোগসহ সম্পাদিত চুক্তিকে যোগাযোগের দ্বার উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা বলেছেন। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনার চিকেনস নেকটাকে (ভারতীয় ভূখণ্ডের সরু একটি অংশ) বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে করিডর তৈরি করা—এটাতে বাংলাদেশের লাভ কী? কোথায় বলতে পারেন? সম্পূর্ণ লাভ তার (ভারতের)।’

বিএনপি এসব চুক্তির কেন বিরোধিতা করছে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন তো সুযোগ নেই দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখার। তাহলে কি বিএনপি দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে চায়? এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘কখনোই না, দরজা-জানালা খোলা থাকবে। কানেকটিভিটি হবে, তবে আমার স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে হবে না। আমার পানিকে বাদ দিয়ে কোনো চুক্তি হবে না। আপনি পানির ব্যাপারে কিছুই করছেন না। সীমান্তে লোক হত্যা করছে তারা। এই চুক্তিতে সীমান্ত হত্যার ব্যাপারে একটা কথা আছে? একটাও নেই।’

মির্জা ফখরুল জানান, স্থায়ী কমিটির সভায় ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি ও সমঝোতার বিষয়গুলো বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা, সীমান্ত হত্যা, কানেকটিভিটির নামে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত রেলযোগাযোগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগের সমঝোতা, কৌশলগত ও অপারেশনাল খাতে সামরিক শিক্ষা সহযোগিতা, ওষুধসংক্রান্ত সমঝোতা, বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতের অবাধ বিচরণ এবং ভারতের ইনস্পেস ও বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা, রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা, সমুদ্রবিষয়ক গবেষণায় দুই দেশের সমঝোতাগুলোতে বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে।

সেন্ট মার্টিন প্রসঙ্গে

বিএনপির স্থায়ী কমিটি সম্প্রতি মিয়ানমার কর্তৃক বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন পর্যন্ত জলসীমায় নির্বিচার গুলিবর্ষণের ফলে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সেন্ট মার্টিনের যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। অবিলম্বে মিয়ানমার কর্তৃক বাংলাদেশের সীমান্তে গুলিবর্ষণ বিষয়ে জনগণের কাছে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।

একই সঙ্গে গত এক মাসে ওষুধের মূল্য ১০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি এবং সেই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া বৃহত্তর সিলেট বিভাগের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

‘আন্দোলন থেকে সরে যাইনি’

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি আন্দোলন থেকে সরে যায়নি। বিএনপি ১৫-১৬ বছরে যে আন্দোলন করেছে, এই আন্দোলনগুলোকে খাটো করে দেখার কোনো কারণ নেই। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে কয়েক শ মানুষ প্রাণ দিয়েছে। ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, ২৭ হাজার লোককে দুই দিনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এই সরকারের ভয়াবহ নিবর্তনমূলক দমননীতির কারণেই হয়তোবা সাফল্য আসেনি এখন পর্যন্ত। কিন্তু কোনো দিনই ন্যায়ের পথে আন্দোলন ব্যর্থ হয় না, এটাতেও অবশ্যই সাফল্য আসবে।

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতেও আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। আজ বুধবার এ–সংক্রান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানান মির্জা ফখরুল।