ভারতের বাংলাদেশ দখল : ফ্যাক্ট শিট ও নিয়মাবলী
১০ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৩:১৮
শেষ কবে আপনি বাংলাদেশের মানচিত্রের দিকে তাকিয়েছেন ? খুব সম্ভবত প্রাইমারি স্কুলে থাকাকালীন। একবার আবার দেখুন। এবার অন্যভাবে । অবাক হবেন । ভারত আর বাংলাদেশের মানচিত্রে দুটি চিকেন নেক বা সুক্ষ রেখা আছে যার একটি শিলিগুড়িতে আর একটি বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ফেনীতে । শিলিগুড়ির এই সুক্ষ রেখাটাই ভারতকে এর উত্তর পূর্ব প্রদেশের সাথে আটকে রেখেছে । এই একটি মাত্র পথ ছাড়া মূল ভারতের পক্ষে এর উত্তরের সাতটি প্রদেশের সাথে যোগাযোগ প্রায় অসম্ভব । তবে আরেক ভাবে সম্ভব । যদি বাংলাদেশের উপর দিয়ে যায় তবে । ঠিক একই জিনিসটি বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ফেনীতে । চট্টগ্রামের এই অংশে বাংলাদেশ ভারতের সীমানা রেখা এতটাই কাছাকাছি যা রাস্তা থেকে দেখা যায় । একপাশে ভারতের বর্ডার আর অন্য পাশে বঙ্গপোসাগর । এই ধরণের চিকেন নেক সীমারেখা যেকোনো রাষ্ট্রের জন্য খুবই স্পর্শকাতর । কারণ সুক্ষ এই রেখাটা যদি কেটে যায় চট্টগ্রাম যেমন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে বাংলাদেশ থেকে ঠিক তেমনি ভারতের উত্তর পশ্চিমের সাতটি রাজ্য । সাধারণ আমরা এই ব্যাপারটিকে হালকা ভাবে নিলেও সামরিক বাহিনী কখনই এইগুলোকে হালকা ভাবে নেয় না। ব্যাপারটা সাবভৌমত্বের।
ফ্যাক্ট নম্বর এক । কলকাতা থেকে ভারতের উত্তর পূর্ব শহরে যেতে হলে শিলিগুড়ি দিয়ে ঘুরে যেতে হয় । যাতে সড়কপথে সময় লাগে প্রায় ২৭ ঘন্টা। আর যদি এই পথ বাংলাদেশের মাঝখান দিয়ে হয় তবে সময় লাগবে ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টা । আপনি যদি একজন ভারতীয় হতেন আপনি অবশ্যই চাইতেন এই পথ ১৬ ঘন্টার হোক । ভারতও অবস্যই এটি চাইবে । কিন্তু কেন এই পথের ব্যাপারে ভারত এতো দেরি করছে সেটিই প্রশ্ন । আমরা কখনোই চাইবো না আমাদের দেশের উপর দিয়ে এই রকম একটি পথ হোক । কিন্তু এতো দিন ভারত কেন চায়নি বা এখনই বা কেন এতো তাড়াহুড়ো করছে না ?
উত্তর পূর্ব ভারতের এই রাজ্য গুলো প্রচন্ড অস্থির । শিলং আসাম বা মিজোরামের মতো শহরগুলোতে এখনো সান্ধ্য আইন চলে । সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত এই রাজ্যগুলো নিয়ে মুখ ভারত বেশ বেকায়দায় আছে । বিচ্ছন্নতাবাদ এতটা প্রকট কোনো ভাবেই তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না । আর পারার কথাও না । কারণ মূল ভারতের সাথে এই রাজ্য গুলোর তেমন একটা যোগাযোগ বা মিল কোনোটাই নেই । অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ মাঝামাঝি থাকায় ভারতের এই বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সরাসরি মূল ভারতের সীমানা চোখে দেখে না । আর বাংলাদেশ এদের কাছে বন্ধু প্রতিম রাষ্ট্র । আমাদের সিলেটি ভাইরা অবাধে শিলং এর মতো শহরে ব্যবসা বাণিজ্য করছে । এই শহর গুলোর রেস্টুরেন্টে আমাদের বাংলা সিনেমার গান বাজে । অনেকটা বাংলাদেশ প্রিয় এই রাজ্যের বাসিন্দারা । সম্ভবত এই একটি কারণেই বাংলাদেশের সীমারেখা ভারতের কাছে এতো প্রিয় । কারণ আপনি যদি মানচিত্র থেকে বাংলাদেশকে মুছে দেন তাহলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ডার পড়বে আসাম বা শিলং এর সাথে । আর পশ্চিমবঙ্গ এখনো এই উগ্র বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ধকল সামলাতে প্রস্তুত নয় । সুতরাং বাংলাদেশের সীমারেখা অনেকটা মূল ভারতকে রক্ষা করছে সামরিকভাবে ।
ফ্যাক্ট নম্বর দুই । কিভাবে আপনি বুজতে পারবেন ভারত বাংলাদেশ কিনে নিয়েছে ( আপেক্ষিক ভাবে ) খুবই সহজ । যেহেতু ভারত বাংলাদেশেকে মানব বর্মের মতো রাষ্ট্র বর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে সেহেতু যতদিন ভারতের উত্তর পূর্বের সান্ধ্য আইন না উঠবে ততদিন অন্তত বাংলাদেশ নিরাপদ ।
ফ্যাক্ট নম্বর তিন । ভারত কেন বার্মাকেও বন্ধু রাষ্ট্র ভাবে ? কলকাতা থেকে মিজোরাম পর্যন্ত সড়ক পথে প্রায় তিন দিন লেগে যায় । তাই ভারত বার্মার উপর দিয়ে একটা সড়কপথ ব্যবহার করে এই দুরুত্ব কমাচ্ছে । যেহেতু বার্মার সড়কপথ ব্যবহার করছে সুতরাং বার্মার সাথে সম্পর্ক তো ভালো থাকবেই । কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে ভারত চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে চাইছে এই পথের জন্য । কারণ একটা জাহাজ কলকাতা না গিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসলে সময় এবং খরচ দুটোই কমে যায় । এই জায়গায় সম্ভবত মূল সমস্যা । কারণ যেহেতু আগেই বলেছি চট্টগ্রাম একটা সুক্ষ চিকেন নেক বা শুরু রেখা দিয়ে বাংলাদেশের সাথে জড়িত সেহেতু চট্টগ্রামকে নিয়ে মাথা ব্যাথা হতেই পারে ।
তাহলে কিভাবে বুজবেন চট্টগ্রাম সামরিকভাবে অনিরাপদ একটা ভূখণ্ড ? বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সেনানিবাস গুলোর অবস্থান দেখুন । বুজতে পারবেন সমস্যা কতটা গুরুতর ।
ফ্যাক্ট নম্বর চার। কেন পচ্শিমবঙ্গ বাংলাদেশের সাথে মিশে যাচ্ছে না ? কারণ বাংলাদেশ যত বেশি কলকাতা ঘেঁষা হবে তত ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিশানায় পরিণত হবে । সুতরাং চাইলেই বাংলাদেশ কলকাতা হয়ে যেতে পারবে না । নিশ্চিন্ত থাকুন । লক্ষ্য করলে দেখবেন নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গ আর বাংলাদেশকে আলাদা ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার পক্ষে । এবং এটাই সামরিক ভাবে নিজেদের জন্য সুবিধাজনক অবস্থান ।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী হয়তো দেশবাসীকে পরিষ্কার করে দিবেন আসলে কি এমন সামরিক চুক্তি হয়েছে ভারতের সাথে । কিন্তু যারা বারবার বলছেন সামরিক চুক্তির কথা তারা কি একবার ভাবছেন না যে সামরিক চুক্তি দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মাঝে হয় । আর এক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে রাষ্ট্রপতির সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করাকেই দুই দেশের সামরিক বাহিনী প্রাধান্য দিবে । সামরিক বাহিনী কোনো ভাবেই চেইন অফ কমান্ড এর বাইরে যাবে না। যেমনটি দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে আমেরিকার বা জাপানের আছে অনেকটা ওই রকম । আর এই ধরণের কিছু হয়ে থাকলে ঐটা কখনই রাজনৈতিক কিছু না । ব্যাপারটা সামরিক ।
ভারত প্রীতি বা ভারত বিদ্বেষ এই দুটোই কিন্তু মানচিত্রের মাঝে আছে । যখনই আপনার মনে প্রশ্ন জাগবে এই মানচিত্র গুলো নিয়ে ফ্যাক্ট সিট গুলো চেক করে নিবেন । উত্তর পেয়ে যাবেন । কারণ সমস্যা একদিনের না । এটি রবীন্দ্রনাথের আমল থেকে শুরু । ষড়যন্ত্র আগরতলা হলেও সাহায্য আসে অপর প্রান্ত থেকে । বুজতে হবে ।
https://www.quora.com/Can-India-develop-the-Northeast-without-the-help-of-Bangladesh
https://www.facebook.com/asraful.alam
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৭:৫৭