বিএনপির সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দালনে থাকা দলগুলোর নেতারা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থানের সমালোচনা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে দিল্লি বক্তব্য দিয়েছে। এটি খুবই সত্য কথা। এ ব্যাপারে দ্বিমত নেই। এই কথা ২০১৪ সালে কি তাদের মনে ছিল না। তাহলে কেন সে সময় সুজাতা সিংকে ঢাকায় পাঠিয়ে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। তখন কি তারা হস্তক্ষেপ করেনি?’
শনিবার বিকেলে ‘আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ ও এক দফা দাবি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বিএনপির সঙ্গে থাকা ১২–দলীয় জোট এই সভার আয়োজন করে। এতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন জোট ও দলের নেতারাও বক্তব্য দেন।
গত শুক্রবার দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। বাংলাদেশের নির্বাচন দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে জানিয়েছে ভারত। দেশটির এই অবস্থানের সমালোচনা করলেন বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে থাকা দল ও জোটগুলোর নেতারা।
১২–দলীয় জোটের আলোচনা সভায় গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা মানে নির্বাচন নয়। দিল্লি এখনো অনেক দূরে। দিল্লির ভাইয়েরা বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, আগামী নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। খুবই সত্য কথা। এ ব্যাপারে কি দ্বিমত আছে? নেই। এই কথা ২০১৪ সালে মনে ছিল না?’
সাইফুল হক আরও বলেন, ‘সুজাতা সিংকে ঢাকায় এনে জাতীয় পার্টিকে যেভাবে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করলেন, বিরোধী দলগুলোকে যেভাবে বাধ্য করলেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যেভাবে হস্তক্ষেপ করলেন, তখন কি হস্তক্ষেপ করেননি?’ তিনি আরও বলেন, ‘২০১৪ ও ২০১৮ সালে একতরফা তামাশার নির্বাচনে দুনিয়ার সংসদীয় ইতিহাসে এমন কেলেঙ্কারির ঘটনা আর কোনো দেশে ঘটে নাই। যেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। সেখানে একমাত্র ভারতকে পাশে দাঁড়াতে দেখলাম। তখন মনে ছিল না এটা অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।’
একই সঙ্গে সাইফুল হক বলেন, ‘বিদেশি কোনো শক্তি বাংলাদেশে গণতন্ত্র এনে দেবে না, ভোটাধিকার দেবে না। লড়াইটা আমাদের, জনগণের। মানুষ এখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এই লড়াইয়ে মানুষ জিতবে। সরকারকে পদত্যাগে করতে বাধ্য করবে।’
সমাবেশে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের শীর্ষ নেতা ফরিদুজ্জামান ফরহাদ প্রতিবেশী দেশ ভারতকে উদ্দেশ করে বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে কেন বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছিলেন? এর জন্য আপনাদের ক্ষমা চাইতে হবে।
দেশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি (একাংশ) নুরুল হক বলেন, দেশের অবস্থা এমন জায়গা পৌঁছেছে যে বাংলাদেশে কী হবে, তা বুঝতে এখন দিল্লির বৈঠকের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়।
নতুন করে রাজনৈতিক কৌশল ঠিক করতে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ১২–দলীয় জোটের নেতা ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক বলেন, দিকনির্দেশনা ছাড়া আন্দোলন দীর্ঘদিন চালিয়ে নেওয়া যায় না।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২–দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘আমাদের হাতে অস্ত্র নেই। আমাদের মূল শক্তি ঐক্য।’ দেশকে অবধারিত গৃহযুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা করার আহ্বান জানান তিনি।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সদস্যসচিব মজিবুর রহমান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।
প্রথম আলো