ভারতীয় আগ্রাসনের মুখে বাংলাদেশ: অজুহাত হিন্দুদের নিরাপত্তা-এক
চরম মুসলিমবিদ্বেষী উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদী আরএসএস ক্যাডার ও সাবেক মন্ত্রী সুব্রামনিয়াম সোয়ামী হিন্দুদের ওপর কথিত অত্যাচার বন্ধের অজুহাতে সামরিক অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশ দখল করার ধমক দিয়েছেন। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)’এর বিরুদ্ধে অহেতুক কুমন্তব্য করার প্রতিক্রিয়ায় কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কোরবানপুর গ্রামে জনৈক শঙ্কর দেবনাথ এবং তার প্রতিবেশীর বাড়ির পাঁচটি ঘর ও একটি মন্দির ভাঙ্গচুর করে ও আগুল লাগায়। হামলার জবাবে পাঁচশতাধিক অজ্ঞাত মুসলমানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। স্থানীয় জনগণ, এমনকি মিডিয়াও নিশ্চিত করেছেন যে, শঙ্কর দেবনাথ ফেসবুকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমম্যানুয়েল ম্যাক্রনের (ঊসসধহঁবষ গধপৎড়হ) মানহানিকর ইসলামবিরোধী মন্তব্য সমর্থন করেছিলেন, যা হযরত মোহাম্মদকে (সাঃ) সম্পর্কে নিজস্ব মন্তব্যও জুড়ে দেয়। সুতরাং ওই হিন্দু ঘটনার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী।
আরএসএস নেতা সোয়ামী শঙ্কর দেবনাথের কারণেই যে মুরাদনগরের ঘটনা ঘটেছে তা একবারও ভাবে নি। আর এই হামলা যে কোনভাবেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর্যয়ে পড়ে না তা-ও তিনি এড়িয়ে গেছেন। অথচ কট্টর মুসলিমবিদ্বেষী সুব্রামনিয়াম এবং তার সহযোগীরা বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করে এবং বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশ বিরোধী জনমত তৈরির জন্য তথাকথিত ‘গ্লোবাল বাঙালী হিন্দু কোয়ালিশন’এর ব্যানারে ভারত ও বিশ্বের বেশ ক’টি দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং হাই কমিশনের বাইরেও ব্যাপক বিক্ষোভ করে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ ভবনের বাইরেও প্রতিবাদ করেছিল। (Https://www.sindhuvox.in/politics/government-to-send-troops-to-banglashad/)
দুটি বাড়ির পাঁচটি ঘর ও একটি মন্দির ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের অজুহাতে হিন্দুদের ওপর কথিত অত্যাচার বন্ধে বাংলাদেশে সামরিক অভিযান চালিয়ে এই দেশ যদি দখল সংগত হয়ে থাকে তা’হলে মুসলমান ও খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সন হতে আজ পর্যন্ত কতো হাজার হাজার দাঙ্গায় লাখ লাখ খুনের অপরাধে ভারতের অস্তিত্ব তো বহু আগেই বিলীন হওয়া উচিত ছিল। রাষ্ট্র হিসেবে চরম শাস্তি ভারত কীভাবে এড়াবে?
সুব্রামনিয়াম সোয়ামীসহ ভারতীয় এমন কোন বুদ্ধিজীবী কিংবা ঐতিহাসিক বলতে পারবেন না ১৯৪৭ সনের পর থেকে ২০২০ সন পর্যন্ত ভারতে মুসলিমবিরোধী কতোহাজার দাঙ্গা হয়েছে এবং ওইসব দাঙ্গায় কতো লাখ মুসলিম শহীদ ও পঙ্গু হয়েছেন। কতো লাখ মা-বোন ধর্ষিত, বিধবা হয়েছেন? কতো শিশু পিতামাতা হারিয়ে পথের ফকিরে পরিণত হয়েছে?। কতো লাখ দোকান-পাট, বসতবাড়ি লুটপাট হয়েছে কিংবা আগুনে পুড়েছে? ভারতীয় হিন্দুদের কী মানবতাবিরোধী এসব নৃশংস হত্যাকান্ডের লুটপাটের অপরাধের শাস্তি হতে রেহাই দেয়া উচিত হবে? একদিন এ সবের জন্য অবশ্যই তাদেরকে আন্তর্জাতিক আদালতে দাঁড়াতে হবে।
ভারতীয় মুসলিম-বিদ্বেষ কেমন চড়া তার কিছু নমুনা দিচ্ছি । পশ্চিম বাংলার মুসলিম প্রধান জেলা মুর্শিদাবাদ। জেলা শহরে বহরমপুরে মুসলমানরা জমি ও ফ্ল্যাট কিনতে কিংবা ঘর-ভাড়া দোকানভাড়া নিতে পারছেন না। ‘নতুন গতি’ নামক একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা (১৬ নভেম্বর, ২০২০) জানায় বহরমপুর শহরের জজকোর্টের নিকটবর্তী ঘোষ লেনে নির্মাণাধীন একটি বহুতল ভবনে ছয়জন উচ্চশিক্ষিত মুসলিম ফ্ল্যাট কেনার জন্য মোট দামের ১০ শতাংশ অগ্রিম দিয়ে বায়না চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু স্থানীয় হিন্দুরা ওই এলাকায় মুসলমানদের কাছে কোন ফ্ল্যাট বিক্রি করা যাবে না এমন সিদ্ধান্তের কথা নির্মাণাধীন ভবনের মালিককে জানিয়ে হুমকি দেয় হয় যে, তাদের নির্দেশের বাইরে গেলে ভবনটিও ভেঙ্গে ফেলা হবে। মালিক ছয়জন মুসলিমের বায়নার টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন। মুসলমানদের সহযোগিতায় সেখানে কোন হিন্দু এগিয়ে আসে নি (https://www.natungati.in/in-the-city-of-bahrampur-muslims-do-not-have-the-opportunity-to-rent-a-house-or-buy-a-flat-complaints-are-rising/) ।
মোদির রামরাজ্যে মুসলমানরা কতো ধরনের অপমান ও নির্যাতনের শিকার হন তার উদাহরণ পশ্চিম বাংলার মালদাহ জেলার ১৮ জন মাদ্রাসা শিক্ষক। তারা তাদের সম্মেলন উপলক্ষে কলিকাতার সল্টলেকের ডি এল ৩৭ ট্রিনিটি গ্রেস্ট হাউসে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন। নির্দিষ্ট দিনে ২০ সেপ্টেম্বর তারা ওই হোটেলের তিনটি রুমে ঢুকেন। সকালের নাস্তা করার জন্য বাইরে গিয়ে রুমে আসলে হোটেলের ম্যানেজার তাদেরকে ওই রুমগুলোতে রাখতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তাদেরকে ওই গেস্টহাউজ ছেড়ে দিতে বলেন । এ ব্যাপারে ম্যানেজারের ব্যাখ্যা হলো: মুসলিমরা নাস্তার খাবার জন্য হোটেলে যাবার সময় আশেপাশের হিন্দু প্রতিবেশীরা দেখেছে । প্রতিবেশীরা তাদের এলাকায় মুসলমানদেরকে নিরাপদ মনে করেন না। তুমুল বৃষ্টির মধ্যে তাদেরকে হোটেল ছাড়তে হয়েছে। এমন অপমান ও অপাংক্তেয়তা তথা অত্যাচার ও নির্যাতনের ভার এবং মানসিক যন্ত্রণা কী বাংলাদেশে হিন্দুদের পাঁচটি ঘর ও একটি মুর্তি ভাঙার চেয়েও কম ?
এমন ঘটনা কেবল বহরমপুরে নয় কিংবা কলিকাতায় নয় ভারতের সর্বত্র বিরাজমান। এই ধরনের ঘটনার কোন বিচার হয় না সুব্রামনিয়ামদের ভারতে। মোদি-সোয়ামীদের কাছে এসব তো অতি তুচ্ছ ঘটনা। তাদের কাছে তো মুসলমানরো গরুর চেয়েও অধম। মুসলিম শ্রমিকের হাতে ‘আল্লাহু’ লেখা থাকার জন্য হাত কেটে ফেলা হয়। ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বাধ্য করা হয়। ‘শ্রীরাম’ না বললে খুন করা হয়। সারা ভারতব্যাপী এর চেয়ে কতো বেশী মুসলিমবিরোধী ভয়ঙ্কর ঘটনা প্রতিদিন ঘটছে তার সামান্যই ভারতের সংবাদ মাধ্যমে আসে। অথচ এরপরে মানবতাবিরোধী ভারত নাকি ধর্মনিরপেক্ষে। দুনিয়ার কথিত বৃহত্তম গণতন্ত্র। যে দেশে মুখে দাড়ি রাখার কারণে মুসলমানদের চাকরি হতে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়, বহু রাজ্যে মুসলমানদের ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানি নিষিদ্ধ করা হয়, গরুর গোশত রাখার কিংবা বহন করার সন্দেহে জীবন দিতে সেই দেশের সুব্রামনিয়াম সোয়ামী পাঁচটি ঘর এবং একটি মন্দির ভাঙ্চুর করার কারণে একটি স্বাধীন দেশ দখল করার ঘোষণা দেন কোন লজ্জায়? সোয়ামীর দেশের মানবতাবাধিকার কর্মী, বিবেকবান সাংবাবাদিক,
বুদ্ধিজীবী কোণঠাসা কিংবা কারারুদ্ধ। আর ১৯৪৭ সন থেকে ২০২০ সন পর্যন্ত ভারতে মুসলিমবিরোধী কতো দাঙ্গা হয়েছে কতো মুসলিম খুন-জখমের শিকার হয়েছেন, কতো মহিলা ধর্ষিত ও নির্যাতিত হয়েছেন, কতো মুসলিম শিশু মা-বাবা হারিয়েছেন, মুসলানদের কতো ঘরবাড়ি, দোকান-পাট পোড়ানো অথবা লুট হয়েছে কিংবা মসজিদ, মাদ্রাসা, মুসলিম কবরস্থান হিন্দুদের দখলে চলে গেছে সেই তথ্য ভারত সরকারও প্রকাশ করবে না। এমনকি অনলাইনে ১০ বছর আগে যে সামান্য তথ্য পাওয়া যেতো, তাও এখন নেই। যেসব ঘটনা আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে এসেছে সেগুলোর কিয়দাংশ পাওয়া যেতে পারে।
এখানে ১৯৭০ থেকে ২০২০ সনের মধ্যে ঘটে যাওয়া মুসলিমবিরোধী দাঙ্গার সামান্য তথ্য তুলে ধরছি। আসাম (১৯৮৩) সরকারীভাবে স্বীকৃত ২,১৯১, কিন্তু বেসরকারী হিসেব হলো ১০ হাজারের বেশি। গুজরাটে (বছরের উল্লেখ নেই) ৩,১৩০; (১৯৬৯ ও ১৯৭০ সনে) যথাক্রমে ৬৩০ ও ২,৫৫০; (২০০২ সনে) দুই হাজারের বেশি; মহারাষ্ট্র (১৯৯২ সনে) ২,০০০; ভাগলপুর (১৯৮৯) ১,০০০ নিহত, গৃহচ্যুত ৫০,০০০; বোম্বাই (১৯৯২ সনে বাবরি মসজিদ ভাঙার পর) সরকারীভাবে স্বীকৃত মৃত ৯০০। ভারতে মুসলিম হত্যা যেন উৎসব হিসেবে উদযাপন করাা হয়। (আরো জানার জন্য নিচের লিংকগুলো দেখুনঃ
(https://time.com/5794354/delhi-riots-muslims-india/) (Https://www.sciencespo.fr/mass-violence-war-massacre-resistance/fr/docament/hindu-muslim-communical-riots-india-i-1947-1986.htm)
ওপরের তথ্যগুলো মুসলিম খুনের প্রকৃত হিসাব প্রতিনিধিত্ব করে না। এগুলো সর্বভারতীয় তথ্যও নয়। তথ্যের ভারে সোমায়ীরা লজ্জিত নন। মুসলিম-বিদ্বেষ তাদের মানবিকতা ও মগজ এতোই কলুষিত যে লজ্জা কিংবা অনুশোচনা নামক মানবিক গুণাবলী তাদের মন থেকে উবে গেছে। এই কারণেই তারা বাংলাভাষী মুসলিম ভারতীয় নাগরিকদেরকে বাংলাদেশে ঠেলে দিতে আইন পাশ করিয়েছে। এটা হলো তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক ভারতের চেহারা। নরেন্দ্র মোদির মতো নির্মম খুনি যে দেশের প্রধানমন্ত্রী, সেদেশের রন্দ্রে রন্দ্রে খুনি থাকা অতি স্বাভাবিক। এই ক্ষেত্রে আরএসএস, কংগ্রেস, কমিউনিস্ট সবাই এক ও অভিন্ন প্রকৃতির। কংগ্রেস আমলে ভারতে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও সর্বাধিক মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা হয়েছে। কমিউনিস্ট আমলে পশ্চিম বংগে মুসলিমরা সর্বাধিক ঠকেছে। আর মোদিযুগে সাম্প্রদায়িকতা ভারতের ঘরে ঘরে রাস্তায় রাস্তায় এমনকি আদালতে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কোথাও মুসলমানরা নিরাপদ নন। তারা যেকোন জায়গায় যেকোন সময় খুনের, লুটের, লাথি-ধাক্কার, ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। ভারত এখন যেন সরকারীভাবে অনুমোদিত গণ-সাম্প্রদায়িকতার দেশ, যেখানে মুসলিম হত্যার জন্য কোন শাস্তি হয় না।
ভারতীয় আগ্রাসনের মুখে বাংলাদেশ: অজুহাত হিন্দুদের নিরাপত্তা-দুই
ভারতে পুলিশ এমনকি সেনাবাহিনী মুসলিম নিধনে দক্ষ। মুসলিম হত্যাকারী পুলিশ সেনাসদস্য অফিসারদেরকে পদকসহ নানাবিধ পুরস্কার ও পদোন্নতির ব্যবস্থা রয়েছে। মুসলিমবিরোধী দাঙ্গায় ভারতীয় পুলিশ, বিএসফ, সিআরপি, এমনকি সেনাবাহিনী হিন্দু হামলাকারীদের গ্রেফতার না করে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। পুলিশের সামনে মুসলমানদেরকে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে। তারা মুসলমানদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। মুসলমানদেরকে দাঙ্গাকারী হিসেবে গ্রেফতার করে।
‘হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ’এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তে দেখা গেছে ২০২০ সনের ফেব্রুয়ারী মাসে দিল্লীতে উচ্ছৃঙ্খল হিন্দুদের মুসলিম-বিরোধী দাঙ্গার সময় হিন্দুদের না থামিয়ে পুলিশ তাদের সহযোগী হিসেবে সব অপকর্মে সাহায্য করে। ভারত সরকারের প্রণীত মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে ওপর হামলা চালানো হয়। প্রত্যক্ষদশীরা জানান, হামলায় আক্রান্ত মুসলমানরা সাহায্য চাইলে পুলিশ অপারগতা জানিয়ে বলে, “কোন ধরনের ভূমিকা রাখতে তাদের ওপর কোন নির্দেশ নেই।”
দিল্লীর সংখ্যালঘু কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, মুসলিমবিরোধী এই সহিংসতা তথা দাঙ্গা ছিল “পরিকল্পিত ও লক্ষ্যবস্তু” ছিল সুনির্দিস্ট। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়: পুলিশ সহিংসতার জন্য মুসলিম ভুক্তভোগীদেরকেই দায়ী করে মামলা দায়ের করেছে। শাসক দল বিজেপি নেতৃবৃন্দ দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ না করার জন্য পুলিশকে প্ররোচিত করেছে।
কিছু বিজেপি নেতা প্রকাশ্যে বিক্ষোভকারী মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংতার পক্ষে অবস্থান নেয়। স্থানীয় বিজেপি’র নেতৃবৃন্দ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারীদেরকে হঠিয়ে দেয়ার দাবি করার পরেই মুসলমানদের ওপর হামলা শুরু হয়। সহিংসতায় কমপক্ষে ৫৩জন খুন এবং শতাধিক ব্যক্তি জখম হন। এদের প্রায় সবাই ছিলেন মুসলিম।
‘হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ’ সহিংসতা তদন্তে পুলিশের ব্যর্থতা ও পক্ষপাতিত্বের প্রমাণাদি নথিবদ্ধ করেছে। এমনকি সংখ্যালঘু কমিশনের প্রধান কর্মকর্তা মুসলমানদেরকে গ্রেফতার করার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করায় তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়।
(https://www.hrw.org/news/2020/07/17/indias-police-found-complicit-anti-muslim-mob-violence# )
সেনাবাহিনীসহ সব ধরনের আধা-সামরিক বাহিনী, পুলিশ, কূটনীতিক, উচ্চ প্রদত্ত আমলা, কর্মকর্তা, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিকমহল সব শাখা ‘আরএসএস’এর দখলে। এরা যে যেখানে আছে, সব জায়গা থেকেই মুসলমানদের ক্ষতি করার কাজে লিপ্ত। মুসলিম-বিদ্বেষী সোয়ামীচক্র মুসলমানদের মসজিদ, দারগা, মাদ্রাসায় হামলা চালিয়ে মুসলিমদেরকে আহত-নিহত করে নির্দোষ মুসলিম শিক্ষার্থীদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে অভিযুক্ত করে অত্যাচার-নির্যাতন করে কারারুদ্ধ করেছে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম, গোয়েন্দা সংস্থা, আদালত ওই প্রচারণায় বিশ্বাসী মুসলমানদেরকেই জঘন্য নির্যাতনের স্বীকারোক্তি আদায় করে আদালতের মাধ্যমে কারাদন্ডে দন্ডিত করে। তেমন কিছু নির্মমতা ও মিথ্যাচারিতার নজির তুলে ধরছি।
২৫ নভেম্বর (২০২০) অনলাইন পত্রিকা ‘ ‘ক্ল্যারিয়ন ইন্ডিয়া’ জানায়: ‘আল-কায়েদার সাথে যোগাযোগ রাখার ভুয়া অভিযোগে ১৯ সেপ্টেম্বর (২০২০) ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘এনআইএ’র (NIA > National Invstigation Agency) সদস্যরা পশ্চিম বাংলার ১০টি মুসলিম বাড়িতে এসে ১০জনকে গ্রেফতার করে। বেসরকারী একটি তথ্যানুসন্ধানী দল জানায় সন্দেহভাজনদের প্রায় সবাই দরিদ্র পরিবারের খেটে-খাওয়া সদস্য। তারা দর্জি, ইলেট্রিশিয়ান (বিদ্যুতকর্মী) কিংবা সাধারণ শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কথিত এই সন্ত্রাসী গ্রুপের নেতার মানসিক সমস্যা রয়েছে। এদের সবাই মুর্শিদাবাদ জেলার বাসিন্দা। এছাড়া কেরালার এরনাকুলমাম জেলার তিনজনকে গ্রেফতার করা হলেও ওই জেলা থেকে সাতজনকে আটক হয়। তাদের সবাইকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিল্লীতে পাঠানো হয়। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা আল-কায়েদার হয়ে পশ্চিম বাংলা, কেরালা, দিল্লীসহ সারা ভারতের বেশ ক’টি জায়গায় ভারতবিরোধী সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করছিল।
‘অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রটেকশন সিভিল রাইট্স’এর সাথে যুক্ত আরো দু’টি সংগঠনের আবদুস সামাদ, ইমতিয়াজ আলী ও সাইফ আলীর সমন্বয়ে গঠিত দল মুর্শিদাবাদ গিয়ে গ্রেফতারকৃত নির্দোষ মুসলমানদের পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশিদের সাথে সরাসরি কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। পরিবারের সদস্যরা জানান ‘বিএসএফ’ ও ‘এনআইএ’ যৌথভাবে ওই জেলার কয়েকটি বাড়িতে খুব ভোরে দরজা ভেঙে প্রবেশ করে আধ-ঘন্টা তল্লাসী চালায়। তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের মারধর করে। তাদের ঘর থেকে বাজেয়াপ্ত জিনিসগুলো তাদেরকে দেখানো হয় নি। তাদেরকে সাদা কাগজ এবং খালি পলি প্যাকেটে সই করতে বলা হয়।
তথ্যানুসন্ধানী দল তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে কৃষকের সন্তান মানসিকভাবে অসুস্থ মুর্শিদ হাসানকে (২৫) আল-কায়েদা’র নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। তিনি গ্রামে রাজমিস্ত্রী হিসেবে কাজ করতেন। এক বছর আগে একই কাজ করার জন্য কেরালায় যান এবং তাকে সেখান থেকেই গ্রেফতার করা হয়। যদিও তিনি গ্রেফতারের সময়েও বারহাম্পুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার মায়ের দাবি হাসান কোনভাবেই সন্ত্রাসী কাজের সাথে জড়িত নন। তারা এতোই দরিদ্র যে তাদের পরিবারের সদস্যরা প্রায়ই না অভুক্ত থাকেন। আমাদের ছেলে সন্ত্রাসী দলে থাকলে তাদের এমন করুণদশা হবার কথা নয়। তথ্যানুসন্ধানী দলের সদস্য সাইফ আলী মুর্শিদ’এর বন্ধু হাবিবুর রহমান’কে উদ্ধৃত করে ‘ক্ল্যারিয়ন ইন্ডিয়া’কে জানান, তাকে মারধর করে তার কাছ থেকে আল-কায়েদার সাথে জড়িত থাকার স্বীকোরুক্তিমূলক জবানবন্দী আদায় করা হয়। মুর্শিদের ভাই সোহেল রানাও একই ধরনের কথা বলে।
একই জেলার জয়রামপুর গ্রামের লিউ ইয়ান আহমদ ডোমকাল বসন্তপুর কলেজের খন্ডকালীন বিদ্যুত কর্মী হিসেবে কাজ করতেন । তার বৃদ্ধ মা ও ভাগনী একটি কুঁড়ে বাস করতেন। কলেজের কাজ শেষে তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিদ্যুত সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করতেন। তার মা জানান ‘এনআইএ’ সদস্যরা তাদের ঘরে ঢুকে তার ছেলেকে মারধর করে। তার ভর্তিকার্ড, মার্কশীট ও মোবাইলসেট বাজেয়াপ্ত করে। তাদের ঘর থেকে ‘এনআইএ’ সদস্যরা আর কিছুই নেয় নি। অথচ গণমাধ্যমের কাছে তারা অভিযোগ করেছে তারা নাকি বোমা বানানোর সরঞ্জাম পেয়েছিল। প্রতিবেশিরা প্রশংসা করে জানিয়াছেন, ইয়ান আহমদ এতো ভালো যে সে সিগারেটও পান করে না। তার মোটর সাইকেলের কোন টুলবক্সও ছিল না। কিন্তু বলা হয়েছে তার টুলবক্সে একটি রিভলবার পাওয়া গেছে।
আরেক সন্দেহভাজেন একই জেলার নওদাপাড়ার আল মামুন কামাল কেরলায় অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। দুই বছর আগে তিনি নিজ গ্রামে ফিরে এসে দর্জি হিসেবে কাজ শুরু করেন। মাঝে মাঝে তিনি রাজমিস্ত্রীর কাজও করতেন। তিনি বাড়ির কাছে একটি টিনশেড তৈরি করে মুসলিম ছেলে-মেয়েদের আরবি পড়াতেন। এটিকে মাদ্রাসায় পরিণত করতে তিনি মাঝে মাঝে চাঁদা সংগ্রহ করতেন। তার স্ত্রী জানান, তার স্বামী সম্পূর্ণ নির্দোষ হওয়া সত্বেও তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের ঘরে তল্লাশী চালিয়ে ‘এনআইএ’ সদস্যরা হাদিস বই, মাদ্রাসার কুপন, মামুনের ভোটার আইডি, আধার কার্ড এবং একটি মোবাইল পেয়েছিল। আর কিছুই পায় নি।
একই ধরনের মিথ্যে অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন মুর্শিদাবাদের জালানগি গ্রামের কেরালায় কর্মরত রেস্টুরেন্ট কর্মী মঈনুল মন্ডল। মধুবন গ্রামের আরেক রেস্টুরেন্ট কর্মী ইয়াকুব বিশ্বাসও কেরালায় একই কাজ করতেন । তিনি তার নিজের নামও লিখতে পারেন না । তার পিতা আবু সুফিয়ান গ্রামে দর্জি হিসেবে কাজ করেন।
মঈনুলের স্ত্রীর অভিযোগ: ভারতীয় প্রচার মাধ্যমে বলা হয় তাদের পরিবারের ব্যাংক একাউন্টে লাখ লাখ টাকা আসে, যা মোটেই সত্যি নয়। তিনি বলেন, ঘরের ভিতরে টয়লেট তৈরির জন্য গর্তকে সড়ঙ্গ বলে প্রচার করা হয়। তার অভিযোগ ‘এনআইএ’ ঘরে ঢুকে লোহার রড দিয়ে তার স্বামীকে পিটায়। তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগই বানানো ও ভিত্তিহীন।
(https://clarionindia.net/most-bengal-muslims-arrested-by-nia-are-poor-masons-and-workers-says-fact-finding-team/)
এর পরের কাহিনী আরো জঘন্য যা প্রকাশ করেছে ভারতীয় ‘তেহেলকা’। উচুমানের সাংবাদিকতার জন্য খ্যাত তেলেহকা (২ জানুয়ারী, ২০১১) ‘এন এ্যাঙ্গ্রী হাল অব ফল্ গাই এন্ড অ্যানফ্রেয়ার এরেস্ট্স’ নামক প্রবন্ধে জানায় কোথাও কোন বিপজ্জক ঘটনা ঘটলে অবলীলাক্রমে অভিযোগ ওঠে এর পিছনে কোন মুসলিম জড়িত। এমন অমূলক ধারণায় নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার বিঘ্নিত হয় এবং নিরাপরাধ মুসলমান ক্ষয়ক্ষতির শিকার হন। তেহেলকা জানায় ১৮ মে ২০০৭ সালে মক্কা মসজিদে হিন্দুত্ববাদীদের বোমা হামলায় নয়জন মুসল্লী শহীদ হন। আর এইজন্য অকারণে চরম মূল্য দিতে ৩২ জন মুসলিম যুবককে । এরা সম্পূর্ণ নিরাপরাধ কিন্তু কারাদন্ডে দন্ডিত। এরা হলেন: আসিফ খান ‘সিমি’ (স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়া); আব্দুল ছাত্তার হরকতুল জিহাদের ভুয়া সদস্য; আবদুল ওয়াসি জনৈক হিন্দুর হোটেলে বোমা পেতে রাখার অভিযোগ গ্রেফতারকৃত; আবরার আহমেদ সিমি’র সদস্য; সেলিম ফার্সী সিমি’র সদস্য; আরশাদ খান শহীদ বেলালের এলাকার বাসিন্দা; ফারুক আনোয়ার সিমি’এর সদস্য; গোলাম ছিদ্দিক হায়দারাবাদে একটি মন্দিরে হামলার সন্দেহে গ্রেফতারকৃত, ইব্রাহিম জুনায়েদ অভিযুক্ত ও পরে বেকসুর খালাস; মাকসুদ আহমদ সন্ত্রাসী কাজে প্রশিক্ষণের জন্য পাকিস্তানে যাবার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত; মোহাম্মদ আবদুল কাদের সিমির সদস্য; মোহাম্মদ বালেক উদ্দিন সিমির সদস্য; আবদুল মজিদ শহীদ বেলালের ভাই; আবদুল করিম সিমি’র সদস্য; আবুদল ওয়াজেদ সিমি’র সদস্য; মোহাম্মদ শাকিল কথিত মুসলিম সন্ত্রাসী মাবাবুব আলীর গাড়িচালক; এম আবদুর রহিম হত্যার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত; এম ইয়াসির সিমির সদস্য; মোহাম্মদ মোস্তফা আলী শহীদ বেলালের বন্ধু; মোহাম্মদ নাসফেরুদ্দিন কারো সাথে যোগাযোগ ছিল না; মোহাম্মদ রায়েসুদ্দিন বিজেপি এমএলএ হত্যার অভিযোগ গ্রেফতারকৃত কিন্তু বিচারে মুক্ত; জাহিদ আবদুল সিমি’র সদস্য; মনোয়ার আহমদ ছাত্র; নুরুল দোহা সিমি’র সদস্য; রাফেজ আহমদ সন্দেহবশত গ্রেফতারকৃত; রিয়াজ আহমদ সন্দেহবশত গ্রেফারকৃত; শার্ব্বির আহমদ সিমি’র সদস্য; শায়েখ মোঃ ফায়েদ; মোহম্মদ আলী আলম সিমি সদস্য; সৈয়দ কাদের মক্কা মসজিদে হামলার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত। এদের সবাই নিরাপরাধ । এক সময়ে কারাবন্দী আবুল কালামের আচরণে মুগ্ধ হয়ে আরএসএস সন্ত্রাসী অন্য মামলায় কারাবন্দী হিন্দু আধ্যাত্মিক গুরু অসীমানন্দ সোয়ামী স্বেচ্ছায় নিজেদের অপরাধে অনুচোশনা করে আদালতে স্বীকোরুক্তিমূলক জবানবন্দীর ফলে মুসলিম কারাবন্দীরা নির্দোষ হিসেবে খালাস পান।
এই ব্যাপারে তেহেলকা’র বয়ান শুনুন: ভাগ্যক্রমে কারাবন্দী জনৈক মুসলিম যুবক (আবুল কালাম Ñ ১৮) কট্টরপন্থী ‘আরএসএস’ অনুসারী হিন্দু ধর্মপোদষ্টা সোয়ামী অসীমানন্দের সাথে কারাগারে পরিচয় ঘটে । ২০১০ সালের ১৯ নভেম্বর অসীমানন্দ অন্য একটি মামলার আসামী হিসেবে কারাগারে আসেন। কারাগারে আবুল কালাম যেমন অকৃত্রিম আন্তরিকা দিয়ে অসীমানন্দের সেবা করেন তা এক পর্যায়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী তৎপরতার রহস্য বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে, যাতে মক্কা মসজিদ হামলার জন্য আরএসএস, এমনকি ভারতীয় সেনাবাহিনীর অফিসারতের জড়িত থাকার গোপন রহস্য বেরিয়ে আসে। অসীমানন্দের বিবেকের তাড়নায় তার অনুভূতি জাগ্রত হয়। অসীমানন্দ জানেন আবুল কালামসহ সব মুসলিম যুবক অসীমানন্দদের কারণেই নির্যাতিত হয়ে কারারুদ্ধ হয়েছেন। এরা সবাই নির্দোষ। মক্কা মসজিদ হামলার জন্য তিনি (অসীমানন্দ) এবং তার সহযোগীরাই দায়ী । অসীমানন্দ বিবেকের তাড়নায় ম্যাজিস্টেটের কাছে আদালতে অপরাধ সংঘটনের স্বীকোরুক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই স্বীকোরুক্তি প্রমাণ করে ভারতের বিচার ব্যবস্থা, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কীভাবে মুলমানদেরকে অপরাধী ও সন্ত্রাসী হিসেবে প্রমাণে কতোখানি তৎপর।
অসীমানন্দ দুইদিন বিচারিক হেফাজতে কাটিয়ে দিল্লীর ম্যাজিস্টেটের রুদ্ধদ্বার চেম্বারে অন্য কারো উপস্থিতি ছাড়াই সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে এই জবানবন্দী প্রদান করেন। এই জবানবন্ধী কতোখানি বাস্তব তা ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো খতিয়ে দেখে । এর প্রেক্ষিতে ‘অভিনব ভারত’, ‘জয় বন্দে মাতারম’ ইত্যাদি উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনের সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং, লেঃ কর্ণেল শ্রীকান্ত পুরোহিত, হিন্দু ধর্মগুরু দয়ানন্দ পান্ডেসহ মহারাষ্ট ও মধ্য প্রদেশ থেকে আরো আটজনকে গ্রেফতার করা হয়।
পাকিস্তানগামী সমঝোতা এক্সপ্রেসে বোমা বিস্ফেরণে (১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০০৭); ২০০৩ ও ২০০৪ সনে যথাক্রমে জালনা ও পারবহানির বেশ ক’টি মসজিদে বোমা বিস্ফোরণ; ২০০২ সালে ভূপাল রেলস্টেশনের পাশে ‘ইজতেমা’ জামায়াত হতে আধা ডজনের বেশি সক্রিয় পাইপ বা সেল বোমা পেতে রাখাসহ বহু সন্ত্রাসী হামলার সাথে হিন্দুত্ববাদীরা দায়ী। অথচ এগুলোর জন্য মুসলমাদেরকে দায়ী করা হয়।
অসীমানন্দ স্বীকার করেন তিনি নিজেই মালেগাঁও, হায়দারাবাদ (মক্কা মসজিদ) ও আজমির শরীফ’কে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বেছে নেন। আর সুনীল যোশী সমঝোতা ট্রেনে হামলার দায়িত্বে ছিলেন। (আরো তথ্যের জন্য পড়ুন আমার লেখা বই: ‘ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের আসল চেহারা’, ইস্টার্ন পাবলিকেশন্স
১৬ সিলভেস্টার হাউস, লন্ডন ইআিই ২ জেডি, ইউ কে; ৪ জুলাই, ২০১১)
মুসলমানদের ওপর হিন্দুদের অত্যাচার নির্যাতন ও খুনের লাখ লাখ ঘটনার অতি সামান্যই এখানে বিধৃত হলো। কুমিল্লায় ৫টি ঘর ভাঙ্চুর করার জন্য সেনাবাহিনী পাঠিয়ে বাংলাদেশ দখলের হুমকি দেয়া যদি যথার্থ হয়, তবে গত ৭৩ বছরে ভারতকে কতোবার দখল করা উচিত ছিল। সুব্রামনিয়াম সোয়ামী তার সহযোগীরা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন কায়দায় বার বার বাংলাদেশ দখলের হুমকি কিংবা ভারতের সাথে মিশে যাবার ছবক দেন। বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ ভূমি ভারতের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার দাবি জানান। ভারতের সবাইকে মনে রাখতে হবে হিন্দুদের অত্যাচারে ও শোষণে নিষ্পেষিত হয়েই গণভোটের মাধ্যমে আমাদের পূর্বপুরুষরা মুসলিম আবাসভূমি পাকিস্তান বানিয়েছেন। পাকিস্তান থেকেই বাংলাদেশের আবির্ভাব। আমরা জানি কেন পাকিস্তান হয়েছিল আর কেন বাংলাদেশ হয়েছে। পাকিস্তান থেকে সরে আসার মানে এই নয় যে আমরা ভারতের সাথে মিশে যাব কিংবা ভারতের চাপে নতি স্বীকার করবো। বাংলাদেশ কচুপাতার পানি নয় যে, সামান্য বাতাস আসলে পড়ে যাবে।
ভারতের হুমকির মুখে রুখে দাঁড়ানোর হিম্মত আমাদের রয়েছে। আমাদেরকে নগণ্য ও অক্ষম ভাবার কোন সুযোগ নেই। ভারত যে আমাদের বর্ণচোরা বন্ধু আর জানি দুষমণ গত ৫০ বছরে আমরা তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। এদেরই সার্বিক সহযোগিতা ও সমর্থনে তথাকথিত স্বাধীন বঙ্গভূমি, ঝুমল্যান্ড বিচ্ছিন্নতাবাদ আন্দোলন এবং ভারতীয় চর হিসেবে চিহ্নিত আটাশটি হিন্দু সংগঠনের দেশবিরোধী কার্যক্রম কঠোর হাতে দমন করতে হবে। বাংলাদেশে সর্বাধিক সুবিধা ভোগ করে যারা ভারতের হয়ে চক্রান্ত ও দেশবিরোধী কাজে লিপ্ত কিংবা বাংলাদেশের সংবিধান, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী বক্তব্য রাখে, প্রকাশ্যে মুসলমানদেরকে ‘জবাই’ করার হুমকি দেয় তাদেরকে দেশদ্রোহী হিসেবে উদাহরণযোগ্য শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুসলমানদের রক্তশোষা হিন্দুত্ববাদীদের অহমিকা ভেঙ্গে দিতে হবে। আরএসএস’র মুখপাত্র সুব্রামনিয়াম সোয়ামীর ধমককে আমলে নিয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য জাতিসংঘ, ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক আদালতে নালিশ করতে হবে। ভারতীয় আগ্রাসীদের মুখপাত্র সুব্রামনিয়াম সোয়ামীর সেনাবাহিনী পাঠানোর হুমকির প্রতিক্রিয়ায় দুইজন পাঠক টুইটারের যে মন্তব্য করেছেন তা সোয়ামীদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই: “এখন যদি বাংলাদেশ গুজরাটের ঘটনায় সে দেশের সেনা পাঠাতে চায় আপনি কি করবেন? .. .. .. বাংলাদেশ সিকিম নয়, যে আপনি এ কথা বলবেন। আপনারা চীন এবং পাকিস্তনকে কীভাবে সামলাবেন আগে ভাবুন।” মনে রাখতে হবে সব দিন সমান যায় না। দিন পাল্টে যাচ্ছে। ভারতও পাল্টে যাবে, এটাই যেন ভারতের ভাগ্যলিপি।* শেষ
লেখক: বাংলাদেশী-আমেরিকান সাংবাদিক ও গবেষক
রচনাকাল: নভেম্বর ২৯, ২০২০