ভারতীয় পণ্য বর্জন : এমন ক্যাম্পেইন দেশের ব্যবসার স্বার্থের বিরুদ্ধে

এমন ক্যাম্পেইন  দেশের ব্যবসার স্বার্থের বিরুদ্ধে

ইন্ডিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেছেন, সহজে আমদানি করা যায় এবং পরিবহন ব্যয় কম হয় বলেই ভারত থেকে পণ্য আমদানি করা হয়। যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছেন তারা দেশের ব্যবসার স্বার্থের বিরুদ্ধে উদ্যোগ নিয়েছেন। এ ডাকে দীর্ঘ মেয়াদে পণ্য বর্জন করা হলে ব্যবসায় আঘাত আসতে পারে, যা কাম্য নয়। সমকালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সমকাল প্রতিবেদক জসিম উদ্দিন বাদল

 সমকাল: ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাকে সংহতি প্রকাশ করেছেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় এক নেতা। এতে সে দেশের পণ্য বেচাকেনায় কোনো প্রভাব পড়বে কিনা?

আবদুল মাতলুব আহমাদ: ভারত থেকে আমরা যেসব পণ্য আমদানি করি তার সিংহভাগই শিল্পের কাঁচামাল। আমরা আমাদের স্বার্থেই আমদানি করি, ভারতের রপ্তানির স্বার্থে নয়। প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় ভারত থেকে তুলা, ফেব্রিকসহ নানা কাঁচামাল আমদানি করা হয়।

তাই নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হলেও শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে এ বয়কটে প্রভাব পড়বে না।

সমকাল: কোন কোন পণ্য বেশি আমদানি হয়, বয়কটের ডাকে আমদানি কমছে কিনা?

আবদুল মাতলুব আহমাদ: ভারত থেকে বছরে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের কাঁচামাল আমদানি করেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। এ পণ্য অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে গেলে খরচ পড়ত ২০ বিলিয়ন ডলারের মতো। অর্থাৎ অন্তত ৬ বিলিয়ন ডলার বেশি খরচ হতো। অতএব, এ বয়কটের ডাকে দেশে ভারতীয় পণ্যের বাজারে প্রভাব পড়বে না। কারণ কেউ বেশি দাম দিয়ে অন্য দেশ থেকে কাঁচামাল আনবে না। এখন পর্যন্ত এ বয়কটের ডাকে আমদানি কমেনি। এসব পণ্য অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে গেলে অর্থ ছাড়া ও সময় বেশি ব্যয় হবে। এতে ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হবে।

সমকাল: পণ্য বর্জনের ডাকে আমদানি কমে গেলে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে?

আবদুল মাতলুব আহমাদ: পণ্য আমদানি করার ক্ষেত্রে ভারতের কাছ থেকে কোনো সুবিধা চাচ্ছে না বাংলাদেশ। কিন্তু সহজে আমদানি করা যায় এবং পরিবহন ব্যয় কম হয় বলেই ভারত থেকে আমদানি করা হয়। তবে নিত্যপণ্য, ফলমূল, শাড়ি বা পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য– এ জাতীয় পণ্যের আমদানি কিছুটা কমতে পারে। ভারত থেকে কোনো পণ্য আমদানি করা সম্ভব না হলে দেশে ওই পণ্যের দাম বেড়ে যায়, যেমন– একটা বাস্তব উদারহরণ হলো পেঁয়াজ। তাই যারা বয়কটের ডাক দিয়েছেন, তারা দেশের ব্যবসার স্বার্থের বিরুদ্ধে এ উদ্যোগ নিয়েছেন। যদি এ বয়কটে দীর্ঘ মেয়াদে পণ্য বর্জন করা হয়, তাহলে ব্যবসায় আঘাত আসতে পারে, যা কাম্য নয়।

সমকাল: ব্যবসায়ীদের কারও কারও ধারণা নিত্যপণ্য বয়কট না করলেও অনেক ক্রেতা প্রসাধনী বা প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের মতো পণ্য বর্জন করতে পারে।

আবদুল মাতলুব আহমাদ: হ্যাঁ, এসব পণ্য বর্জন করতে পারে। এসব আমদানি কমে গেলে দেশের জন্য খারাপ নয়, বরং এটি দেশের জন্য ভালো হবে। এর ফলে দেশে উৎপাদিত পণ্যের ব্যবহার বাড়বে। এতে দেশীয় পণ্যের প্রসার ঘটবে। তবে এর পরিমাণ খুব বেশি নয়। তাই আমদানি না হলেও চাহিদায় খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ এসব পণ্য দেশেও উৎপাদন হয়।

সমকাল: ভারত ছাড়া অন্য দেশ থেকে পণ্য আমদানিতে কী কী প্রতিবন্ধকতা আছে?

আবদুল মাতলুব আহমাদ: ভারত ছাড়া অন্য দেশ থেকেও বাংলাদেশ অনেক পণ্য আমদানি করে। যেমন– আফ্রিকা থেকে তুলা, চীন থেকে পেঁয়াজ ইত্যাদি আনা হয়। কিন্তু তাতে বহু সমস্যা রয়েছে। যেমন– জাহাজ ভাড়া বেশি পড়ে যায়। চীন এখন বাংলাদেশে অনেক পণ্য রপ্তানি করছে। বাংলাদেশে চীনের প্রস্তুত করা পণ্যে বাজার ছেয়ে গেছে। তার পরও চীনের তুলনায় ভারত থেকে পণ্য আমদানি করা সহজ। অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে গেলে অনেক অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।

সমকাল: ভারত থেকে আমদানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সুবিধা কী?
আবদুল মাতলুব আহমাদ: ভারতের কাঁচামালের জন্য এলসি খুললে এক সপ্তাহের মধ্যে ট্রাকে পণ্য নিয়ে আসা যায়। কিন্তু অন্য কোনো দেশ থেকে আমদানি করতে গেলে দীর্ঘসূত্রতায় পড়তে হয়। দূরের কোনো দেশ থেকে আনতে গেলে একটি এলসি খুলতেই চলে যায় ১৫ দিন। তখন ব্যবসায় ঝুঁকি বাড়ে।

সমকাল