সম্প্রতি উগ্রপন্থীদের নাড়াচাড়া বেড়ে গেছে। নানাভাবে ইসলামপন্থীদের ফাঁদে ফেলে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। এ ক্ষেত্রে উগ্রপন্থীদের উস্কে দিচ্ছে গোয়েন্দাদের একাংশ। গোয়েন্দাদের এ সব কর্মকাণ্ড ভারতীয় পরিকল্পনা সঙ্গে মিলে যাচ্ছে বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পালিয়ে যাওয়ার পর দেশ ইসলামপন্থীদের হাতে চলে যাচ্ছে বলে ভারতীয়রা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জোরেসোরে প্রচার শুরু করেছে। ইসলামপন্থীদের সাম্প্রতিক নাড়াচাড়া ও গোয়েন্দাদের উস্কানি ভারতের এই অপপ্রচারের পালে হাওয়া দিচ্ছে।
হেফাজতে ইসলামের দায়িত্বশীল একজন নেতা দ্য মিরর এশিয়াকে জানান, শেখ হাসিনার পলায়নের পর গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ পদে পরিবর্তন আসলেও মাঝারি ও নিচু সারিতে আগের জনবলই রয়ে গেছে। এদের অনেকে ইসলামপন্থীদের নানাভাবে বিভ্রান্ত করছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গোয়েন্দারা ইসলামপন্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, এখনই বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠে নামা দরকার। এ ক্ষেত্রে গোয়েন্দারা তাদের সমর্থন দেবে।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের গোয়েন্দা বাহিনীগুলোতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বেশিরভাগ এখনো স্বপদে, কিংবা গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা অতীতে আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে দায়িত্ব পালন করায় বর্তমানেও তাদের মধ্যে সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। এসব গোয়েন্দা কর্মকর্তারাই মূলত দেশের ইসলামপন্থীদের নানা ভাবে উস্কে দিচ্ছে।
এর মাধ্যমে তাদের উদ্দেশ্য গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সরকারকে বেকায়দায় ফেলা। অন্যদিকে দেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ফের সক্রিয় করা। যে কারণে নানা দাবি নিয়ে যারাই এখন মাঠে আন্দোলনে নামছেন, তাদেরই তারা প্রচ্ছন্ন সহায়তা দিচ্ছে গোয়েন্দাদের ওই অংশ।
একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপি-জামায়াত ঘরানার তেমন কোনো লোক নিয়োগ হয়নি। যারা পূর্বের নিয়োগপ্রাপ্ত তাদেরও বিভিন্ন অগুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়ন করে এক প্রকার অকার্যকর করে রাখা হয়। সে সময় ছাত্রলীগ থেকে নিয়োগপ্রাপ্তরা মূলত দাপিয়ে বেড়াতেন।
এমনকি ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে প্রতিবেশী একটি দেশের গোয়েন্দাদের ব্যাপক সক্রিয় উপস্থিতি ছিল। তাই ৫ আগস্টের পর রাতারাতি আওয়ামী লীগের প্রভাব শেষ হয়ে যায়নি এটি একেবারেই নিশ্চিত।
আরেকটি সূত্র বলছে, দেশীয় গোয়েন্দাদের মধ্যে বড় একটি অংশ এখনো আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করছে। ৫ আগস্টের পর দেশে ‘ইসলামি চরমপন্থা’ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, এমন একটি বার্তা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে দিতে চাইছে। ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে আওয়ামী লীগ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে এ কৌশল কাজে আসবে বলে তাদের বিশ্বাস।
সূত্রটি জানায়, ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার পরপরই প্রথমে দেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের একটি কৌশল প্রয়োগ করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তা কাজে আসেনি। পরে তারা মাজার ভাঙার মতো একটি বিষয়কে সামনে আনে। অভিযোগ রয়েছে, দেশের কয়েকটি গোয়েন্দা বিভাগের ইন্ধনে মাজারপন্থীদের একটি অংশ নিজেরাই তৌহিদী জনতার ব্যানারে এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত করে।
এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাওয়ালি উৎসবের আয়োজনের পেছনেও এই গোয়েন্দা প্রধানদের হাত রয়েছে। তারা এর মাধ্যমে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র কীভাবে শেখ হাসিনার পতনের পর রাতারাতি ইসলামি উগ্রবাদীদের দখলে চলে গেল, সেটি প্রমাণ করতে চাইছে। যাতে ভারত ও তাদের মিত্র আমেরিকা ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের ভূ-রাজনীতিতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারানোর বিষয়টি বুঝতে পেরে এখনই পদক্ষেপ নেয়।
এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে দেশের রাজনীতিতে ফের পুনর্বাসন করা সহজ হবে বলে ওই সব গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা।
সম্প্রতি রাজধানীর কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস’র কালো পতাকা নিয়ে মিছিল-শোভাযাত্রার বিষয়টি বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। আমেরিকা কর্তৃক ঘোষিত ওই সন্ত্রাসী সংগঠনটির উপস্থিতিকে ঢাকার রাজপথে এভাবে প্রকাশ্যে শোডাউনের বিষয়টিকে অনেকে বলছেন গোয়েন্দা ষড়যন্ত্র হিসেবে। তারা বলছেন, গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাজধানীতে এভাবে একাধিক জায়গায় শোডাউন দেওয়া সম্ভব নয়।
এ ছাড়া হেফাজতের একটি সমাবেশেও কালেমা খোচিত কালো ওই পতাকার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে সম্প্রতি। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত হেফাজত নেতারাও। তাদের মিছিলে ওই পতাকা কারা বহন করল, মিছিলের শুরুতে দেখা না গেলেও মাঝখানে কোথা থেকে গুটিকয় লোক ওই পতাকা নিয়ে ঢুকল, সে বিষয়টি তারা জানেন না বলে দ্য মিরর এশিয়াকে হেফাজতের একাধিক নেতা বলেছেন।
সম্প্রতি ভারতে ইসলাম অবমাননার প্রতিবাদে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম থেকে হেফাজতের ওই মিছিলটি বের হয়ে বিজয় নগরে এসে সমাবেশ করে।
the mirror asia