- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৮ মে ২০২০
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশে ঝড়ের বেগে সংক্রমিত হচ্ছে করোনাভাইরাস। আর ভাইরাসের রাজনীতিকরণে ব্যস্ত সরকার। তারা বিরাট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যর্থতা ঢাকতেই জনজীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এখন সাধারণ ছুটি প্রত্যাহারের জন্য করোনাভাইরাসে প্রাণহানীর সকল দায় সরকারকেই নিতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, করোনাভাইরাসের ভয়াবহ মহামারিতে বিপর্যস্ত গোটা পৃথিবী। বৈশ্বিক বাস্তবতায় বাংলাদেশও যেন করোনার ছোবলে নীল হয়ে উঠেছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় দেশে দেশে নেয়া হয়েছে লকডাউন, কারফিউ-জরুরি অবস্থাসহ নানা কঠোর পদক্ষেপ। আর বিশ্বে একমাত্র বাংলাদেশেই ‘ছুটি’ দিয়ে কথিত লকডাউন বলে প্রচার করে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে কেউ ‘ছুটি’ শব্দটি ব্যবহার করেনি। আমাদের পাশের দেশ ভারতও ঘোষণা দিয়ে লকডাউন করেছে। মুসলিম দেশগুলো কারফিউ দিয়েছে। ‘ছুটি’ শব্দটি কেনো দেয়া হলো তা নিয়ে সব শ্রেণীর মানুষের মাঝে বিস্ময় রয়েছে। ‘ছুটি’ শব্দটি প্রয়োগ করে শৈথিল্য অপসারণ করা সম্ভব নয়। গার্মেন্টস, দোকান পাট, হাটবাজার, ব্যাংক-বীমা, সরকারি অফিস-আদালত-এতকিছু খোলা রেখে কঠোরভাবে ছুটি পালনের নামে জনগণের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে এখন সাধারণ ছুটি না বাড়ানোর পাশাপাশি বাস, রেল ও লঞ্চের মতো গণপরিবহন চালু করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে সরকার। প্রতিটি বোধ সম্পন্ন মানুষ আশা করেছিল যেভাবে প্রতিদিন ভয়াবহ বিপর্যয়ে ধাবিত হচ্ছে করোনা মহামারি, তাতে সরকার হয়তো কঠোর পদক্ষেপ নিবে। এখনই উপযুক্ত সময়ই ছিল কিছুদিনের জন্য হার্ড-লকডাউন কার্যকর করে ব্যাপক জনগণকে টেস্টের আওতায় এনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা। কিন্তু সরকার সেই পথে না গিয়ে হাঁটছে মৃত্যুর মিছিল বাড়ানোর পথে।
তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অধিক সংখ্যক টেস্ট এবং কঠোর লকডাউনের মাধ্যমে আক্রান্ত ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে আনার পর শিথিল করছে আর এদেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর ভীতিকর মাত্রায় প্রতিটি মানুষ যখন আতংকিত-উৎকণ্ঠিত তখন ছুটি নামের তথাকথিত লকডাউন তুলে নেয়ার পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার কি প্রমাণ করতে চায় ‘করোনার থেকে তারা শক্তিশালী’?
রিজভী বলেন, ৩১ মে থেকে ছুটি প্রত্যাহার করে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে মৃত্যুগহব্বরের দিকে ঠেলে দিয়ে নিজেরা নিরাপদ দূরত্বে থেকে নিজেদের বেশ শক্তিশালী মনে করা যায়। সরকারের মন্ত্রী-নেতারা হঠকারী ও অবিবেচক সিদ্ধান্ত দিতেই পারঙ্গম। ছুটি প্রত্যাহারের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষকে আক্রান্তের দিকে ঠেলে দেয়া হলো। এটা সরকারের সবচাইতে বড় আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। পরবর্তীতে হয়তো আফসোস করারও সুযোগ থাকবে না। টাকার জন্যই জীবন, মানুষের জীবনের দরকার নেই-এটাই সরকারের নীতি। মানুষকে বিপদে ফেলে দেয়ার এই সিদ্ধান্ত বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা বার্তার প্রতিও সরকারের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন। বাংলাদেশ একাই নয়, মরণঘাতী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে বিশ্বের প্রতিটি দেশই বিপর্যস্ত। তবে যেসব দেশ মরণঘাতী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবকে সাধারণ সংকট ভেবে কর্ম পরিকল্পনা তৈরী করেছিল তাদেরকে নজিরবিহীন পরিস্থিতি মোকবেলা করতে হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা দেখেও কোনো কিছু শিখেছি বলে মনে হচ্ছে না।
তিনি বলেন, গত একদশকে প্রতিটি ঘটনায় বিরোধী দল ও মতের মানুষের বিরুদ্ধে র্যাব-পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে ক্ষমতাসীনরা পরিস্থিতির উপর জবরদস্তিমূলক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল। এবারো মনে হয় তারা একই কায়দায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার পরিকল্পনা করে যাচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সারাবিশ্ব যেখানে ‘লকডাউন’, ‘আইসোলেশন’ কিংবা ‘কোয়ারেন্টাইন’-এর মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সেখানে বাংলাদেশ ‘সাধারণ ছুটি’র নামে, সাত দিন কিংবা ১০ দিন করে ছুটি বাড়িয়ে বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখানোর চেষ্টা করেছে। আর এখন আবার অফিস-আদালত খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি, সরকার শুরু থেকেই ‘মরণঘাতী ভাইরাস পরিস্থিতি’ গুরুত্বের সাথে নেয়নি। নিশিরাতের সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যে মন্তব্যেও এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রমাণ পাওয়া গেছে সরকারের অপরিকল্পিত, দায়সারা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডের।