বিশ্ববাজারে কমলেও দেশে অপরিবর্তিত ভোজ্যতেলের দাম

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল ভোজ্যতেলের আন্তর্জাতিক বাজার। ঊর্ধ্বমুখিতার প্রভাব পড়ে দেশের বাজারেও। তবে চলতি বছরের শুরুর দিকেই বিশ্ববাজারে মূল্য কমতে শুরু করে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম এক বছর আগের অবস্থায় ফিরলেও সে অনুপাতে দাম কমেনি দেশের বাজারে। এর জন্য আমদানিকারকদের দুষছেন স্থানীয় বিক্রেতারা।

দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে পাইকারি পর্যায়ে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম অনেকটা স্থির। গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দাম সমন্বয় করা হলে মূল্য কিছুটা কমে আসে। তারপর এক মাস পেরিয়ে গেলেও দেশীয় বাজারে আর কমেনি ভোজ্যতেলের দাম। লম্বা সময় ধরে বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দাম পুনর্নির্ধারণ না করায় পাইকারি বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমছে না। উচ্চমূল্যের কারণে বাধ্য হয়ে ব্যবহার সীমিত করেছেন ভোক্তরা। এতে মিল পর্যায় থেকে ভোজ্যতেলের বিক্রিও কমে গেছে।

ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) সয়াবিন এসও (সরবরাহ আদেশ) পর্যায়ে লেনদেন হচ্ছে ৬ হাজার টাকায়। তবে মিলগেট থেকে সংগ্রহ করার পর একই পণ্য বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ২০০ থেকে ৬ হাজার ৩০০ টাকায়। অন্যদিকে পাম অয়েল এসও পর্যায়ে ৪ হাজার ৬০০ টাকায়, পাইকারি পর্যায়ে ৪ হাজার ৯০০ থেকে ৫ হাজার টাকায় এবং সুপার পাম অয়েল এসও পর্যায়ে ৪ হাজার ৮০০ ও পাইকারি পর্যায়ে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে স্থিতিশীল রয়েছে পণ্যটির মূল্য। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ কয়েক দফা কমেছে পণ্যটির দাম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের মেসার্স ইলিয়াস ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুর রাজ্জাক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌ভোজ্যতেলের দাম সেপ্টেম্বরে কমানো হয়েছিল। গত এক মাসে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের বুকিং দাম অনেক কমেছে। কিন্তু দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্য পুনর্নির্ধারণ না হওয়ায় লেনদেন কমে গেছে। লোকসানের ভয়ে ডিও ব্যবসায়ীরা লেনদেন কমিয়ে দিলেও মিল গেট থেকে পণ্যের দাম কমানো হয়নি। এতে বিশ্ববাজারে বুকিং দাম কমার সুফল পাচ্ছে না সাধারণ ভোক্তারা।

সর্বশেষ ১৪ সেপ্টেম্বর বোতলজাত সয়াবিনের লিটারপ্রতি দাম ৫ টাকা কমিয়ে ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। এর আগে গত ১৩ আগস্ট সয়াবিনের দাম প্রতি লিটারে ৫ টাকা কমিয়ে ১৭৪ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি। এছাড়া পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের দাম কমে ৮২৫ টাকা ও প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২৪ টাকা।

বৈশ্বিক দামের প্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হয়ে ট্যারিফ কমিশন ভোজ্যতেলের দাম পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে আমদানিকারক ও পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো দাম নির্ধারণ করে। নিয়মিত এক মাসের মধ্যে দাম সমন্বয়ের কথা থাকলেও দাম কমানোর ক্ষেত্রে কিছুটা ধীরে চলো নীতিতে চলছে সংশ্লিষ্টরা।