অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ জিতে এসেছে চার মাস হয়েছে মাত্র। আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হবে ৯ মাস পরই, সেটা ঘরের মাটিতেই। কিন্তু টি–টোয়েন্টিতে দেশকে প্রথম বিশ্বকাপ এনে দেওয়া অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ তাতে থাকবেন কি না, প্রশ্ন উঠে গেছে এখনই। সাবেক উইকেটকিপার ইয়ান হিলি অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি দলে ফিঞ্চের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
শুধু ফিঞ্চ নন, অস্ট্রেলিয়া দলে নিয়মিত ও আরেক বড় নাম স্টিভ স্মিথকে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন হিলি।
গতকাল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সান্ত্বনার জয় পেয়েছে শ্রীলঙ্কা। ৫ উইকেটের এ জয়ে ধবলধোলাই এড়িয়েছে তারা। অস্ট্রেলিয়ার প্রেক্ষাপটে এ ম্যাচ থেকে পাওয়ার খুব বেশি ছিল না, তবে ব্যক্তিগতভাবে এ ম্যাচটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল ফিঞ্চের জন্য। সিরিজে তাঁর দল দুর্দান্ত খেললেও খুব বাজে ফর্মে আছেন অধিনায়ক। প্রথম চার ম্যাচে মাত্র ৭০ রান করা ফিঞ্চ গতকালও হতাশ করেছেন। ১২ বল খেলে এই ওপেনার মাত্র ৮ রান করেই বিদায় নিয়েছেন।
সিরিজে ৮৫ বলে ৭৮ রান করেছেন ফিঞ্চ। পুরো সিরিজে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ৬টি চার, ছিল না কোনো ছক্কা। ইনিংসের শুরুতে ঝড় তুলতে পারার জন্য বিখ্যাত একজনের সঙ্গে একদমই যায় না এ পরিসংখ্যান। কাল ম্যাচ শেষে অস্ট্রেলিয়ার রেডিও চ্যানেল এসইএন–এর এক অনুষ্ঠানে সরাসরিই বলেছেন, ‘ফিঞ্চের যে পরিসংখ্যান, তাতে দলে জায়গা পাওয়া উচিত নয়। এটা কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়।’
গত ১২ ম্যাচের মাত্র দুটিতে ফিঞ্চকে ছক্কা মারতে দেখা গেছে। বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২টি ছক্কা মেরেছিলেন। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪টি।
২০২১ বছরটা ভালোভাবেই শুরু করেছিলেন ফিঞ্চ। নিয়মিত কয়েকজন খেলোয়াড়কে ছাড়াই নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ খেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই ১০ ম্যাচে ৩টি অর্ধশতকসহ ৩২৪ রান করেছেন ফিঞ্চ। কঠিন কন্ডিশনে ৩৬ গড় ও ১২৯ স্ট্রাইক রেট ফর্মের ইঙ্গিতই দেয়। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরু হতেই কেন যেন মিইয়ে গেছেন।
বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর ১২ ম্যাচে মাত্র ২১৩ রান করেছেন, কোনো অর্ধশতক নেই। স্ট্রাইক রেট (১০৫.৯৭) বাস্তবেই অস্ট্রেলিয়া দলের ওপেনার হিসেবে তাঁর জায়গা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেয়। গত ১২ ম্যাচের মাত্র দুটিতে তাঁকে ছক্কা মারতে দেখা গেছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই বিশ্বকাপে ২৩ বলে ৩৭ রান করার পথে ২টি ছক্কা মেরেছিলেন। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে রানরেট বাড়িয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জে ২০ বলে ৪০ করা ফিঞ্চ মেরেছিলেন ৪টি ছক্কা। এরপর আর মাত্র এক ইনিংসেই তাঁর স্ট্রাইক রেট এক শর বেশি ছিল।
ইয়ান হিলি অবশ্য ফিঞ্চের এমন ব্যর্থতাকে নতুন কিছু বলছেন না। তাঁর দাবি, বেশ কিছুদিন ধরেই অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, ‘গত তিন বছরই এমন সময় গেছে, যখন সে এত বাজে খেলেছে যে কোনো রানই পাচ্ছিল না। সে এখন অনেক বেশি রক্ষণাত্মক। একসময় নেমেই ধুমধাড়াক্কা মারার যে মেশিন ছিল অ্যারন ফিঞ্চ, তেমনটা আর নেই।’
হিলি অস্ট্রেলিয়া দলের আরেকটি দুর্বলতা খুঁজে পেয়েছেন স্মিথকে নিয়ে। সাবেক অধিনায়ক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচ খেলেছেন। তাতে ২৩ বলে ২৩ রান তাঁর। বিশ্বকাপে চার ম্যাচে ব্যাট করা ফিঞ্চ ৬৯ রান করতে ৭১ বল খেলেছেন। ২০২১ সালের পর থেকে টি-টোয়েন্টিতে স্মিথের কোনো ছক্কা নেই, স্ট্রাইক রেট ৯৭.৮৭!
আগামী বিশ্বকাপে দলে স্মিথের তাই জায়গা দেখছেন না হিলি, ‘আমি মনে করি, স্টিভ স্মিথেরও টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা ধরে রাখার যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে হবে। আমাদের টি-টোয়েন্টি দল নিয়ে আমাদের স্বচ্ছ হতে হবে।’
বিশ্বকাপের ফাইনালে তিনে নেমে ৭৭ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন মিচেল মার্শ। ফাইনালের দলেই ছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস ও ম্যাথু ওয়েডের মতো টি-টোয়েন্টির আবেদন সামলাতে জানা ব্যাটসম্যান। হিলির ধারণা, স্মিথকে দলে রাখার জন্য এমন ব্যাটসম্যানদের বাইরে রাখাটা ভুল হবে অস্ট্রেলিয়ার।