বিরোধী দল থাকতে চায় জাপা, চান স্বতন্ত্ররাও

বিরোধী দল থাকতে চায়  জাপা, চান স্বতন্ত্ররাওপ্রতীকী ছবি

নির্বাচনে মাত্র ১১ আসন পেলেও টানা তৃতীয়বারের মতো সংসদের প্রধান বিরোধী দল হতে চায় জাতীয় পার্টি (জাপা)। ৬২ আসনে জয়ী স্বতন্ত্র এমপিদের কয়েকজন জানিয়েছেন, নিজেরা জোট করবেন। জোট হলে তারাই হবেন বিরোধী দল। তবে তা নির্ভর করছে সংসদ নেতা ও স্পিকারের ওপর।

বিরোধী দলের নেতা কে হবেন– এমন প্রশ্নে গতকাল বুধবার নবনির্বাচিত এমপিদের শপথের পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, স্পিকার ও সংসদ নেতা আলোচনা সাপেক্ষে বিষয়টি ঠিক করবেন।

আইন অনুযায়ী, ‘বিরোধী দলের নেতার অর্থ, স্পিকারের বিবেচনা মতে যে সংসদ সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত ক্ষেত্রমত দল বা অধিসংঘের নেতা।’ শপথের পর জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘ঠিক জানি না নিয়মটা কী। তবে বিরোধী দলে ছিলাম এবং বিরোধী দলে থাকতে চাই।’

দল বলতে সংবিধানে রাজনৈতিক দল বলা হলেও সংসদের কার্যপ্রণালি-বিধিতে সংসদীয় দলকে বোঝানো হয়েছে। অধিসংঘ মানে কয়েকজন এমপির সংসদীয় গ্রুপ। সংসদীয় দল বা অধিসংঘ ন্যূনতম কতজন এমপি নিয়ে হতে হবে, তা বলা নেই।

১৯৭৩ সালের ১২ এপ্রিল সংসদে বিতর্কে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘২৫ জনের কম সদস্য নিয়ে কোনো দল গঠিত হলে এবং ওই দলে কমপক্ষে ১০ জন সদস্য থাকলে, ওই দলকে সংসদীয় অধিসংঘ বা পার্লামেন্টারি গ্রুপ বলা যেতে পারে, কিন্তু সংসদীয় দল বলা যাবে না।’ প্রথম সংসদে তাই বিরোধী দল ছিল না।

২৫ জনের কম সদস্য থাকায় আগামী সংসদে জাপা সংসদীয় দল হিসেবে গণ্য হওয়ার কথা নয়। এবারই ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক স্বতন্ত্র এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। আগের সর্বোচ্চ ছিল ১৯৮৬ সালে ৩২ জন। ১৯৮৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে জাসদের (রব) নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত বিরোধী দল ১৯ আসন পেয়েছিল। স্বতন্ত্র এমপি ছিলেন ২৫ জন। কিন্তু স্পিকার সম্মিলিত বিরোধী দলকে সরকারের বিরোধিতাকারী বৃহত্তম অধিসংঘের মর্যাদা দেন। জাসদ (সিরাজ), ফ্রিডম পার্টি এবং স্বতন্ত্র ৯ এমপি আ স ম আবদুর রবকে নেতা মেনে আবেদন করেন। তাঁকে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেন স্পিকার।

এবার জাপার চেয়ে স্বতন্ত্র এমপির সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবং স্বতন্ত্রদের অন্য কোনো সংসদীয় দলে যোগ দেওয়ার সুযোগ ২০০৮ সালে রুদ্ধ হওয়ায়, প্রশ্ন উঠেছে কারা হবে বিরোধী দল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী ১৬ স্বতন্ত্র এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিমের নেতৃত্বে অধিসংঘ গঠন করেছিলেন। তারা আওয়ামী লীগের পদে থাকলেও দলটির সংসদীয় দলে যোগ দিতে পারেননি। গতকাল আওয়ামী লীগ এবং স্বতন্ত্র এমপিরা আলাদাভাবে শপথ নেন।

স্বতন্ত্র এমপিরা জোট গঠন করবেন বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর-৪ আসনের মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। গতকাল শপথের আগে তিনি বলেন, ‘এখনও বিরোধী দল গঠন হয়নি। আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেব। আমরা জোট অবশ্যই করব।’

ফরিদপুর-৩ আসন থেকে জয়ী স্বতন্ত্র এমপি এ. কে. আজাদ বলেন, ‘স্বতন্ত্র সবাই একত্রে থাকব, এ রকম একটা প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সংসদ নেতা ও স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে।’

জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘এবারও প্রধান বিরোধী দল হতে চাই। সরকারের সঙ্গে গতবারও ছিলাম না।’ তাঁর দাবি, জাপার সংসদীয় দলের সভায় ঠিক হবে কে হবেন বিরোধী দলের নেতা, উপনেতা ও চিফ হুইপ।

বিএনপিহীন নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। জাপাকে ছেড়ে দেওয়া ২৬ আসনের ১৫টিতে, ১৪ দলের শরিকদের ছেড়ে দেওয়া ৬টি আসনের ৪টিতে এবং ৪৭ আসনে নৌকাকে হারিয়েছেন স্বতন্ত্ররা। ৬২ স্বতন্ত্র এমপির দুইজন বাদে সবাই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।

সমকাল