বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় কয়েক বছর ধরেই বাড়ছে। যদিও ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছর তা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এর আগে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় ওঠানামার মধ্যেই ছিল। তবে দুই বছরে উৎপাদন ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েও লোকসানের বোঝা কমানো যায়নি। বরং তিন বছরের ব্যবধানে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ বিক্রিতে লোকসান প্রায় পাঁচগুণ হয়েছে।
পিডিবির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছর বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি সরবরাহ ব্যয় ছিল পাঁচ টাকা ৭৫ পয়সা। সে সময় গড় বাল্ক মূল্যহার ছিল চার টাকা ৮৪ পয়সা। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে পিডিবির লোকসান হতো মাত্র ৯১ পয়সা। আর ২০২২-২৩ অর্থবছর বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি সরবরাহ ব্যয় বেড়ে হয়েছে ১১ টাকা ৩৮ পয়সা। তবে গত অর্থবছর বিদ্যুতের গড় বাল্ক মূল্যহার বেড়ে হয়েছে পাঁচ টাকা ৯৮ পয়সা। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে পিডিবির লোকসান দাঁড়িয়েছে পাঁচ টাকা ৪০ পয়সা।
যদিও গত অর্থবছর দুই দফা বাল্ক মূল্যহার বাড়ানো হয়েছে। এতে গড় মূল্যহার বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ছয় টাকা ২০ পয়সা ও ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ছয় টাকা ৭০ পয়সা। তবে অর্থবছরের শুরুতে বাল্ক মূল্যহার ছিল পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা। এতে গত অর্থবছর ভারিত গড়ে বাল্ক মূল্যহার পড়ে পাঁচ টাকা ৯৮ পয়সা।
এদিকে ২০২০-২১ অর্থবছর বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি সরবরাহ ব্যয় দাঁড়ায় ছয় টাকা ৪৮ পয়সা। সে সময় গড় বাল্ক মূল্যহার ছিল পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে পিডিবির লোকসান হতো এক টাকা ৩১ পয়সা। আর ২০২১-২২ অর্থবছর বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি সরবরাহ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় আট টাকা ৮১ পয়সা। ওই অর্থবছর বিদ্যুতের গড় বাল্ক মূল্যহার ছিল পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে পিডিবির লোকসান হয় তিন টাকা ৬৪ পয়সা।
প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, এক দশকের মধ্যে ২০১২-১৩ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ বিক্রিতে পিডিবির লোকসান মোটামুটি কাছাকাছি ছিল। এর মধ্যে ২০১২-১৩ অর্থবছর বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি সরবরাহ ব্যয় ছিল পাঁচ টাকা ৬৪ পয়সা ও গড় বাল্ক মূল্যহার ছিল চার টাকা ৭০ পয়সা। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে পিডিবির লোকসান হতো ৯৪ পয়সা। ২০১৩-১৪ অর্থবছর ইউনিটপ্রতি সরবরাহ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ছয় টাকা ছয় পয়সা। গড় বাল্ক মূল্যহার চার টাকা ৭০ পয়সাই অপরিবর্তিতই ছিল। এতে প্রতি ইউনিট পিডিবির লোকসান বেড়ে দাঁড়ায় এক টাকা ৩৬ পয়সা।
পরের অর্থবছর লোকসান সামান্য কমে দাঁড়ায় এক টাকা ৩৩ পয়সা। ওই অর্থবছর ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যয় সামান্য কমে দাঁড়ায় ছয় টাকা তিন পয়সা। তবে গড় বাল্ক মূল্যহার ছিল একই; অর্থাৎ চার টাকা ৭০ পয়সা। তবে ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছর সবচেয়ে ভালো অবস্থায় ছিল পিডিবি। গড় উৎপাদন ব্যয় ওই সময় হ্রাস পাওয়ায় এবং বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার সামান্য বাড়ানোয় ইউনিটপ্রতি লোকসান ন্যূনতম পর্যায়ে নেমে যায়। এর মধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছর পিডিবির ইউনিটপ্রতি লোকসান হয় মাত্র ৩৬ পয়সা, যা এক দশকে সর্বনিম্ন। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছর ইউনিটপ্রতি লোকসান দাঁড়ায় ৪৭ পয়সা।
২০১৫-১৬ অর্থবছর বিদ্যুতের গড় সরবরাহ কমে দাঁড়ায় পাঁচ টাকা ২৬ পয়সা ও ২০১৬-১৭ অর্থবছর পাঁচ টাকা ৩৭ পয়সা। আর ওই অর্থবছর বাল্ক মূল্যহার ছিল চার টাকা ৯০ পয়সা। পর পর দুই অর্থবছর পিডিবির লোকসান ন্যূনতম পর্যায়ে নামায় পরের অর্থবছর বাল্ক মূল্যহার কমিয়ে করা হয় চার টাকা ৮৪ পয়সা। এর মধ্যে ২০১৭-১৮ অর্থবছর ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ছয় টাকা ১৩ পয়সা। তবে ২০১৮-১৯ অর্থবছর তা আবার কমে দাঁড়ায় পাঁচ টাকা ৮৫ পয়সা। ওই দুই অর্থবছর পিডিবির গড় লোকসান ছিল যথাক্রমে এক টাকা ২৯ পয়সা ও এক টাকা এক পয়সা।
প্রসঙ্গত, বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের তিনটি অংশ রয়েছে। এগুলো হলোÑজ্বালানি ব্যয়, স্থায়ী ব্যয়/ক্যাপাসিটি চার্জ এবং পরিবর্তনশীল (ভেরিয়েবল) ব্যয় তথা পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়। আর গড় উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে তিন শতাংশ সঞ্চালন লোকসান ও ১৫ পয়সা বিদ্যুৎ খাত উন্নয়ন তহবিলের অংশ যোগ করে নির্ধারণ করা হয় বিদ্যুতের গড় সরবরাহ ব্যয়। ফলে উৎপাদন ব্যয় যে হারে বাড়ে, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যয়ও একই হারে বৃদ্ধি পায়।
sharebiz