অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। হঠাৎ করে সুদ পরিশোধে ব্যয় এত বেশি হারে বাড়ার কারণ জানতে চাইলে ইআরডির সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমকালকে বলেন, সুদ পরিশোধে ব্যয় বৃদ্ধির পেছনে অন্তত তিনটি কারণ রয়েছে। এগুলোর একটি হচ্ছে বিদেশি ঋণের সুদের হার বেড়েছে। যেমন– বর্তমানে কিছু ঋণে সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেটের (সোফর) সঙ্গে অতিরিক্ত সুদ ধার্য করা হয়। সোফর রেট এখন ৫ শতাংশের মতো। এর সঙ্গে ঋণদাতা সংস্থার সুদ মিলে কোনো কোনো ঋণে সুদের হার ৭ শতাংশের ওপরে গিয়ে ঠেকে। আরেকটি কারণ, বাজেট সহায়তার মতো স্বল্পমেয়াদি অনেক ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ ধরনের ঋণে রেয়াতকাল তুলনামূলক কম থাকে। এ ছাড়া বিদেশি ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে। যেগুলোর কিছু কিছু এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে। আগামীতে সুদ পরিশোধে ব্যয় আরও বাড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি।
ইআরডির প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বিদেশি ঋণের আসল পরিশোধ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেড়েছে। মোট ৪৯ কোটি ২০ লাখ ডলার পরিশোধ করা হয়েছে এ বাবদ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৩৮ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে আসল বাবদ পরিশোধ বেড়েছে প্রায় ১০ কোটি ডলার।
সুদ-আসল মিলিয়ে মোট ৮৭ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করা হয়েছে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল সাড়ে ৫২ কোটি ডলার। টাকার হিসাবে দেখা যায়, গত প্রান্তিকে ঋণের সুদ-আসল বাবদ প্রায় ৯ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। গত অর্থবছরের একই প্রান্তিকে এর পরিমাণ ছিল প্রায় ৪ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা।
ঋণ পরিশোধে সরকারের ব্যয় অনেক বেড়ে গেলেও সে হারে প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড় করেনি উন্নয়ন সহযোগীরা। ইআরডির তথ্যমতে, গত প্রান্তিকে আগের অর্থবছরের একই প্রান্তিকের চেয়ে অর্থ ছাড় কমেছে ৫ শতাংশের মতো। মোট ১২৮ কোটি ডলার অর্থ ছাড় হয়েছে এ সময়। গত অর্থবছরের একই প্রান্তিকে যার পরিমাণ ছিল ১৩৫ কোটি ডলারের মতো। অর্থাৎ ছাড় কমেছে ৭ কোটি ডলারের মতো।
অর্থ ছাড় কমলেও গত প্রান্তিকে ঋণের প্রতিশ্রুতি ৬১১ শতাংশ বাড়িয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা। ৪০ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে এ সময়, যা গত অর্থবছরের একই প্রান্তিকে ছিল ২৮ কোটি ৮০ লাখ ডলারের মতো।