বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশনা : ৭২ ঘণ্টার অবরোধ শুরু

সরকার পতনের একদফা দাবি, মহাসমাবেশে হামলা ও বিএনপি মহাসচিবকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিরোধী জোটের ডাকা সারা দেশে ৭২ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধ শুরু হচ্ছে আজ। গতকাল দিবাগত রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত লাগাতার সড়কপথ, রেলপথ, নৌপথে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে তারা। বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে  জামায়াতও ৭২ ঘণ্টার অবরোধ ঘোষণা করেছে।

এদিকে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়নে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের নানা নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি’র হাইকমান্ড। সারা দেশে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ভিডিওবার্তা দিয়েছেন বিএনপি’র শীর্ষ নেতা। এ ছাড়া দায়িত্বশীল নেতাদের মাঠে থাকার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যায় বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আন্দোলন কর্মসূচি প্রণয়ন ও পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

দলটির নীতি-নির্ধারণী ফোরামের এক নেতা জানিয়েছেন, বিএনপি’র পিছু হটার আর কোনো সুযোগ নেই। বিএনপি’র দাবির পক্ষে জনগণের সমর্থন রয়েছে। ২৮শে অক্টোবর শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে মানুষের ঢল দেখে পূর্বপরিকল্পিতভাবে পুলিশ দিয়ে হামলা চালিয়ে পণ্ড করেছে। ২৯শে অক্টোবর হরতাল কর্মসূচি সারা দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করেছে।

আজ থেকে শুরু হওয়া ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচিও আরও কঠোরভাবে পালন করা হবে। সেভাবে দলের নেতাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, মহাসমাবেশের পরদিনই সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচির কারণে সারা দেশ থেকে আসা নেতাকর্মীরা ঢাকায় আটকা পড়েছিল। একদিন বিরতি দেয়ায় জেলার নেতাকর্মীরা এলাকায় ফিরে গেছেন। তাই ঢাকার পাশাপাশি জেলায় জেলায় অবরোধ কর্মসূচি পালন হবে। সারা দেশে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাদের মাঠে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অবরোধ কর্মসূচি সফল হলে আগামী সপ্তাহ থেকে ফের কর্মসূচি দেয়া হতে পারে। তফসিল ঘোষণার দিন থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হতে পারে। সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে মহাসমাবেশে সংঘর্ষের পর বিএনপি’র সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তার ও বাসায় বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। গতকালও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র সদস্য সচিব আমিনুল হকের বাসায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। পুলিশের গ্রেপ্তার এড়াতে নেতারা সতর্ক হয়ে চলছেন।

বিএনপি’র একাধিক নেতা জানিয়েছেন, পুলিশের এখন টার্গেট সিনিয়র নেতারা। তাদের গ্রেপ্তার করে চলমান আন্দোলন দমাতে চাইবে সরকার। তাই তারা কৌশলী অবস্থান নিয়ে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আন্দোলন বাস্তবায়নে দিচ্ছেন নানা নির্দেশনা। একজন গ্রেপ্তার হলে আরেক দায়িত্ব নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ঢাকার নেতাদের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়েছে। অবরোধের সময় পুরান ঢাকার নেতারা থাকবেন সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনালে, ঢাকা দক্ষিণের নেতারা থাকবেন কমলাপুর রেলস্টেশনে এবং উত্তরের নেতারা থাকবেন টঙ্গী ও বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকায়।
এ ছাড়া অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে থাকার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এদিকে গতকাল এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, সংবাদপত্রের গাড়ি, এম্বুলেন্স, অক্সিজেন সিলিন্ডার গাড়ি ও জরুরি ওষুধ পরিবহন অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে। ওদিকে বিএনপি’র ডাকা অবরোধ কর্মসূচিকে সমর্থন করে তা সর্বাত্মকভাবে পালন করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এলডিপি’র প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ (বীর বিক্রম)। সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছে যুগপথ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ ও ১২ দলীয় জোটের নেতারাও। ওদিকে অবরোধের সমর্থনে গতকাল মিছিল করেছেন গণঅধিকার পরিষদের নেতারা।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি এ বিষয়ে বলেন, সরকার অলআউট নীতিতে নেমেছে। তারা আন্দোলন দমাতে যতটুকু নিষ্ঠুর হওয়া দরকার তাই করবে। বিএনপিসহ বিরোধী জোট নেতাদের বিরুদ্ধে হুলিয়ার মধ্যেও লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। জনগণ ঐক্যবদ্ধ ও সচেতন। সরকারের সকল অসৎ পরিকল্পনা দেশবাসীর কাছে পরিষ্কার।

যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলায় হুলিয়া দিলেও রাজপথে আছি। আমরা সরকারের দমন-পীড়নে আতঙ্কিত নই। আমরা জানতাম অবৈধ ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে সরকার সব ধরনের নোংরামিই করবে। মনে করেছিল মহাসচিবকে আটক করলে আন্দোলনকারীরা ভয় পাবে। কিন্তু বিএনপিও বোকা নয়, পর্যায়ক্রমে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বিএনপি’র প্রস্তুতি আছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র সদস্য সচিব আমিনুল হক মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি’র আন্দোলন দমাতে সরকার গণগ্রেপ্তার চালাচ্ছে। হামলা-গ্রেপ্তারের মধ্যে সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল কর্মসূচি পালন করেছে। অবরোধ কর্মসূচি পালনে দলের নেতাদের নানা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা মাঠে থেকে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন।

গাড়ি চালানোর ঘোষণা মালিক সমিতির: বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা টানা তিনদিনের অবরোধে সারা দেশে পণ্যবাহী গাড়ি ও বাস চালানোর ঘোষণা দিয়ে নিরাপত্তা চেয়েছে পরিবহন মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।

সেই সঙ্গে যেসব গাড়ি ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, সেগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণের দাবিও জানানো হয়েছে।

গতকাল সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মালিক-শ্রমিকদের যৌথসভায় এই সিদ্ধান্ত হয় বলে সংগঠনের মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

মানব জমিন