বিএনপি তো জাসদ না

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল মনে করেন, সরকারের ইচ্ছা থাকলে জানুয়ারির শুরুতে সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন হতে পারে। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা যেতে পারে। তা না করে যদি সরকার একটি একতরফা নির্বাচন করে তাহলে সামনের দিনে বিরোধীদের উপর দমন পীড়ন আরও বেড়ে যেতে পারে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকোচিত হতে পারে। বিএনপিসহ বিরোধীদের চলমান আন্দোলন সম্পর্কে তিনি বলেন, অনেকে মনে করেন বিএনপি’র আরও জোরালো অবস্থান নেয়া উচিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে শক্তভাবে দাঁড়ানো উচিত। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তা করা সম্ভব না। কারণ বিএনপিতো ১৯৭৪-১৯৭৫ সালের জাসদ না। তিনি বলেন, কোনো বিদেশি শক্তি যখন সরকারের পক্ষে থাকে তখন তারা এটাকে হস্তক্ষেপ বলছেন না। কিন্তু কোনো দেশ যখন সুষ্ঠু নির্বাচন বা গণতন্ত্রের পক্ষে বলে তখন বলা হয় তারা হস্তক্ষেপ করছে।

মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচনসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।

সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে ৪০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছিলেন ড. আসিফ নজরুল। কেন এই বিবৃতি এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা আমরা দিয়েছি রাজনৈতিকভাবে সমাধানের কোনো সুযোগ সরকারের থাকলে সংবিধানে যে সুযোগের বিষয়টি আছে বিষয়টিকে পিনপয়েন্টেট করার জন্য। আমাদের সংবিধানে বলা আছে যদি সরকার নিজ থেকে নির্ধারিত সময়ের আগে সংসদ ভেঙে দেয় তাহলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করা যায়। সরকারের যদি সত্যিই সদিচ্ছা থাকে তাহলে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার জন্য সরকার সময় পাবেন। এই সময়টা বিরোধী দলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে সবাইকে নির্বাচনে নিয়ে আসার চেষ্টা করা যায় কিনা সে রকম একটি চিন্তা সরকার যদি করতে চায় করতে পারে। সেটা দেখানোর জন্য, সেটা দেখিয়ে দেয়ার জন্য। এবং এই আহ্বানটি জানানোর জন্য। কারণ আমরা চাই না বাংলাদেশে একতরফা বা একদলীয় নির্বাচন করুক। এরকম নির্বাচন হলে একটি দেশ বিপর্যস্ত হয়। দেশে সুশাসনের অভাব বেশি হয়।

নির্বাচনের পর যে সরকার গঠন হতে যাচ্ছে তার গতি প্রকৃতির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা একতরফা নির্বাচনের যে অভিজ্ঞতা দেখেছি সেখানে ২০১৪ সালের পর আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক, সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা সেগুলো আরও কমে গেছে। ২০১৮ সালের পর আরও কমেছে। এখন ২০২৪ সালে এই ধরনের নির্বাচন মানে আরও বেশি কমে যাবে। এবং এটা বিশ্বাস করার কারণ আছে এই সরকার ২০২৪ সালে একতরফা নির্বাচন করে ফেলতে পারলে বিরোধী দলগুলোর ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন আরও বাড়বে। যেহেতু তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা দেখছে একটির পর একটি ইচ্ছামতো নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকা যায়। কাজেই তাদের বিপক্ষে কোনো রকম কোনো সমালোচনা হলে সেটা বিরোধী রাজনৈতিক দল হোক বা সুশীল সমাজ-গণমাধ্যম হোক তারা সেটাকে আরও শক্ত হাতে দমন করবে। এবং আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করার জন্য আরও কিছু আইন করার চিন্তা সরকার করছে। সেই আইনগুলো পাস হয়ে যাবে। ২০২৪ সালের পর যদি আমরা দেখি সরকার বিএনপিকে অবৈধ ঘোষণা করেছে আমি ব্যক্তিগতভাবে অবাক হবো না।

অনেকে বলেছিলেন সামনের নির্বাচন ১৪ বা ১৮ সালের নির্বাচনের মতো হবে না, আসলে কেমন নির্বাচন হচ্ছে এ প্রশ্নে তিনি বলেন, বিএনপি যেই মানুষের সমাগম ঘটাতে পেরেছে সেটাতো বাংলাদেশের ইতিহাসে এরকম ঘটনা কম ঘটেছে। তারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছিল। এবং বিপুল জনসমাগম হয়েছিল। নদী সাঁতরে-পায়ে হেঁটে জনসভায় লাখ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছিল। বিপুল জনসমাগম তারা সংগঠিত করতে পেরেছিল। এখন অহিংশ একটি রাজনীতি ও আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরকার যখন রাষ্ট্রীয় বাহিনী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে শুধু পুলিশকে দেখা গেছে রাতের বেলা কোর্ট বসিয়ে বিচার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে যখন আইনমন্ত্রীকে বলা হয় তখন তারা বলেন, এটা জট কমানোর জন্য করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে বিএনপিকে ভোট দেয়ার জন্য পারুল গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন সেটার বিচার হচ্ছে না কেন? গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কিছু কিছু মামলা তো হয়েছে সেগুলোর বিচার হচ্ছে না কেন। বিএনপি’র বিরুদ্ধে যে মামলা হচ্ছে প্রায় শতভাগ মামলার কনভিকশন হচ্ছে কেন? এটা কি সাধারণ বিষয়! এত ঘন ঘন শুনানি হচ্ছে কেন। তাদের জামিন দেয়া হচ্ছে না কেন। এবং আমরা জানি এ সকল মামলা গায়েবি মামলা ছিল।

গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয় এটা নিয়ে। তারা এটা থেকে জামিন পাচ্ছে না কেন। আবার নির্বাচনের জন্য সরকারের সঙ্গে আঁতাত করেছে, সরকারের ইচ্ছায় তাদের সঙ্গে মিটিং করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা করেছে বিএনপির এক নেতা। শুধুমাত্র তিনি কীভাবে জামিন পেলেন। সকালে জামিন, বিকালে মুক্তি, পরদিন আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেন। এমনভাবে যখন রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করা হয়, চরম নির্যাতন চালানো হয় তখন আন-পপুলার রুলার অনেক বছর ক্ষমতায় থাকতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যে তথা সিরিয়ার সবচেয়ে অজনপ্রিয় একজন নেতা বাশার আল আসাদ একটি দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। একটি সম্পদশালী দেশকে ভিখারী দেশে পরিণত করেছে। রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে যদি নির্মমতম হয় সর্বাত্মকভাবে- যেকোনো মূল্যে দেশ ধ্বংস হয়ে যাক, দেশের মানুষ ভোট দিতে না পারুক, অর্থনীতি বিপর্যস্ত হোক, বিদেশিরা বিভিন্ন ধরনের সুযোগ পাক, সকল কিছুর বিনিময়ে হলেও যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকার আচরণ বাংলাদেশে তো আমরা আগে কোনো সরকারের মধ্যে দেখিনি। এরশাদের বিরুদ্ধে এরচেয়েও কম আন্দোলনে এরশাদ ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছেন। ১৯৯৬ সালে যখন বিএনপি’র বিরুদ্ধেও আন্দোলন হয়েছে, বিএনপি ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছে। এই সরকার যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকার জন্য রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করছে। দলের ক্যাডারদেরকে ব্যবহার করছে। এটার বিপক্ষে অনেকেই বলেন, বিএনপি তো কিছুই করতে পারলো না। এত মানুষ তাদের পক্ষে। আমি বলবো বিএনপি কী করতে পারতো? বিএনপি যুদ্ধ করবে। তারা তো যুদ্ধ করার দল না। তারা রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হওয়ার দল। কেউ কেউ মনে করেন- হয়তো গত ২৮শে অক্টোবর সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারগ্যাস এটার মধ্যদিয়েও বিএনপি’র সেখানে থাকা উচিত ছিল। সে রকম থাকলে তো অনেক লোক মারা যেত। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি হতো। কেউ কেউ বলবে, হয়তো বিএনপি’র থাকা উচিত ছিল। আমি জানি না; কিন্তু আমি মনে করি না এত সর্বাত্মকভাবে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহারের পর সেটার বিরুদ্ধে টিকে থাকার মতো রাজনৈতিক উইং বিএনপি’র আছে। বিএনপি তো আর ৭৪-৭৫ সালের জাসদ না। বিএনপি তো জাসদের তৈরি করা গণবাহিনীর কোনো দল না। তারা কোনো মৌলবাদী দলের মতো না- যেকোনো পরিস্থিতিতে বিরোধিতা করবে। বিএনপি রাজনৈতিক অধিকারকে ব্যবহার করে গণতন্ত্র কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়- তাই করছে। সেটা করে এই রাষ্ট্রীয় শক্তির বিরুদ্ধে কোনো রকম নিজের মতো করে সাজানো শক্তির বিরুদ্ধে বিএনপি’র আসলে কতোটুকু করার ছিল জানি না। তবে বিএনপি হয়তো অন্যান্য দলের সঙ্গে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধভাবে আলোচনা ও চিন্তা করতে পারতো।

আন্তর্জাতিক শক্তির যে অংশ বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে বক্তব্য রেখে আসছিল তারা কি শেষপর্যন্ত কোনো শক্ত ভূমিকা রাখতে পেরেছে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক শক্তি বলতে এখানে ভারত নগ্নভাবে সরকারের পক্ষ নিয়েছে। চায়না-রাশিয়া সরকারের পক্ষ নিয়েছে। তারা যখন সরকারের পক্ষে কথা বলেন তখন সরকারের লোকজন বলেন না, বিদেশিরা ইন্টারফেয়ার করছেন। ইউরোপ-আমেরিকা বক্তব্য দিলে বলেন ইন্টারফেয়ার করছেন। এখন বিদেশি শক্তি বলতে ভারত সরাসরি সরকারের পক্ষে রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয় ভারত যেন আমাদেরকে সাহায্য করেন। আমেরিকার যে ভূমিকা সেটা ব্যক্তিগতভাবে মনে হচ্ছে তারা যেভাবে কথা বলছিল সেখান থেকে অবশ্যই আমরা একটি টোন ডাউন হতে দেখছি। এটা কেন করছে আমরা জানি না। ইউরোপ কখনোই আমেরিকার মতো সরব ছিল না। বিদেশি যারা আছেন তাদের কাছে প্রথম বিবেচ্য বিষয় নির্বাচন। গুড-গভর্নেন্স, মানবাধিকার, এগুলো পরের বিবেচ্য বিষয়। আমি কখনো চাইও না আমেরিকা কিংবা ইউরোপের চাপে বাংলাদেশ সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। আমি সবসময় ব্যক্তিগতভাবে চাই আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো যেন সবসময় আলাপ আলোচনা করেই এটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করেন। বিদেশিরা এখানে বড় চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বড় নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। এটার জন্য দেশ অর্থনৈতিকভাবে ভুক্তভোগী হতে পারে। ভুক্তভোগী হবে তো সাধারণ মানুষ। যারা হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করে জমিয়েছে তাদের কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু যার ১০ হাজার টাকা আছে সেটা যদি ৫ হাজার টাকায় পরিণত হয় তার কী অবস্থা হবে। গার্মেন্টসের কর্মীদের চাকরি চলে গেলে কী অবস্থা হবে। মালিকদের কিছুই হবে না। অতএব, সাধারণ মানুষ ভুগবে। সুতরাং কোনোভাবেই চাই না বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আসুক। এটা যদি হয় সেটার দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে সরকারের। সরকার বলার চেষ্টা করবে বিএনপি, আমেরিকা, গণমাধ্যম দায়ী। কিন্তু এটা প্রকৃতপক্ষে সরকারের দায়-দায়িত্ব। তারা যেভাবে ২৮শে অক্টোবার শুধু নির্বাচন না রাজনৈতিক মাঠ থেকে বিএনপিকে বিতাড়িত করেছেন, জেলে পুরেছেন এটা তো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। এবং নির্বাচনের পর যদি কোনো অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসে এবং বাংলাদেশের মানুষ সাফার করেন অবশ্যই এটার দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে সরকারের।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেভাবে সরকার প্রশাসন এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানকে সাজিয়েছেন, যেভাবে গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরতে পারছেন তাতে সরকার আগামী আরও ৫ বছর ক্ষমতায় থাকলে আমি অবাক হবো না। আমার ধারণা এই নির্বাচনের পর দেখবেন বাংলাদেশে এখন যে স্বাধীন সংবাদপত্র আছে সরকারের পক্ষ থেকে এমন চাপ সৃষ্টি করা হবে হয় পত্রিকাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে অন্যথায় সম্পাদক পরিবর্তন করতে হবে। অথবা সম্পাদকীয় নীতি পুরোপুরি পরিবর্তন করতে হবে। বিন্দুমাত্র সুযোগ রাখবে না। বাংলাদেশের মানুষের যে সম্ভাবনা ছিল, কষ্ট করার ক্ষমতা রয়েছে, গার্মেন্টস কর্মী, প্রবাসীরা যে কষ্ট করে দেশের জন্য রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন তাতে বাংলাদেশের আসলে দক্ষিণ কোরিয়ার মতো অবস্থা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইতিমধ্যে আমরা উত্তর কোরিয়া হওয়ার পথে যাত্রা করেছি। ২০২৪ সালে এক তরফা নির্বাচনের পর সেই যাত্রাপথটি আরও বেশি শক্তিশালী হবে বলে আমার মনে হয়।

ভোটে আসার শর্তে কারাবন্দি বিএনপি নেতাদের একরাতে মুক্তি দেয়ার বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের বক্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্যে আমি বিস্মিত হইনি। আমি তার বক্তব্যে পুরোপুরি একমত। সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য শুধু পুলিশ বা প্রশাসনকে না, বিচার ব্যবস্থাকেও ব্যবহার করছে। বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করছে। বিএনপি’র যে দুই নেতার একজন নৌকাতে আসছেন তিনি রাতারাতি জামিন পেয়ে যাচ্ছেন। এখানে কি হচ্ছে, জামিন হচ্ছে কি হচ্ছে না, মুক্তি পাবে কি পাবে না, এটা আদালত কর্তৃক কতোটা নির্ধারিত হচ্ছে আর সরকার কর্তৃক কতোটা সেটা কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট।

বর্তমান পরিস্থিতিতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অবস্থান মূল্যায়ন করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু এখন সিভিল সোসাইটির চারটি অংশ দেখতে পাই। একটি হচ্ছে ঠিক বিএনপি’র ভাষায় কথা বলেন। দ্বিতীয়টি হচ্ছে মোটামুটি স্বাধীনভাবে কথা বলার চেষ্টা করেন। আরেকটি অংশ হচ্ছে আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের পক্ষে যারা কথা বলেন তাদেরকে আবার গণমাধ্যম বিশিষ্ট নাগরিক হিসেবে উপস্থাপন করেন। আর বিএনপি’র পক্ষে যারা কথা বলেন সবসময় তাদেরকে বিএনপিপন্থি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। আওয়ামীপন্থি সুশীল সমাজের একটি বিশাল অংশ কথা বলছেন যাদের একাংশ চূড়ান্তভাবে আওয়ামী লীগার। কিন্তু আগে যারা স্বাধীনভাবে কথা বলতেন যত স্বাধীনচেতা কণ্ঠ ছিল তারা সুশাসন মানবাধিকারের ব্যত্যয় ঘটলে সমকণ্ঠে কথা বলতেন। এখন কিন্তু চুপ হয়ে গেছেন। তারা কেন চুপ হয়ে গেছেন? বুদ্ধিজীবী, সুশাসনকর্মী, মানবাধিকারকর্মী সারা দেশজুড়ে কর্মসূচি করে বেড়াতেন। তারা কেন চুপ হয়ে আছেন প্রশ্ন করেন তাদের? একাংশ রয়েছে ভয়ে। আরেকাংশ সিভিল সোসাইটি রয়েছেন তাদের কিছু নিজস্ব প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারা মনে করেন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যদি বৈদেশিক অনুদান বন্ধ করে দেয় সেই ভয় পান। মামলা দিবেন। নানান রকম হয়রানির চেষ্টা করবে। আরেকাংশ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন। দায়িত্ব পান। ব্যবসা পান। বিদেশে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সফরের সুযোগ পান। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন পুরস্কার পান। লোভে পড়ে গেছেন। এগুলো দুঃখজনক। তারপরও আমি মনে করি সিভিল সোসাইটির যে স্বাধীন কণ্ঠ বা ধারা একদম নেই সেটা বলবো না। এখনো কিছু মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলার চেষ্টা করেন। জানি না ২০২৪ সালের পর এই শক্তিও কতোটুকু থাকবে!

আপনার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে আপনি বলেছেন যে, এই নির্বাচনে আসন হচ্ছে ৩০০, প্রার্থী হচ্ছেন ৩ হাজার আর ভোটার হচ্ছে ১ জন। আপনার এই স্ট্যাটাসটি খুব আলোচিত হচ্ছে। আপনি ভোটার একজন বলতে কি বুঝিয়েছেন? উত্তরে তিনি বলেন, কেন বলেছি কারণ এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কারা প্রার্থী হবেন সেটা মোটামুটি একজনই ঠিক করছেন। তার ঘোষণার কারণেই ডামি প্রার্থীরা দাঁড়াতে পেরেছেন। আবার সো-কল্ড বিরোধী বা অনুগত দল সরকারের কাছ থেকে আশ্বাস চাচ্ছেন কতোগুলো আসনে তাদের ছাড় দেয়া হবে। সকল কিছু একজনই নির্ধারণ করছেন। এই নির্বাচনে কারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে সরকারি দল থেকে কারা ডামি প্রার্থী হতে পারবে বিরোধী দল থেকে কাদের ছাড় দেয়া হবে সকল কিছু কিন্তু একজনই নির্ধারণ করছেন। একজনের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়ে যাচ্ছে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ায়। এবং জনগণ যে স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে বাছাই করতে পারবে সেই সুযোগটিই নেই।

তিনি বলেন, আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের মানুষ। বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনভাবে ঠিক করবে কে ক্ষমতায় থাকবে। আপনি আমি চাওয়ার কে? আপনারও একটি ভোট রাস্তার আশ্রয়হীন মানুষ যিনি আছেন তারও এক ভোট। প্রধানমন্ত্রী আর রাস্তার আশ্রয়হীন মানুষ ইক্যুয়াল। এই ইক্যুয়ালিটিটা আর বাংলাদেশে নেই।

মানব জমিন