বিএনপি ঢাকা অবরোধ দিতে পারে, নেতা–কর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশ কাদেরের

বিএনপি ১৮ অক্টোবরের সমাবেশ থেকে ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি দিতে পারে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তাদের এ কর্মসূচি মোকাবিলায় যুবলীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা–কর্মীদের ওই দিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

আজ সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে যুবলীগ আয়োজিত যুব সমাবেশে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘অবরোধ করলে বিএনপি অবরোধ হয়ে যাবে। এখন  চুরি করে ঢুকছ (ঢাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের আগমন)? এরপরে পালাবার পথ পাবা না। শাপলা চত্বর থেকে শেষ রাতে পালায় গেল না? আরও করুণ পরিণতি হবে বিএনপির।’

বলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দীর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান প্রমুখ।

বেলা সাড়ে তিনটার পর যুবলীগের সমাবেশ শুরু হয়। কিন্তু বেলা একটার পর থেকে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড, থানা এবং গাজীপুর জেলা ও মহানগর থেকে যুবলীগের নেতা–কর্মীরা আসতে শুরু করেন। বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে শুরু করে ১০ মিনিটের বেশি সময় বক্তব্য দেন প্রধান অতিথি ওবায়দুল কাদের। তিনি বিএনপির ১৮ অক্টোবরের কর্মসূচি ও দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের সমালোচনা করেন।

যুবলীগের নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ঢাকা সিটির খবর রাখেন? ১৮ (অক্টোবর) তারিখ সামনে রেখে মির্জা ফখরুল…বিএনপি ডিসেম্বর মাসের (২০২২) মতো তাদের নেতা-কর্মীদের সারা বাংলাদেশ থেকে ঢাকায় আনতে শুরু করেছে। হোটেলগুলোতে সিট খালি নাই। সব সিট তারা বুক করে ফেলেছে। ঢাকা শহরে নতুন বাড়ি হচ্ছে, খালি ফ্ল্যাট আছে, সব তারা বুক করে ফেলেছে।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আবার গত বছরের ডিসেম্বর মাসের মতো সরকার পতনের স্বপ্ন দেখছেন বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘ফখরুলের আন্দোলন, বিএনপির আন্দোলন ভুয়া। বিএনপিই হচ্ছে ভুয়া। এরা ঢাকা শহরে লোক জমায়েত করবে, অবরোধ করবে, এই শহরে সচিবালয় থেকে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা অবরোধ করার কর্মসূচি তারা ১৮ তারিখে ঘোষণা করবে। তারা সেই ষড়যন্ত্র করছে।’

১৮ অক্টোবর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে জমায়েত হওয়ার নির্দেশনা দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমরা জমায়েত হব। এখন প্রবেশ করছ (বিএনপি) চুরি করে। চুরি করে এসে উঠছ আত্মীয়স্বজনের বাসায়। ফখরুল বলেছে অতিরিক্ত কাপড় আনতে, ক্ষমতা দখল করার জন্য, তো আমরা কি দাঁড়ায়া ললিপপ খাব? যুবলীগের যুবকেরা, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ আমরাও প্রস্তুত আছি।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, তাঁরাও সেদিন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আন্দোলনে নবতর পথযাত্রার সূচনা করবেন। আন্দোলনের মিছিল বয়ে নিয়ে যাবেন বিজয়ের বন্দরে।

শেখ হাসিনা মাথা নত করেন না মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। ফখরুল সাহস পাচ্ছে বিদেশ থেকে। আমরা সাহস পাচ্ছি বিদেশি সমীক্ষায় এসেছে, আগামী নির্বাচনে শতকরা ৭০ ভাগ লোক শেখ হাসিনার পক্ষে ভোট দেবে। আমরা বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন থেকে সাহস পাচ্ছি, শেখ হাসিনার মতো সাহসী নেতার নেতৃত্বে।’

বিএনপির আন্দোলনে টাকার ছড়াছড়ি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘টাকাপয়সার নতুন চালান আসছে। মালপানি ভালোই। গত ডিসেম্বরের চেয়েও সরবরাহ এখন একটু বেশি। টাকার বস্তার ওপর বসে আছে। ফখরুল টাকা দিয়ে আন্দোলন (ডিসেম্বর, ২০২২) হয়নি। ওই টাকার আন্দোলন গোলাপবাগের গরুর হাটের গর্তের মধ্যে চলে গেছে। এখন আবার আন্দোলন?’

পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন বিএনপিকে আন্দোলনের সাহস জোগাচ্ছে–বিএনপির মহাসচিবের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমরা এটা জানি না। এ খবর হাচা, না মিছা? মিথ্যা কথা আর কত বলবা ফখরুল? পশ্চিমা বিশ্বের যারা বাংলাদেশে এসেছে, যারা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে, বিদেশে বলেছে, দেশে বলেছে, তারা বলেছে, বাংলাদেশের নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। এ কথা আমেরিকাও বলেছে, এ কথা ইউরোপও বলে দিয়েছে। ফখরুল কোত্থেকে হাওয়া থেকে মিছা, আজগুবি খবর..।’

বিএনপিকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ফাউল করলেই লাল কার্ড। লাল কার্ড তৈয়ার হয়ে আছে। আওয়ামী লীগের অ্যাকশন, যুবলীগের অ্যাকশন…ডাইরেক্ট অ্যাকশন। খেলা হবে। ডাইরেক্ট অ্যাকশন চলবে।’

প্রথম আলো