বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে ঢাকার প্রবেশমুখগুলোয় সতর্ক অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিএনপি যেসব এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, সেসব এলাকায় জলকামান ও সাঁজোয়া যান নিয়ে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন।
আজ শনিবার সকাল সোয়া ১০টায় দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শনির আখড়া বাজার এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন। জলকামান ও সাঁজোয়া যান নিয়ে পুলিশের পাশাপাশি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও আনসার বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছেন।
আওয়ামী লীগ–বিএনপি: সংঘাতের শঙ্কা বাড়ছেই
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দনিয়া কলেজের সামনের সড়ক ধরে রায়েরবাগ পর্যন্ত টহল দিচ্ছেন। দনিয়া কলেজের সামনে আওয়ামী লীগের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীকে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। তবে এই এলাকায় বিএনপির কোনো নেতা-কর্মীর অবস্থান দেখা যায়নি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক অবস্থানের একই চিত্র দেখা গেছে গাবতলী, নয়াবাজার ও আবদুল্লাহপুর এলাকাতেও। উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা জানান, যারাই সড়ক বন্ধের চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আবদুল্লাহপুর মোড়ে দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাথায় অবস্থান করছে পুলিশ। যানবাহন তল্লাশির পাশাপাশি সাধারণ পথচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে তারা। তবে এখানে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কাউকে দেখা যায়নি।
ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-আশুলিয়া সড়ক এসে যুক্ত হয়েছে আবদুল্লাহপুর মোড়ে। এর মধ্যে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে গাজীপুর, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলাসহ আশপাশের এলাকা থেকে ঢাকায় প্রবেশ করেন মানুষ। ঢাকা-আশুলিয়া সড়ক হয়ে টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জসহ রাজশাহী বিভাগের একাধিক জেলার লোকজন রাজধানীতে প্রবেশ করেন।
আজ সকাল ১০টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত কয়েক দিনের তুলনায় পুলিশের উপস্থিতি বেড়েছে। আবদুল্লাহপুর মোড়ে সড়ক ও সড়কের পাশে অবস্থান করছেন ৫০ থেকে ৬০ জন পুলিশ সদস্য। কোনো যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল বা কোনো পথচারীকে সন্দেহ হলেই তাঁরা গতিরোধ করে তল্লাশি চালাচ্ছেন।
গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ঢাকার বিমানবন্দরের দিকে যাচ্ছিলেন আকরাম হোসেন। বাসে উঠে পুলিশ তাঁর পুরো ব্যাগ তল্লাশি করেন। আকরাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ব্যাগে কিছু কাপড়চোপড় ছাড়া আর কিছু নেই। আমি তাদের (পুলিশ) বলেছি। তা–ও সন্দেহবশত পুরো ব্যাগ তল্লাশি করেছে।। কিন্ত শেষ পর্যন্ত কিছুই পায়নি। অযথাই হয়রানি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের তল্লাশিচৌকির ঊর্ধ্বতন কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিদর্শক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কেউ যেন কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা করার সুযোগ না পায়, সে জন্যই কড়াকড়ি অবস্থা আরোপ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও কঠোর অবস্থানে যাবে পুলিশ।
ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখে আজ বেলা ১১টা থেকে ৫ ঘণ্টার ‘অবস্থান’ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করা হবে। গাবতলী, উত্তরা, নয়াবাজার ইউসুফ মার্কেট ও শনির আখড়া এলাকায় এই অবস্থান কর্মসূচি হবে।
গতকাল সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের পক্ষ থেকে প্রথমে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, শনিবার (আজ) ঢাকার প্রবেশমুখগুলোয় ‘শান্তি সমাবেশ’ করবে তারা। পরে গভীর রাতে কর্মসূচি পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো আজ ঢাকায় ‘সতর্ক অবস্থানে’ থাকবে। এ ছাড়া ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতেও নেতা-কর্মীরা ‘সতর্ক পাহারায়’ থাকবেন।