বিএনপির সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে গত ফেব্রুয়ারিতে যুগপৎ আন্দোলন থেকে সরে যাওয়া জামায়াতে ইসলামী। এ জন্য অনুমতি পাবে না জেনেও ২৮ অক্টোবর রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ ডেকেছে দলটি। জামায়াতের নেতারা সমকালকে বলেছেন, গ্রেপ্তারের ঝুঁকি নিয়ে হলেও ২৮ অক্টোবর মাঠে থাকার চেষ্টা করবেন তারা।
পুলিশের অনুমতি না মেলায় গত কয়েক মাসে একাধিকবার কর্মসূচি ডেকেও মাঠে নামেনি জামায়াত। বৃহস্পতিবার জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমান অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবিতে শনিবার শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ হবে। তিনি বলেন, ‘মহাসমাবেশে সুশৃঙ্খলভাবে সমবেত হয়ে এক দফা দাবির আন্দোলন বেগবান করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
জামায়াত এই প্রথমবার ‘এক দফা আন্দোলন’ শব্দের ব্যবহার করল। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে গত ২৮ জুলাই থেকে সমমনাদের নিয়ে আন্দোলন করছে বিএনপি। বিএনপি বিপদে পাশে দাঁড়ায় না– অভিযোগ তুলে জামায়াত এ আন্দোলন থেকে দূরে ছিল। তবে ফেব্রুয়ারির পর এই প্রথম বিএনপির কর্মসূচির দিনে কর্মসূচি দিল দলটি।
গত বছর ডিসেম্বরে সমঝোতার মাধ্যমে দুই যুগের জোট ভাঙে বিএনপি ও জামায়াত। এর পর ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে নামে বিএনপি ও জামায়াত। এর তিন দিন পর ১৩ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। বিএনপি এর প্রতিবাদ না করায় ক্ষুব্ধ হয় জামায়াত। সেই সময়ে বিএনপি ও অন্যান্য সমমনা দল কর্মসূচি পালন করতে পারলেও জামায়াতকে অনুমতি দেয়নি পুলিশ। অনুমতি ছাড়াই যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীতে মিছিল করে জামায়াত। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শতাধিক নেতাকর্মী আহত ও অর্ধশত গ্রেপ্তার হন। বিএনপি ওই ঘটনারও নিন্দা না করায় জামায়াত যুগপৎ আন্দোলন থেকে সরে যায়।
গত আগস্টে দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের প্রকাশ্যেই জানান, বিএনপির আচরণে জামায়াত নেতাকর্মীরা আহত হয়েছেন। তিনি তখন বলেন, দু’দল সরকার পতনের দাবিতে একই পথে থাকলে আবারও এক হতে পারে।
জামায়াত সূত্র জানায়, বিএনপির সঙ্গে জোট বা যুগপৎ আন্দোলন শুরু না হলেও আলোচনার মাধ্যমে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ ডাকা হয়েছে। দলটির এক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সমকালকে বলেছেন, ঐক্যবদ্ধভাবে না হলেও ২৮ অক্টোবর নিয়ে দু’দলের মধ্যে আলাপ রয়েছে। বিএনপিকে জানিয়ে ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। অনুমতি না পেলে মহাসমাবেশের পরিবর্তে অন্য কোনো কর্মসূচি পৃথকভাবে করার চেষ্টা হবে।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ দিনে আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার আন্দোলনে জামায়াত-শিবিরের ছয় নেতাকর্মী নিহত হন। ওই ঘটনার স্মরণে জামায়াত প্রতি বছর ২৮ অক্টোবর দোয়া-আলোচনা সভার মতো কর্মসূচি দিয়ে থাকে। তবে আগামী নির্বাচনের তপশিলের সপ্তাহ তিনেক আগে এবার ডেকেছে মহাসমাবেশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশ কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, নিবন্ধন না থাকায় জামায়াতকে কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া হবে না। তবে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম সমকালকে বলেছেন, জামায়াত নেতাকর্মীরা ২৮ অক্টোবর মতিঝিলে যাবে। পুলিশ যদি অন্যায়ভাবে বাধা দেয়, হামলা করে, গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়– তা দেশবাসী দেখবে।
যুদ্ধাপরাধের বিচারে এক যুগ কোণঠাসা জামায়াত গত ১০ জুন প্রায় এক দশক পর পুলিশের অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করেছিল ঢাকায়। এর পর সরকারের সঙ্গে জামায়াতের সমঝোতার গুঞ্জন তৈরি হয়। তবে পরের মাসগুলোতে বারবার আবেদন করেও কর্মসূচির অনুমতি পায়নি দলটি। জামায়াত সূত্রের দাবি, ভারতের আপত্তির কারণে সরকার ও পুলিশ এমন কঠোর হয়েছে।
দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, পক্ষপাতদুষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন– ‘জামায়াতকে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না।’ পুলিশের দায়িত্ব হলো শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা, বাধা দেওয়া নয়। এ বক্তব্য অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক, এখতিয়ারবহির্ভূত ও বেআইনি।
নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি দাবি করে মুজিবুর রহমান বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। কিন্তু সরকার গণতন্ত্রকামী মানুষের দাবিকে পাশ কাটিয়ে একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দলীয় বিবেচনায় প্রশাসন ঢেলে সাজিয়েছে। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা না থাকার দোহাই দিয়ে সরকার মূলত নিজেদের ছকে আরেকটি সাজানো নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। সংসদ ভেঙে দিয়ে সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল।
সূত্র : সমকাল