বিএনপির আন্দোলন কোন পথে যাচ্ছে?

 আমার দেশ
২৬ এপ্রিল ২০২৩

১০ দফা দাবিতে চুড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

১০ দফা দাবিতে চুড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিনিধি

সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে চুড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্যান্য রাজনৈতিক দল গুলোকে নিয়েই চুড়ান্ত আন্দোলনে মাঠে নামতে প্রস্তুতি চলছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত দিনগুলোর ধারাবাহিকতায় পহেলা মে-তে রাজধানীতে বড় শ্রমিক সমাবেশের মাধ্যমে আন্দোলনকে মাঠে গড়াতে চায় দলটি। এজন্য আগামী পহেলা মে ব্যাপক সমাবেশের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

তবে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে দলটি। প্রথমে অবস্থান, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অথবা মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। ধাপে ধাপে এসব কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনের গতি রোডমার্চ, লংমার্চের মতো কঠোর কর্মসূচিতে যেতে চায়। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারকে আর সময় দিতে চায় না বিএনপি। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না-এটা দলীয় সিদ্ধান্ত।

বিএনপির আন্দোলনের পরবর্তী গন্তব্য প্রসঙ্গে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হরহামেশাই বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদকে বিলুপ্ত করতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ক্ষমতা দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তারপর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি মেনে নেওয়া না হলে যা করা দরকার জনগণ তাই করবে। আন্দোলন চলছে, সামনে আরও কর্মসূচি আসছে। আন্দোলন আরও বেগবান হবে। সরকারের আচরণেই নির্ভর করবে বিএনপির আন্দোলনের ধরন কী হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আন্দোলন কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয়, আবার কখনো কখনো স্বল্প সময়ের মধ্যে বিজয় লাভ করে। যেমন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, মাত্র নয় মাসের মধ্যে দেশ স্বাধীন হয়েছে। আবার ভিয়েতনামের যুদ্ধ অনেক দিন চলেছে, দীর্ঘদিন পর তারা স্বাধীন হয়েছে। কোন সরকার কবে যাবে, সেটা নির্ধারিত নয়; এটা নিশ্চিত যে ফ্যাসিবাদের পতন অনিবার্য। এটা করবে দেশের জনগণ। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই সরকারের বিদায় ঘটানো হবে।

সূত্র মতে, নতুন কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও আলোচনা চলছে দলটির ভেতরে। সিটি নির্বাচনকে সরকারের ফাঁদ বলে মনে করেন নেতারা। এসব সিটিতে দলীয় পদে থেকে কেউ মেয়র পদে নির্বাচন করলে বহিষ্কার করা হবে বলে কঠোর বার্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়াও কর্মসূচি দিলে এসব

সিটিতে তা জোরালোভাবে পালন করার বিষয়ে একমত হন নেতারা এছাড়াও যুগপৎ আন্দোলনের জন্য শিগগিরই অভিন্ন দাবিতে ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়।

দলটির নেতারা মনে করেন, বিএনপির আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। এবার বিএনপিকে পেছনে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই। ‘ডু অর ডাই’ নীতি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাই আগামী কুরবানি ঈদের আগেই ‘অলআউট’ কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে ধারণ করেন মধ্যম সারির নেতারা।

এদিকে শ্রমিক সমাবেশ ও র‍্যালি সফল করতে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা।

এ সময় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকও উপস্থিত ছিলেন। সভায় বিএনপি মহাসচিব শ্রমিক সমাবেশ সফল করতে শ্রমিক দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।