.চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের ব্যয়ে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করে বাজেট সংশোধন হচ্ছে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক মন্দাভাব শিগগির কাটছে না– এমনটি ধরে নিয়ে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও সংকোচনমূলক বাজেট প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদিকে চলমান ডলার সংকট কাটিয়ে উঠতে অর্থনীতিবিদরা মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিলেও এখনই তা কার্যকরের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে মনে করছে সরকার। তাই আপাতত বাজারভিত্তিক হচ্ছে না মুদ্রাবিনিময় হার।
গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার-সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। সার্বিক অর্থনীতি ও বাজেট ব্যবস্থাপনা মূল্যায়নে চলতি অর্থবছর প্রথমবার এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মুদ্রা সরবরাহ ও লেনদেন ভারসাম্যের ওপর সরকারের অর্থনৈতিক নীতি-কৌশলের প্রভাবও পর্যালোচনা করা হয়। সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যুক্ত ছিলেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকারি ব্যয় বাড়ানোর সুযোগ নেই। এ কারণেই চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দিকে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে নীতি সুদহার বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং মুদ্রার সরবরাহ কমানো হচ্ছে। একই সঙ্গে সরকার নতুন গাড়ি কেনা, ভূমি অধিগ্রহণ বন্ধসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যয় সাশ্রয় নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। তা ছাড়া পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর জন্য টিসিবি এবং ওএমএস কার্যক্রম এরই মধ্যে বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে বাজার মনিটরিং বাড়ানো হচ্ছে। এসব কার্যক্রম অব্যাহত রেখে চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশের মধ্যে রাখতে চায় সরকার। যদিও মূল বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ছিল।
ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব উঠেছিল। কিন্তু এখনই পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না বলে গতকালের সভায় একমত হন সবাই। সভায় বলা হয়, এরই মধ্যে যেটুকু টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে, তাতে সরকারের দায় বিশেষ করে বিদেশি ঋণের দায় অনেক বেড়ে গেছে। আরও অবমূল্যায়ন হলে এ দায় আরও বাড়ার পাশাপাশি আমদানি পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সার্বিক পরিস্থিতির কারণে আগামী বাজেটে এডিপির আকার বড় হবে না। এমনকি চলতি বাজেটের চেয়েও এডিপিতে ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা কম রাখা হতে পারে। চলতি বাজেটে এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা।
সমকাল