বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার শান্তিরক্ষীদের নিয়ে ডয়চে ভেলের তথ্যচিত্র নিয়ে বললেন জাতিসংঘের মুখপাত্র

জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিকছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সেসব ব্যক্তিকে মোতায়েন করে, যাঁরা সর্বোচ্চ দক্ষতা ও সততার নীতি বজায় রেখে কাজ করতে পারেন। এর মধ্যে রয়েছে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তা রক্ষার অঙ্গীকার। শান্তিরক্ষী মোতায়েনের আগে তাঁদের জাতিসংঘের নির্ধারণ করে দেওয়া মানবাধিকার রেকর্ড যাচাই–বাছাই করে দেখা হয়।

গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। সম্প্রতি জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক তথ্যচিত্রে বলা হয়, নির্যাতন ও হত্যার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। স্টিফেন ডুজারিকের কাছে এই প্রসঙ্গে প্রশ্নটি তোলা হয়।

সাংবাদিক জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্রের কাছে জানতে চান, ডয়চে ভেলের এক অনুসন্ধানী তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে—বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের মতো ভয়াবহ সব মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। বিষয়টি সম্পর্কে জাতিসংঘের মহাসচিব কি অবগত আছেন?

জবাবে স্টিফেন ডুজারিক বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা ওই তথ্যচিত্রটি দেখেছি। আর আপনি জানেন যে শান্তিরক্ষাবিষয়ক দপ্তরে আমাদের সহকর্মীরা এ নিয়ে কাজ করছেন এবং তথ্যচিত্রের নির্মাতাদের কাছে এ বিষয়ে একটি বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা আবারও খুব সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখানো এবং তা রক্ষার অঙ্গীকারকে অন্তর্ভুক্ত করে দক্ষতা ও সততার সর্বোচ্চ যে মান নির্ধারণ করা হয়েছে, তা মেনে (জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে) কর্মী মোতায়েনের বিষয়ে জাতিসংঘ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ ছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংশ্লিষ্টতা যাচাই–বাছাইয়ের যে নীতি রয়েছে, তার ভিত্তিতে নিয়মনীতিও গড়ে তুলেছে জাতিসংঘ।’

ওই সাংবাদিক আরেক প্রশ্নে জানতে চান, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে যেসব দেশ কর্মী পাঠাচ্ছে, তারাই ওই কর্মীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি যাচাই–বাছাই করছে। তবে যখন কোনো দেশ বা সরকার নিজেই মানবাধিকার লঙ্ঘন করে, তখন তাদের পাঠানো কর্মীদের মধ্যে কে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত, আর কে নয়—তা কীভাবে শনাক্ত করা যাবে?

জবাবে জাতিসংঘের মুখপাত্র বলেন, ‘দেখুন, এই যাচাই–বাছাই পদ্ধতির তিনটি অংশ রয়েছে। একটি অংশে শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেওয়া কর্মীরা ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করেন—মানবাধিকার লঙ্ঘনে তাঁদের সংশ্লিষ্টতা নেই। আরেক ধাপে যে দেশ থেকে তাঁদের পাঠানো হয়, তারা একই ধরনের ঘোষণা দিয়ে থাকে। আর অবশ্যই জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস থেকেও বিষয়টি যাচাই–বাছাই করে দেখা হয়।’

স্টিফেন ডুজারিক আরও বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে আমাদের জানানো হয়েছে, শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়েন করা হাতে গোনা কয়েকটি দেশের উর্দিধারী কর্মকর্তারা অতীতে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। এমন কোনো ঘটনা ঘটলে শান্তিরক্ষার কাজে নিয়োজিত আমাদের সহকর্মীরা যথাযথ পদক্ষেপ নেন। যাচাই–বাছাইয়ের নীতি এবং সেনা সরবরাহকারী দেশের সঙ্গে আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে অনেক ক্ষেত্রে উর্দিধারী কর্মকর্তাদের শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়েন না–ও করা হতে পারে—এমনকি তাঁদের প্রত্যাহার করতে পারে জাতিসংঘ।’

prothom alo