বাংলাদেশে গুম নিয়ে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের বিবৃতি

২০২২-১০-০৯

দৃকনিউজ প্রতিবেদন

[গত ৭ অক্টোবর ২০২২ এশীয় হিউম্যান রাইটস কমিশন বাংলাদেশে গুম বিষয়ে কাজ করছেন এমন স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ও সংস্থাগুলোকে নিয়ে ঘৃনা ও মিথ্যা অপবাদ ছড়াবার বিরুদ্ধে এই বিবৃতিটি প্রদান করে। বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য আমরা এটি বাংলায় অনুবাদ করে দিচ্ছি]

বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই জাতিসংঘের গুম প্রতিরোধ ওয়ার্কিং গ্রুপ (Working Group on Enforced or Involuntary Disappearances বা WGEID) এবং মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো বন্ধ করতে হবে।

এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি) বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের সফরের পরেও গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ মানবাধিকারের ব্যাপক লঙ্ঘন অব্যাহত থাকায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা হিসেবে সাব্যস্ত ঘটনাগুলোকে খতিয়ে দেখার জন্য স্বাধীন তদন্ত প্রক্রিয়া চালু করার বদলে সরকার ভুক্তভোগীদের পরিবারের প্রতি ভয়ভীতি প্রদর্শন ও নিগ্রহ তীব্রতর করেছে। কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে মানবাধিকার রক্ষাকারীদের ওপর হয়রানি বন্ধ করা।

এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি) বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের সফরের পরেও গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ মানবাধিকারের ব্যাপক লঙ্ঘন অব্যাহত থাকায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা হিসেবে সাব্যস্ত ঘটনাগুলোকে খতিয়ে দেখার জন্য স্বাধীন তদন্ত প্রক্রিয়া চালু করার বদলে সরকার ভুক্তভোগীদের পরিবারের প্রতি ভয়ভীতি প্রদর্শন ও নিগ্রহ তীব্রতর করেছে। কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে মানবাধিকার রক্ষাকারীদের ওপর হয়রানি বন্ধ করা

জাতিসঙ্ঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো:

জাতিসংঘের বিভিন্ন স্বাধীন বিশেষজ্ঞ, বিশেষত গুম প্রতিরোধ গোষ্ঠীর (Working Group on Enforced or Involuntary Disappearances বা WGEID) বিরুদ্ধে গুম বিষয়ে সংস্থাটির অব্যাহত অনুসন্ধিৎসার কারণে সরকারপন্থী গণমাধ্যম এবং সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিভিন্ন মিত্র মিথা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে গুম হওয়া ৭৬ জন ব্যক্তির একটি তালিকার প্রেক্ষিতে একটি ভারতীয় গণমাধ্যমের অনলাইন সংস্করণ ডব্লিউজিইআইডির বিশ্বাসযোগ্যতা বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। প্রতিবেদনটিতে দুজন ভুক্তভোগীর নাম উল্লেখ করা হয়: ১। ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফন্টের (ইউএনএলএফ) ভূতপূর্ব সভাপতি রাজকুমার মেঘেন, যিনি সানায়াইমা রাজকুমার নামেও পরিচিত; এবং ২। কেইথেল্লাকপাম নবচন্দ্র, যিনি চিলহেইবা নামেও পরিচিত। জানা যায় যে, তিনি ইউএনএলএফ এর একজন মেজর।  রাজকুমার মেঘেন সম্বন্ধে ভারতীয় গণমাধ্যমের ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়:

“জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপের মতে, সানায়াইমা রাজকুমার বাংলাদেশে গুম হয়েছেন। ইউএনএলএফ এর এই সভাপতির আসল নাম রাজকুমার মেঘেন (সানায়াইমা তাঁর দলে ব্যবহৃত নাম)। তিনি বিএনপি-জামায়াত এর আমলে সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সরকারের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশে কাজ করেছেন। কিন্তু ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসলে তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে নেপালে আশ্রয় নেন এবং উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের ভারতীয় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালান। এর ফলে বেশ কিছু শীর্ষ নেতা আটক হন, যাঁদেরকে এরপর ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২০১০ সালের ৩০ নভেম্বর নেপাল থেকে দেশে প্রবেশের চেষ্টার সময়ে বিহারের পূর্ব চম্পারান জেলা থেকে তাঁকে আটক করা হয়। “

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে প্রকাশিত ইন্ডিয়া টুডের ঐ একই প্রতিবেদনে কেইথেল্লাকপাম নবচন্দ্র সম্বন্ধে বলা হয়:

“জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রতিবেদনে কেইথেল্লাকপাম নবচন্দ্র ওরফে চিলহেইবাকেও বলা হয়েছে বাংলাদেশে গুম হওয়া ব্যক্তি। নবচন্দ্র ইউএনএলএফ এর সশস্ত্র শাখার একজন “মেজর”। সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী বিএসএফের দাবি, ২০১৫ সালে ডওকির কাছে সিলেট-মেঘালয় সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশের চেষ্টার সময়ে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। মণিপুরের কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী নবচন্দ্রকে বাংলাদেশ পুলিশ ঢাকায় গ্রেফতার করে এবং গোপনে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের কাছে হস্তান্তর করে দেয়। ভারত এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। নবচন্দ্রকে ২০১৫ সালের ১৭ মার্চ মণিপুর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে তাঁর বিচার চলছে। বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের মতে, উত্তর-পূর্ব ভারতের এসব সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান শেখ হাসিনার সন্ত্রাসের প্রতি জিরো টলারেন্স নীতির অংশ।”

ঘৃণা ছড়াতে ভিত্তিহীন তথ্যের ব্যবহার: 

এএইচআরসি সকলের জন্য উন্মুক্ত গণমাধ্যমের এমন কিছু প্রতিবেদনের সন্ধান পেয়েছে, যার তথ্য অনুযায়ী ইন্ডিয়া টুডের রিপোর্টটি ভিত্তিহীন। ১৩ অক্টোবর ২০১০ তারিখে বিবিসি নিউজে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে একজন ‘জ্যেষ্ঠ ভারতীয় কর্মকর্তা’র বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, “ইউএনএলএফ এর নেতা রাজকুমার মেঘেনকে এ মাসের শুরুতে (অক্টোবর ২০১০) বাংলাদেশ পুলিশ আটক করেছে।” বিবিসির ঐ একই প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে বলা হয় যে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের আগে বাংলাদেশ পুলিশ মেঘেনকে ‘আটক’ করেছে।

দুই সপ্তাহ পরে ২৭ অক্টোবর ২০১০ তারিখে বিবিসি নিউজে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিলো “গ্রেফতারকৃত ভারতীয় বিদ্রোহীর পরিবার তথ্য চায়”। মেঘেন রাজকুমারের নাম না জানা ‘পুত্র’ এবং ‘স্ত্রী রাজকুমারী ইবেনমুংশি’র উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলা হয়, “পরিবারটি তিনি (মেঘেন) কোথায় আছেন বা কেমন আছেন সে বিষয়ে কিছুই জানে না এবং তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে অত্যন্ত শঙ্কিত।” মেঘেনের স্ত্রী বিবিসি নিউজকে বলেন, “ভারত বা বাংলাদেশে তাঁর যে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা আছে তার বিষয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের জানা দরকার তিনি বেঁচে আছেন কিনা, সুস্থ আছেন কিনা, এবং আইনের সাহায্যে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ তাঁর আছে কিনা।” ঐ একই প্রতিবেদনে বলা হয়, “ভারতীয় কর্তৃপক্ষ মেঘেন কোথায় কেমন আছেন সে বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি।” প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, “২০০৯ সালে কঠোর দমন শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ বিভিন্ন ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর ৫০ জনেরও বেশি নেতা-কর্মীকে হস্তান্তর করেছে। এছাড়া আরো অনেকেই গ্রেফতার এড়াতে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছেন অথবা সীমান্তে ভারতীয় রক্ষীদের হাতে ধরা পড়েছেন।”

২০১০ সালের ৩ ডিসেম্বর বিবিসি নিউজে “বাংলাদেশে মণিপুর বিদ্রোহীর গোপনে আটক হওয়ার অভিযোগ” শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ভারতের গোয়াহাটির একটি আদালতে দেওয়া রাজকুমার মেঘেনের জবানবন্দি তুলে ধরা হয় এ প্রতিবেদনে। মেঘেন জানান যে, তিনি ২৯ সেপ্টেম্বর (২০১০) ঢাকায় গ্রেফতার হন এবং “ভারতে হস্তান্তর করার আগে তাঁকে দুই মাস বাংলাদেশে গোপনে বন্দি করে রাখা হয়।” এএইচআরসি বিবিসি নিউজের এই প্রতিবেদনে পাওয়া ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহর গোয়াহাটির আদালতে দেওয়া। মেঘানের একটি বক্তব্য তুলে ধরে। মেঘান বলেন, “আমাকে ৬১ দিন গোপন আটকাবস্থায় রাখা হয়েছিলো। মাত্র এ সপ্তাহেই আমাকে ভারতে পাঠানো হয় এবং বিহার প্রদেশে আটক দেখানো হয়।”

২০১০ সালের ২৯ নভেম্বর বিবিসি নিউজে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে রাজকুমার মেঘেন সম্বন্ধে বলা হয়, “যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ভারত ও বাংলাদেশের কাছে ভারতের মণিপুর প্রদেশের একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সম্বন্ধে তথ্য চেয়েছে।”

মণিপুরের ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্টের (ইউএনএলএফ) সশস্ত্র শাখার একজন মেজর হিসেবে পরিচিত কেইথেল্লাকপাম চিলহেইবা ওরফে কে সি নবচন্দ্রের গুমের বিষয়টিও মণিপুরের বিভিন্ন স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইউএনএলএফ এর বিবৃতির বরাত দিয়ে নিশ্চিত করেছে। ইউএনএলএফ এর আনুষ্ঠানিক বিবৃতি সম্বন্ধে গণমাধ্যমে পাওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১১ ফেব্রুয়ারি (২০১০) সকাল ১০টায় চিলহেইবা ঢাকার (বাংলাদেশ) মোহাম্মদপুর থেকে ভারতীয় গোয়েন্দা ও বাংলাদেশ পুলিশের (কালো পোশাকের) [অর্থাৎ র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন] সম্মিলিত দলের হাতে আটক হন।

গুম থেকে সকল মানুষের সুরক্ষার আন্তর্জাতিক বিধিমালার অনুচ্ছেদ ২ অনুযায়ী, “গুম” হলো রাষ্ট্রের চর অথবা রাষ্ট্রের অনুমোদন, সমর্থন ও সম্মতিতে কাজ করা ব্যক্তি কর্তৃক গ্রেফতার, আটক, অপহরণ বা অন্য যেকোনো পন্থায় ব্যক্তির স্বাধীনতা হরণ এবং পরবর্তী সময়ে আটক ব্যক্তির স্বাধীনতা হরণের বিষয়টি অস্বীকার করা অথবা আটক ব্যক্তি কোথায় কেমন আছেন তা গোপন করা, যার ফলে ব্যক্তির আটকের বিষয়টি আইনের আওতার বাইরে চলে যায়।”

“গুম” হলো রাষ্ট্রের চর অথবা রাষ্ট্রের অনুমোদন, সমর্থন ও সম্মতিতে কাজ করা ব্যক্তি কর্তৃক গ্রেফতার, আটক, অপহরণ বা অন্য যেকোনো পন্থায় ব্যক্তির স্বাধীনতা হরণ এবং পরবর্তী সময়ে আটক ব্যক্তির স্বাধীনতা হরণের বিষয়টি অস্বীকার করা অথবা আটক ব্যক্তি কোথায় কেমন আছেন তা গোপন করা, যার ফলে ব্যক্তির আটকের বিষয়টি আইনের আওতার বাইরে চলে যায়।”

ঢাকা থেকে বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক রাজকুমার মেঘেনের অপহরণ ও কেইথেল্লাকপাম চিলহেইবাকে তুলে নিয়ে তাঁদের দুজনকেই ‘গোপন বন্দিশিবিরে’ অন্তরীণ করে রাখা এবং প্রকাশ্যে বা ভুক্তভোগীদের পরিবারকে তাঁদের অবস্থা সম্বন্ধে না জানানোর বিষয়টি আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী নিঃসন্দেহে ‘গুম’ এর ঘটনা।

২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে গুম হওয়া ব্যক্তিদের বিস্তারিত তথ্য নিয়ে এএইচআরসির ওয়েবসাইটে একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। ইন্ডিয়া টুডে’র প্রতিবেদনে উল্লিখিত ঘটনা দুটির উল্লেখ এএইচআরসির প্রকাশিত মোট ৬২৩টি গুমের ঘটনার মধ্যে নেই।

বাংলাদেশ ও ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক আটক ও গুমের ধরন:

ক) বাংলাদেশে ভারতীয় নাগরিকের অন্তর্ধান এবং ভারতে তাঁদের ফিরে আসা:

বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের অনলাইন সংস্করণে ২০০৯ সালের ১ ডিসেম্বর “ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ‘আটক’” শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশিত হয়। এই লেখায় বলা হিয় যে, এনএলএফটি নেতা “সাশা চৌধুরী ও চিত্রবন হাজারিকাকে আটক করার পর ভারতে হস্তান্তর করা হয়েছে।”

ভারতীয় সংবাদপত্র হিন্দুস্তান টাইমসও একই ধরনের প্রতিবেদনে নিশ্চিত করে যে, ভারতীয় বিভিন্ন সংস্থা গ্রেফতারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার আগেই আত্ম-স্বীকৃতির জন্য লড়াই করা ভারতীয় নেতাদের “বাংলাদেশ পুলিশ তুলে নিয়ে যায়”। ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (উলফা) এর সদস্য রঞ্জন চৌধুরী বাংলাদেশ সরকারের গোয়েন্দা কর্তৃক আটক ব্যক্তিদের একজন। এ বিষয়ে এএইচসিআর একটি প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে: “তিনি (রঞ্জন চৌধুরী) ময়মনসিংহের রূম্পা ক্লিনিক থেকে ৬ জুন সাদা পোশাকের পুলিশের হাতে আটক হন। আহত হওয়ার পর উক্ত ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন রঞ্জন। পত্রিকাটির তথ্য অনুযায়ী, পুলিশ ও আধা-সামরিক র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) এই আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তবে রঞ্জনের স্ত্রী সাবিত্রী সাংমা গণমাধ্যমকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।” একই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, “গত ডিসেম্বরে (২০০৯) বাংলাদেশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় উলফা নেতা অরবিন্দ রাজখোয়া, রাজু বড়ুয়া ও দলটির অন্যান্য আটজন সদস্যকে আটক করা হয়। ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পর ভারত ও বাংলাদেশ অপরাধ, মৌলবাদ ও সন্ত্রাস দমনে একাট্টা হয়ে কাজ করছে।”

খ) বাংলাদেশে বাংলাদেশি নাগরিকের অন্তর্ধান এবং ভারতে তাঁদের ফিরে আসা:

২০১২ সালের ৫ নভেম্বর বাংলাদেশ পুলিশ যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে রাজধানীর উচ্চ আদালত প্রাঙ্গণের মধ্যবর্তী জায়গা থেকে সুখরঞ্জন বালিকে গ্রেফতার করে। সুখরঞ্জন শুরুতে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদীপক্ষের সাক্ষী থাকলেও পরে আসামীপক্ষের সাক্ষী হন। জানা যায়, তাঁকে ছয় সপ্তাহ ঢাকায় গোপনে আটক রাখা হয় এবং এরপর ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয় তাঁকে। পরে বালিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের রাজধানী কলকাতায় গ্রেফতার অবস্থায় পাওয়া যায়।২০১৫ সালের ১০ মার্চ র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একজন সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান মুখপাত্র সালাহউদ্দিন আহমেদকে বাংলাদেশের ঢাকার উত্তরার একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তখন থেকে ৬২ দিন নিখোঁজ থাকেন সালাহউদ্দিন। ২০১৫ সালের ১২ মে তাঁকে ভারতের মেঘালয় প্রদেশের রাজধানী শিলংয়ে আবার দেখা যায়।

উল্লিখিত সবগুলো অপহরণের ক্ষেত্রেই ভারত ও বাংলাদেশের নাগরিকদের নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগে গ্রেফতার করার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে অস্বীকার করেছে বাংলাদেশ সরকার।

২০১২ সালের ৫ নভেম্বর বাংলাদেশ পুলিশ যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে রাজধানীর উচ্চ আদালত প্রাঙ্গণের মধ্যবর্তী জায়গা থেকে সুখরঞ্জন বালিকে গ্রেফতার করে। সুখরঞ্জন শুরুতে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদীপক্ষের সাক্ষী থাকলেও পরে আসামীপক্ষের সাক্ষী হন। জানা যায়, তাঁকে ছয় সপ্তাহ ঢাকায় গোপনে আটক রাখা হয় এবং এরপর ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয় তাঁকে। পরে বালিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের রাজধানী কলকাতায় গ্রেফতার অবস্থায় পাওয়া যায়।২০১৫ সালের ১০ মার্চ র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একজন সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান মুখপাত্র সালাহউদ্দিন আহমেদকে বাংলাদেশের ঢাকার উত্তরার একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

 সরকারপন্থী ওপরমহলের ব্যক্তিরা জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থা অধিকার এর বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছেন:

২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় তাঁর ভেরিফাইড ফেসবুক পাতার মাধ্যমে জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের বিরুদ্ধে সরাসরি বিদ্বেষ ছড়ানোতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সরকারপন্থী পোষমানা বিভিন্ন গণমাধ্যমও প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের সঙ্গে একত্রে জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশভিত্তিক স্বাধীন মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণায় নেমেছে। এটি স্পষ্টতই স্বাধীন মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের প্রতি ইচ্ছাকৃত আক্রমণ। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সংস্থাটি এরই মধ্যে ক্রমাগত আইনি হয়রানির মুখোমুখি হচ্ছে। এরই মধ্যে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) হিসেবে এর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। সর্বশেষ বিদ্বেষমূলক প্রচারণায় সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের একটি সরকারপন্থী ব্যক্তিমালিকানাধীন টেলিভিশন চ্যানেলের অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রতিবেদন ও দুই ভাষায় লেখা কিছু টেক্সট ব্যবহার করেছেন।

জাতিসংঘের যেসব স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ডব্লিউজিইআইডি এর সদস্য হিসেবে কাজ করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ইন্ডিয়া টুডে সহ বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের কট্টর সমর্থক বিভিন্ন গণমাধ্যম ক্রমাগত ঘৃণা ছড়িয়ে চলেছে। একটি বেসরকারি সংস্থার সরকারপন্থী নেতা ও একজন শিক্ষাবিদের উদ্ধৃতি তুলে ধরে এই গণমাধ্যমটি গুম নিয়ে কাজ করতে থাকা জাতিসংঘের বিভিন্ন মানবাধিকার শাখার নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অধিকারকেও দোষারোপ করা হয়। ইন্ডিয়া টুডে এবং এতে উল্লিখিত ‘বিশেষজ্ঞরা’ এ বিষয়টি তুলে ধরতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন যে, অধিকার ঐ দুই ভারতীয় নাগরিকের বিষয়ে ডব্লিউজিইআইডিকে জানিয়েছে কি জানায়নি তা নির্বিশেষে এই বিষয়টি অনস্বীকার্য যে, এই গুমের ঘটনাগুলো ঘটেছিলো বাংলাদেশের সীমানার মধ্যেই।

জাতিসংঘের যেসব স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ডব্লিউজিইআইডি এর সদস্য হিসেবে কাজ করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ইন্ডিয়া টুডে সহ বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের কট্টর সমর্থক বিভিন্ন গণমাধ্যম ক্রমাগত ঘৃণা ছড়িয়ে চলেছে। একটি বেসরকারি সংস্থার সরকারপন্থী নেতা ও একজন শিক্ষাবিদের উদ্ধৃতি তুলে ধরে এই গণমাধ্যমটি গুম নিয়ে কাজ করতে থাকা জাতিসংঘের বিভিন্ন মানবাধিকার শাখার নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অধিকারকেও দোষারোপ করা হয়। ইন্ডিয়া টুডে এবং এতে উল্লিখিত ‘বিশেষজ্ঞরা’ এ বিষয়টি তুলে ধরতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন যে, অধিকার ঐ দুই ভারতীয় নাগরিকের বিষয়ে ডব্লিউজিইআইডিকে জানিয়েছে কি জানায়নি তা নির্বিশেষে এই বিষয়টি অনস্বীকার্য যে, এই গুমের ঘটনাগুলো ঘটেছিলো বাংলাদেশের সীমানার মধ্যেই

বাংলাদেশের উচ্চপদস্থ মন্ত্রী ও সরকারী কর্মকর্তারা যে অনবরত অধিকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্বেষ ছড়িয়ে যাচ্ছেন, সে বিষয়ে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো অবগত। যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগ র‍্যাব এবং এর ছয় কমান্ডারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে এ ধরনের বিদ্বেষমূলক প্রচারণার ঘটনা বেড়ে যায়। গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন যে, “… জাতিসংঘের কোনো কোনো সংস্থা গুম বিষয়ে ‘অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট’ একটি বাংলাদেশি সংগঠনের কাছ থেকে তথ্য পেয়েছেন।” মন্ত্রীর এই মন্তব্যের সরাসরি লক্ষ্য ছিলো অধিকার নামের সংগঠনটি। প্রকাশ্য এক সভায় তথ্যমন্ত্রী সরাসরি অধিকারের নাম উল্লেখ করে বিদ্বেষ ছড়ান; তবে ইংরেজি ভাষার গণমাধ্যমগুলো বিষয়টি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেনি। সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেলের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া বেনজীর আহমেদ জাতিসংঘের একটি সভায় অংশগ্রহণের জন্য নিউ ইয়র্ক সফরের সময়ে ক্ষমতাসীন দলপন্থী প্রবাসীদের এক সংবর্ধনায় অধিকার ও অন্যান্য কয়েকটি নাম উল্লেখ না করা সংগঠনকে ‘তথ্য সন্ত্রাসী’র আখ্যা দেন।

বাংলাদেশকে অবশ্যই ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তুলে ধরার কারণে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের দোষারোপ করা এবং বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মীদের ওপর প্রতিহিংসার চর্চা বন্ধ করতে হবে। ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ এর বিচার চেয়ে পরিবারগুলোর কান্নায় কান দিতে হবে বাংলাদেশকে।

আরো পড়ুন

গুম বিষয়ে দুটি প্রশ্নের উত্তর: https://www.driknews.com/article/1661854101

রক্ষীবাহিনীর হাতে গুমের শিকার অরুণা সেনের বিবৃতি: https://www.driknews.com/article/1661793655

আয়নাঘরের আয়নাবাজি ও নিশ্চুপ গণমাধ্যম: https://www.driknews.com/article/1660892450

দেশে দেশে গুমের বিরুদ্ধে নারীর প্রতিরোধ: https://www.driknews.com/article/1661782061