ডিফেন্স রিসার্চ, খবর এবং তথ্যের সমাহার
বাংলাদেশ-চীন স্ট্রাটেজিক রিলেশন বর্তমানে ভারতের চোখের বিষ
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক বর্তমানে এক নতুন উচ্চতায় পৌছেছে।এরই মাঝে চীন-ভারত সম্পর্ক “লাদাখ” ইস্যুতে আরো শীতল হয়েছে।একদিকে নেপাল,পাকিস্তান এবার অন্যপাশে চীন।কূটনৈতিক মারপ্যাচে একমাত্র আফগানিস্তান নিয়েই ভারত তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারে,যদিও আফগানিস্তান এসব সংঘাতের কেন্দ্রে নয়।তারই অংশ হিসেবে লাদাখ সমস্যার পর প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে মনোমালিন্য দূর করতে সচেষ্ট হয় ভারত।
সত্য বলতে দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র বাংলাদেশ ব্যতীত ভারতের পরিক্ষীত তেমন কোন বন্ধু নেই।মিয়ানমার আশিয়ান ভুক্ত হওয়ায় সেখানেও ভারতের প্রভাব রয়েছে।তবে সে মিয়ানমারেও থাবা গেড়েছে চীনা ড্রাগন।চীন,মিয়ানমারে নির্মাণ করছে গভীর সমুদ্র বন্ধর।৭০ শতাংশ চীনা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চীনের এ প্রজেক্ট নিশ্চয় ভারতের জন্য অশনী সংকেত।যদিও ভারত নিজেও মিয়ানমারে বন্দর ডেভেলপমেন্ট তবে তার গুরুত্ব চীনের লং টার্ম মেয়াদী “Pearl Of Strings” তত্বের কাছে ফিকে হয়ে যায়।
“Pearl Of Strings”-ভারতের ভাষায়
চীনের তথাকথিত ভারত মহাসাগরের নিয়ন্ত্রণ নেবার লক্ষ্যে ভারতের প্রতিবেশী দেশসমুহের সমুদ্র বন্দরে বিনিয়োগের পন্থা
লাদাখ সীমান্তে চীন কর্তৃক ভারতের জায়গা দখল এবং তা নিয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর অস্বীকার সহ নানা দিক নিয়ে ভারতে এখনোই সমালোচনা হচ্ছে।এদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে গিয়ে ভারত বুঝতে পেরেছে শ্রীলংকা কিংবা নেপালের মত দেশ ভারতের বিপক্ষে ৩৬০ ডিগ্রী টার্ন অভার করেছে।
বাংলাদেশের সামরিক এবং অর্থনৈতিক বিকাশে চীনা উদ্দ্যোগ এবং বিনিয়োগ ভারতের দুশ্চিন্তার কারন
ভারত,যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বিত উদ্দ্যোগ এর ফলস্বরুপ সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রে বন্দরে চীনা বিনিয়োগ থমকে গেলেও,সোনাদিয়ার অদূরে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে জাপান এবং এর কিছুক্ষেত্রে ভবিষ্যত চীনা বিনিয়োগ ভারতের দুশ্চিন্তাকে আরো প্রকট করেছে।আন্তর্জাতিক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ভারতের অন্যতম মিত্র হলেও লাদাখ ইস্যুতে তারা ভারত-চীন অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রত্যক্ষ ভুমিকা নিতে নারাজ।রাশিয়া মুখে মুখে ভারতের বন্ধু এবং ভারতকে আপগ্রেডেড মিগ-২৯ এবংং সুখোই-৩০ এর মত এয়ারক্রাফট বিক্রয় করলেও মনে রাখতে হবে চীনকে ঘাটানোর সাহস রাশিয়ার নিজের নেই এবং রাশিয়া চীনকে হারানোর ঝুকি নিতেও চায়না।রাশিয়া নিজেও জানে,সোভিয়েত জমানার প্রতাপ বেশ অনেক আগেই রাশিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছে।
এরই মাঝে চীন বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সর্বাত্নক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে।চীন নিজেই ঘোষণা করেছে “স্ট্রাটেজিক পার্টনার” বাংলাদেশে যেন রোহিঙ্গা সমস্যা দীর্ঘায়িত না হয় সে বিষয়ে তারা পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
সিস্টার সিটি কনসেপ্ট নিয়ে ভারতের উৎকন্ঠা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে আঘাতের শামিল
চীন ইতিমধ্যেই ৫৫০০+ বাংলাদেশী পণ্যের চীনে শুল্ক মুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে।একই সাথে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় টেকনিক্যাল এসিস্টেন্স দিচ্ছে চায়না।এমনকি করোনা মোকাবিলায় চীনা ভ্যাক্সিন বাংলাদেশকে প্রায়োরিটি বেসিসে দেয়া হবে বলা জানিয়েছে চীন।দেশের মেগা প্রজেক্ট গুলোয় চীনা উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতন।চীন আশ্বস্ত করেছে বাংলাদেশের সমস্ত পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে চীন, বাংলাদেশে জোরালোভাবে অংশগ্রহণ করতে চায়।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক খারাপ তা নয়।বরং বাংলাদেশের কিছু পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে ভারত।তবে চীনের মত তা ব্যাপক আকারের নয়।অন্যদিকে সীমান্ত,নদী,অবকাঠামো,কিংবা পলিটিকাল সব কিছুতেই বাংলাদেশকে অবমাননা করার অলিখিত ভারতীয় নীতি কে ভুলে যাওয়া যায়না।ভারতের প্রতিবেশী রাষ্টগুলো যদি ভারত বিরোধী হয় তাতে কার দোষ বেশী তা ভারতীয়দের ভুলে যাওয়া উচিত না।কাউন্টার টেরোরিজম,সীমান্ত ম্যানেজমেন্ট নদী পানি বন্টন,সমুদ্র সীমা নির্ধারণ সহ সকল ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ কি ভারতকে সহায়তা করেনি?বিনিময়ে ভারত কে পেল আর বাংলাদেশ কি পেল তার মাপকাঠির পাল্লা করলে তা কিন্তু ভারতেরই ভারী হবে।
ভারত সর্বদাই বাংলাদেশকে অবজ্ঞা করেছে।অন্যদিকে চীন তাদের আবিষ্কৃত কোভিড-১৯ প্রতিরোধী ভ্যাক্সিন দিবে বাংলাদেশকে
সিস্টার সিটি কনসেপ্ট এর আওতায় বাংলাদেশের ঢাকা,চিটাগাং এর মত বড় শহরগুলো সংস্কৃতি,বিনিয়োগ সব ক্ষেত্রেই চীনা সহযোগীতা পাবে।ভারত নিজেও চাইলে এ কনসেপ্ট গ্রহন করতে পারে।একটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম দেশ নিয়ে ভারতের মন্তব্য করার আগে “ডিপ্লোম্যাসি ” এর নীতিমালা শিখে আসা উচিত।
লাদাখ ইস্যুতে কেন বাংলাদেশের নীরবতা
কূটনৈতিক পরিষরে লাদাখ ইস্যুতে অন্তত বাংলাদেশ কোন স্টেটমেন্ট দেবে বলের ভারতের আশা ছিল।যদিও তা পূরন হয়নি।অন্যতম বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অন্তত “হ্যা” সূচক মন্তব্য চেয়েছিল ভারত।যার বিনিময়ে বাংলাদেশ “চীন এবং ভারত” উভয়কেই সীমান্তে শান্ত এবং সংযত অবস্থা বজায় রাখতে অনুরোধ জানিয়েছে।যার অর্থ এক কথায় চীনের প্রতি মৌন সম্মতি জানিয়েছে বাংলাদেশ।যা নয়াদিল্লীকে অস্বস্তিতে ফেলেছে।এ ক্ষেত্রে এটিও প্রতীয়মান চীন-ভারত যদি যুদ্ধ ও করে ভারতকে এবার তাতে নিজেই লড়তে হবে।
অবশ্য বাংলাদেশ-মিয়ানমার যদি কোন কারনে সংঘাতে জড়ায় তবেও কেউ বাস্তবিকভাবে প্রত্যক্ষ সমর্থন না দিলেও অন্তত ছোটখাটো স্টেটমেন্ট দেবে।ফুল স্কেল সামরিক কনফ্লিক্ট না হলেও সে কনফ্লিক্ট যেন দীর্ঘায়িত না হয় সেক্ষেত্রে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো একটি পদক্ষেপ নিতে হলেও বাধ্য হবে।কিন্তু আপাতত ভারতের বেড়ায় প্রশ্ন কমন আসেনি,সারাজীবন পাকিস্তান নিয়ে পড়াশোনা করে পরীক্ষায় চীন নিয়ে প্রশ্ন আসায়,দক্ষিণ এশিয়ায় পরাশক্তি হবার ভারতীয় স্বপ্ন আপাতত মাঠেই মারা গিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।
সারাবছর পাকিস্তান,বাংলাদেশ নিয়ে পড়াশোনা করেও পরীক্ষায় চীন নিয়ে প্রশ্ন আসায় বিপাকে ভারত
ভারত এখন একটি পথ বেছে নিতে পারে বাংলাদেশকে ভারতমুখী করার জন্য।সীমান্তে সংঘাত কিংবা উত্তেজনা বৃদ্ধি,কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের রপ্তানি বন্ধ,কিংবা সামরিক বাহিনী নিয়ে মনগড়া তথ্য প্রকাশ অথবা দেশে বিনিয়োগ কমানো এবং বিভিন্ন কূটনৈতিক লেভেলে লবিং চালানো।আর একই সাথে সিভিল সোসাইটিতে গুজব ছড়ানো।ভারতের বিভিন্ন পত্রিকায় “চীনের বাংলাদেশে খয়রাতি” নির্ভর নিউজ গুলো মুলত এসবেরই কারন।একই সাথে তারা বাংলাদেশকে “কট্টর ইসলামিক” এবং “ধর্মস্বাধীনতাহীন” এবং “সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী” হিসেবেও আগে থেকে প্রচার করে আসছে। ভারত এবং তাদের মিডিয়া ভাল মতই জানে কি করে নিজ স্বার্থ আদায় করে নিতে হয়।আর তার একটি হল, সরকার এবং জনগনকে মুখোমুখি দাড় করানো।
একটি দেশের সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী তার শিক্ষিত জনগন।জনগনই সরকারের ক্ষমতার উৎস
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার,বাংলাদেশকে কটাক্ষ করা যতক্ষণ না ভারতীয় অফিসিয়াল চ্যানেল বরাবর আসছে না ততদিন বাংলাদেশীদের শান্ত রেখে ধৈর্য্য ধারন করতে হবে।একথা মনে রাখতে হবে,আমাদের ছোট বাংলাদেশে প্রতিটি দেশেরই স্বার্থ আছে।তেমনি আমাদের নিজেরও কিন্তু কম স্বার্থ নেই।ভারত,চীন এ দুইদেশেরই বিনিয়োগ দরকার আমাদের নিজেদের জন্যই।ভারত যদি বিনিয়োগ করে আর তাতে যদি আমাদের স্বার্থ রক্ষিত হয় তবে কোন বাধা নেই।এ কথা চীনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।তবে যদি বাংলাদেশের সম্মান ভূলুন্ঠিত হয় তবে চীন কিংবা ভারত কারোরই পরোয়া করা হবেনা।এখন ১৯৭১ সাল নয়,আর একইভাবে বাংলাদেশ এখন “তলাহীন ঝুড়ি” নয় যে কোন একক দেশের সাহায্য ছাড়া বাংলাদেশ টিকে থাকতে পারবেনা।এ বার্তা চীন এবং ভারত উভয়েরই পাওয়া উচিত