- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১১ জুলাই ২০২১
ক্রিকেট নিয়ে যারা আলোচনা করেন তাদের মধ্যে জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশ টেস্ট চলাকালীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও বিশ্লেষকদের টেবিলে চলছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সম্ভাব্য টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের কথা।
রোববার হারারে টেস্টের পঞ্চম দিন যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল মাঠে নামে তখন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে তারা ‘গার্ড অফ অনার’ দেয়।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই টেস্ট ম্যাচটিই হয়ে থাকলো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের শেষ টেস্ট ম্যাচ। রিয়াদ এই হারারে টেস্টেই ১৫০ রানের একটি ইনিংস খেলেন। প্রায় খাদের কিনারে থাকা বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং লাইন আপের হাল ধরে তিনি কন্ট্রিবিউট করেন ৪৬৮ রানের সংগ্রহ গড়ে তুলতে।
তবে এই সিরিজেও প্রাথমিক দলে ছিলেন না মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। শেষে রিয়াদকে আলাদা করে দলে নেয়া হয়।
দেড় শ’ রানের ইনিংসটির পরে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বরাদ দিয়ে গণমাধ্যমের কাছে ভিডিও বার্তা পাঠান সেখানে অবশ্য তিনি অবসর নিয়ে কোনো কথা বলেননি।
তবে মাহমুদুল্লাহর টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ বেশ আগেই দেখে ফেলেছিলেন ক্রিকেটের অনেক বিশ্লেষক। রিয়াদের টেস্ট ক্যারিয়ার নিয়ে আলোচনায় একটা কথা প্রায়শই আসে প্রায় আট বছর একটিও টেস্ট সেঞ্চুরি পাননি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
এই সময়ের মধ্যে তাকে দল থেকে বাদ দেয়া বা এমন কোনো প্রশ্নও তেমন ওঠেনি।
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে টেস্ট দল থেকে বাদ দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করেছিলেন বাংলাদেশের সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। বাংলাদেশের শততম টেস্টে তাকে একাদশ থেকে বাদ দেন তিনি। কিন্তু রিয়াদ আবার ফিরে আসেন।
এরপর তিনি ‘বাদ’ পড়েন, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। কিন্তু সেবার ‘বাদ’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি নির্বাচকরা।
কী এমন ছিল রিয়াদের যে তিনি নিয়মিত এতো বছর টেস্ট খেলে গেছেন ব্যাখ্যা করেন বাংলাদেশের ক্রিকেট কোচ ও খেলাটির পর্যবেক্ষক নাজমুল আবেদীন ফাহিম, বাংলাদেশ টেস্টে আহামরি ভালো টিম না, যে একটি পজিশনের জন্য অনেক ক্রিকেটারের প্রতিযোগিতা হবে। আবার দুই একজন বাদ দিলে তেমন খেলোয়াড়ও নেই যাদের টেস্টে উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স আছে।
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এখন পর্যন্ত ৫০টি টেস্টে মাঠে নেমেছেন, রান করেছেন ২ হাজার ৯১৪, গড় ৩৩.৪৯।
রিয়াদের চেয়ে বেশি গড় বাংলাদেশের হয়ে আছে মুমিনুল, সাকিব, তামিম ও মুশফিকুর রহিমের। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে একমাত্র মুমিনুলের গড়ই ৪০ এর ওপরে।
তবে পরিসংখ্যান তো নিছক সংখ্যামাত্র খেলায় প্রভাব কেমন এটা খতিয়ে দেখার কথাও বলেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
ফাহিমের মতে, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের অধিকাংশ ইনিংসই বিপদের সময়। ক্রাইসিস মোমেন্টেই বাংলাদেশ দলকে নিয়মিত উদ্ধার করার কাজটা চালিয়ে গেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
টেস্ট ক্রিকেটে মাহমুদুল্লাহ’র ব্যাটিং ইনিংসের তালিকা ঘাটলেই এমন অনেক ইনিংস পাওয়া যায় যখন খুব দ্রুতই চার বা পাঁচ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। সেদিক থেকে মাহমুদুল্লাহ নিজের দায়িত্ব চালিয়ে নিয়ে গেছেন বলেই মনে করেন ফাহিম তবে তিনি মনে করেন না যে ব্যাটিং লাইন আপের ওপরের দিকে খেললেই রিয়াদের ক্যারিয়ার অন্যরকম হতো।
ওপরে যারা খেলেছে, সাকিব, মুশফিক, এরাও তো নিয়মিত পারফর্মার। তাদের বাদ দিয়ে রিয়াদকে নেয়াটা খুব একটা ভালো হতো বলে মনে হয় না।
৯৪ ইনিংসের টেস্ট ক্যারিয়ারে রিয়াদের ব্যাট থেকে এসেছে ১৬টি ফিফটি এবং পাঁচটি সেঞ্চুরি।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে ‘সাইলেন্ট কিলার’ বলে থাকেন, নীরব ঘাতক, যার ডাকাবুকো কম কিন্তু কাজের কাজ করে দেন।
প্রায় এক যুগের ক্যারিয়ারে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে রিয়াদ বাংলাদেশকে ম্যাচ জিতিয়েছেনও, কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে এই উদাহরণ কম আর যদি হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে শেষ টেস্টটিই হয়ে থাকবে তার ক্যারিয়ারের দৃষ্টান্ত।
১৩২ রানে ৬ উইকেট চলে যাওয়া পর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দলকে নিয়ে যান নিরাপদে সেখান থেকেই বিদায়ের ঘোষণাটি এল আজ, বিদায়ের ক্ষণে জানান দিয়ে গেলেন তিনিও টেস্টে ম্যাচ জেতাতে পারেন।
সূত্র : বিবিসি