bonikbarta.net
ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান এবং ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সুশাসন, বৈদেশিক বাণিজ্য, অর্থনীতির অনানুষ্ঠানিক খাত, মেগা প্রকল্প ও জ্বালানি নিরাপত্তা প্রসঙ্গে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তৌফিকুল ইসলাম
বাংলাদেশের গ্রোথ মিরাকল ভেঙে পড়ছে কেন?
বাংলাদেশ ক্রান্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নাগরিকরা তাদের যাপিত দুর্বিষহ জীবন থেকে সমাধানের পথ খুঁজছেন। অর্থনীতির ওপর অব্যাহত নিম্নমুখী চাপ এখন বেশ বড় রকমের ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। যেমন বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনীতির মুখ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চিতি, তার প্রাপ্তি ও ক্রমহ্রাসমান ক্ষয়। সেই সঙ্গে টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হারে ক্রমাগত পতনও বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এসব কারণে বাংলাদেশের গ্রোথ মিরাকল ভেঙে পড়ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
আপনি কি মনে করেন গত এক দশকের সরকারি ব্যয় ও বৈদেশিক বাণিজ্যের একটা ফরেনসিক অডিট হওয়া দরকার?
অবশ্যই ফরেনসিক অডিট হওয়া দরকার। কারণ আমাদের চিহ্নিত করতে হবে, আর্থিক দুর্দশা কখন থেকে শুরু হয়েছে এবং এর কার্যকারণটা কী? এ দুই প্রশ্নের উত্তরের শুরুটা পাওয়া যাবে ২০২১-২২ আর্থিক বছরের হিসাবে। আমদানিতে বড় ধরনের উল্লম্ফন হয়েছে। প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। তিনটি বিষয় তলিয়ে দেখলে বলা যাবে কোনোভাবেই এটি মানানসই উল্লম্ফন নয়। প্রথমত, বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় কভিডের প্রাদুর্ভাবজনিত অভিঘাতের কারণে একটা মূল্যস্ফীতি ঘটেছে। যদিও তা কোনোভাবেই ১০ শতাংশের বেশি নয়। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের অধিকাংশ আমদানি-রফতানি জাহাজীকরণ হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। সেখানকার তথ্য-উপাত্ত কোনোভাবেই এ ৩৫ শতাংশ ঊর্ধ্বগতির কোনো ব্যাখ্যা হাজির করে না। তৃতীয়ত, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উপাত্তের মধ্যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের পার্থক্য লক্ষণীয়। সব মিলিয়ে বলতেই হয়, এ উল্লম্ফনের কারণ অনুসন্ধানে একটা ফরেনসিক অডিট দরকার। এটা যদি হয়, তাহলে আমরা জানতে পারব অফিশিয়াল চ্যানেল দিয়ে কেন এ উল্লম্ফন ঘটল, কারা ঘটাল, কেন ঘটাল? আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, একেবারে রক্ষণশীলভাবে হিসাব করেও দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে ৩০-৩৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। অফিশিয়াল চ্যানেলে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ পাচার হয়েছে বলে বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা আগেও দাবি করেছে। প্রশ্ন হলো কেন, কীভাবে ওভার ইনভয়েসিংয়ের ঘটনাটি ঘটেছে? এ অভিযোগের মূলে যেতে হবে। এ উল্লম্ফনকে ব্যাখ্যা করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক কখনই ফরেনসিক অডিট করেনি। করলে সমাধানের রাস্তা বের হয়ে আসত।
অনানুষ্ঠানিক লেনদেনের আকারও তো অনেক বড়…
এটি সবারই জানা, হুন্ডি-হাওলা হচ্ছে। এর সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর বা শুল্কারোপের পদ্ধতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার মাধ্যমে কোনোভাবে এ পুঁজি পাচার উৎসাহিত হয় কিনা, সেটিও দেখতে হবে। সেখান থেকেও একটা সমাধানের রাস্তা আসবে। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আমাদের ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ মোট দেশজ উৎপাদনের তুলনায় কমছে। অন্যদিকে পুঁজি পাচার উৎসাহিত হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বয়স এখন ৫২ বছর। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও তার পরের উপনিবেশবাদীরা এখান থেকে সারপ্লাস তথা উদ্বৃত্ত খাজনা আদায়ের মাধ্যমে তাদের শিল্পবিপ্লব সাধিত করেছে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যদি খাজনা আদায় করতে পারে, তাহলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর আদায় করতে পারছে না কেন? বাংলাদেশের কর কেন দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন এবং আফগানিস্তানের ঠিক ওপরে? কেন এক্ষেত্রে কার্যকর কোনো ধরনের কার্যক্রম নেয়া হচ্ছে না? স্বাধীন দেশের স্বাধীন ব্যবস্থা তথা সংসদ এবং অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থাৎ যারা নীতিনির্ধারণ করেন, তারা পারছেন না কেন? তার মানে তারা করছেন না। এটি সক্ষমতার বিষয় নয়। এটি একটি ডেলিবারেট অ্যাটেম্পট কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। তার মানে একদিকে যেমন বাংলাদেশ ব্যাংককে ফরেনসিক অডিট করতে হবে এবং দায় নিতে হবে; ঠিক একই কায়দায় দায় নিতে হবে রাজস্ব বোর্ডকেও। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পারলে স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক কেন পারবে না? এটা তো হতে পারে না। এখনকার আলোচনা হতে হবে এ পরিস্থিতির উত্তরণ কীভাবে ঘটবে? উন্নয়নের যে গল্প শোনা গিয়েছিল, তা মরীচিকা হয়ে গেছে। করোনাকাল প্রতিষ্ঠানের ফাটলগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে। ব্যাংক খাতে ত্রাহি অবস্থা। অর্থমন্ত্রীসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নররা ক্রমাগত বলেছেন, খেলাপি ঋণ কমবে। তারা একের পর এক সুবিধা দিয়েছেন, কিন্তু কোনো অ্যাকশন তো দেখা যায়নি, বরং নতুন আইন করে সুবিধা বাড়িয়েছেন। লক্ষ করা গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তা অনুসন্ধান করে দেখিয়েছেন, আজকে কী কারণে ব্যাংক ব্যবস্থা ন্যুব্জ। কিন্তু তাদের সুপারিশ আমলে নেয়া হয়নি। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের শৃঙ্খলার মধ্যে আনা হয়নি। অতীতে শৃঙ্খলায় আনার নজির আছে। এমডিদের বরখাস্ত করা হয়েছে। দুর্নীতি জারি রাখার প্রণোদনা আছে। কিন্তু দুর্নীতি বা লুট বন্ধ করার প্রবণতা দৃশ্যমান নয়।
তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন জনপ্রশাসনে দায়িত্বশীলতার অভাব রয়েছে?
সার্বিক দৃশ্যপট অনুসারে সরকারি দপ্তরের হিসাব বা পর্যবেক্ষণ যে সংকেত দিচ্ছে, জনগণের জন্য তা বড় মাত্রায় অ্যালার্মিং। এটি কোনো স্বস্তির নিঃশ্বাস বয়ে আনছে না। যেমন সংবাদপত্র সরকারি হিসাবের বরাত দিয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের কোন প্রকল্পে কতদিন সময় বেড়েছে এবং কীভাবে অর্থ বেড়েছে, তা জানান দিচ্ছে। অথবা বিভিন্ন সড়ক পথের ক্ষেত্রে লক্ষ করা গেছে, সড়ক বাড়ছে কিন্তু যানজট কমছে না বা চলাফেরার খরচ কমছে না। অথবা এমন প্রকল্প নেয়া হচ্ছে যাতে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এক্ষেত্রে দূরদর্শিতার পরিচয় দেয়া হয়নি, বরং লক্ষ্য করা যাচ্ছে গোষ্ঠীতন্ত্রকে সুবিধা দেয়ার জন্য এগুলো করা হচ্ছে। অর্থাৎ সমস্যা কারা করছেন সেগুলো যেমন নির্দিষ্ট, কেন করছেন সেগুলোও নির্দিষ্ট। কিন্তু তাদের শৃঙ্খলায় না এনে ‘কালচার অব ইমপিউনিটি’ অর্থাৎ জবাবদিহিতার অভাবের একটি সংস্কৃতি বজায় রাখা হচ্ছে। রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সঙ্গে এর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। গোষ্ঠীতন্ত্র তৈরি হয়েছে এবং এসব গোষ্ঠীর কাছে জনগণের সম্পদ ক্রমাগত পুঞ্জীভূত হচ্ছে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সম্পদ ব্যবহার করে তাদের দেশে শিল্পায়ন করেছে। বাংলাদেশের পুঞ্জিভবনকারীরা পাচার করছে। এ পুঞ্জিভবন ঘটছে অনুভূমিক ও উল্লম্ব—দু’ভাবেই। অর্থাৎ সর্বনিম্ন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত এটি উল্লম্বভাবে ব্যাপৃত। আবার অনুভূমিকভাবে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও আমলাতন্ত্র এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এগুলোরও সমাধান করা যায়। রিজার্ভের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যাবে বর্তমানের তুলনায় মাসে ৩ বিলিয়ন ডলার আয় বাড়াতে পারলে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব এবং সেখান থেকেও আরো বাড়ানো সম্ভব। বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করলে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কাজ করলে, এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ অবশ্যই সম্ভব।
সব সমস্যা সমাধানের কি উপায় রয়েছে?
হ্যাঁ, সমস্যা সমাধানের উপায় আছে। একটি উদাহরণ দিই। কভিডকালে প্রধানমন্ত্রী ৫০ লাখ মানুষকে নগদ অর্থ সরবরাহ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের বিতরণ ব্যবস্থায় ত্রুটি থাকায় যার থাকার কথা না তিনি অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, আর যার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা, তিনি অন্তর্ভুক্ত হননি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে তালিকা করার দায়িত্ব দেয়া হলো। কিন্তু তারা আজ পর্যন্ত তালিকা করতে পারেনি। দুবার চেষ্টা চালিয়েও ১৫ লাখ লোককে নগদ সহায়তা দেয়া যায়নি। মোটা দাগে বলা যায়, আমরা নির্ভুল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করতে পেরেছি। এর সঙ্গে আর দুই-তিনটি কলাম যুক্ত করে যদি তালিকা করা যেত, তাহলে সব মানুষের কাছে অর্থ পৌঁছানো যেত। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান সঠিক দায়িত্ব পালনে সক্ষম হলেও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। আজ মূল্যস্ফীতির কশাঘাতে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। একডজন ডিমের দাম ১৬০-১৭০ টাকা। এখন ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছে। একজন ডেঙ্গু রোগীর পক্ষে সম্ভব না ডাবের পানি খাওয়া। ১৫০-১৭০ টাকা ডাবের দাম। স্যালাইন সংকট দেখা দিচ্ছে। আবার অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ঠিকমতো এবং পদ্ধতিগতভাবে আলোচনা না থাকার কারণে মাঝেমধ্যেই আমাদের প্রয়োজনীয় পণ্য অর্থাৎ চাল, গম, পেঁয়াজ, রসুন, আদা সরবরাহে অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে। আমরা তো জানি বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা জারি রাখার জন্য কী কী পণ্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সে তথ্য প্রতিনিয়ত পাওয়া যাচ্ছে। সঠিক ধরনের বন্ধুত্ব স্থাপন করলে সমাধান আছে। দেশের অভ্যন্তরে প্রতিবারই দেখা যাচ্ছে, কৃষক ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। অথচ চাতাল মালিক ও পরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাসহ মধ্যস্বত্বভোগীরা ফুলেফেঁপে উঠছে। এক-দুজন মন্ত্রী স্বীকার করেছেন, তারা যদি সিন্ডিকেটের কথা বলেন, তাহলে চাকরি থাকবে না! চারদিক থেকে গোষ্ঠীতন্ত্র রাজনৈতিক বন্দোবস্তকে ঘিরে ফেলেছে। যদিও প্রতিটি বিষয়ের সমাধান আছে। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের জন্ম গোষ্ঠীতন্ত্রকে সুবিধা দেয়ার জন্য হয়নি, এটা ভাঙলেই সমাধান আসবে।
দেশে গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে আসছে, এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। জ্বালানি নিরাপত্তা প্রসঙ্গে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
তথ্যগুলো দুটি বিপরীতমুখী অবস্থান জানান দিচ্ছে। যেসব কূপ থেকে ৬০ শতাংশের বেশি গ্যাস আসত, সেগুলোয় মজুদ কমে যাচ্ছে। আবার অন্যদিকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের গ্যাসের সম্ভাব্য মজুদ অনেক। এগুলোর অনুসন্ধান ও উত্তোলন করা হচ্ছে না। আবার যা মজুদ আছে, সেখান থেকেও ঠিকমতো উত্তোলন হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ৭৪ শতাংশ ব্যয় করছে ৪৭ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহকারীর কাছে। অর্থাৎ ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র এবং ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্লান্টগুলোকে ফুলেফেঁপে ওঠার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা হচ্ছে। গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে না। কিন্তু এলএনজি আমদানি করার উৎসাহ অনেক বেশি। দেশীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে উত্তোলনে ব্যবহার না করে বিদেশী কোম্পানিকে অধিক অর্থ দিতে উৎসাহ বড় বেশি দেখা যাচ্ছে!
তাহলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কী?
প্রতিটি বিষয়ই চিহ্নিত এবং এর সমাধানগুলোও সামনে আছে। কিন্তু কোনোভাবেই অ্যাকশন নেয়া হচ্ছে না। জ্বালানি নিরাপত্তার সঙ্গে ভূ-রাজনৈতিক ব্যাপারগুলোও জড়িত এবং জ্বালানি নিরাপত্তা যদি না থাকে, তাহলে সামনের দিকে কী হবে? পোশাক শিল্পের উদাহরণ দেয়া যায়। এ শিল্পে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশ শীর্ষস্থান দখল করেছে। যদিও চীন বাংলাদেশের চেয়ে কম রফতানি করছে। কিন্তু তার আয় বেশি। ডলার কেন পাচার হলো, তা না দেখে এখন জোর করে কাঁচামাল আমদানি চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। অবশ্য কাঁচামাল যদি না থাকে তাহলে ভবিষ্যতে রফতানি কীভাবে হবে? অন্যদিকে বাংলাদেশে কর আদায়ের ক্ষেত্রে বড় রকমের কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। কিন্তু গত সাত বছরে আমরা ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে যেকোনো সময়ের রেকর্ড অতিক্রম করেছি। অর্থাৎ স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৫-১৬ সাল পর্যন্ত ৪১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেয়া হয়েছে। গত বছরই সেটি দ্বিগুণ হয়েছে। ব্যক্তি খাতেও একই ঘটনা ঘটেছে। ব্যালান্স অব পেমেন্টের কয়েকটি অংশ রয়েছে। কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স অর্থাৎ চলতি আমদানি-রফতানি চাপিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু ঋণ বেশি করার কারণে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে বিদেশে বহিঃপ্রবাহ অনেক বেশি হচ্ছে, ফলে ক্ষত দিন দিন বড় থেকে বড় হচ্ছে। সবাই জানেন অর্থকে পানির সঙ্গে, অর্থাৎ তারল্যের সঙ্গে তুলনা হয়। পানির শক্তি ও গতিময়তা অনেক বেশি। আগে ছিল চাপ, এখন বড় রকমের ঝুঁকি চলমান, গতি পরিবর্তিত না হলে অর্থনীতি সংকটে নিপতিত হতে পারে। আইএমএফের কর্মসূচি দিয়ে নানামুখী সমস্যার সমাধান হবে না। আমরা যদি ফরেনসিক অডিট করে ক্ষতগুলো নির্দিষ্ট করতে পারি, পাচার করা অর্থ যদি ফেরত নিয়ে আসা যায়, তাহলেই হবে। সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্র সচিবও জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন চাইলে এসব বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে। একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হাইকোর্টের দৃষ্টি গোচর হলে আদালত তা নিয়ে অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এখন প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। সব মিলিয়ে পেশাদারত্বের পরিচয় দিয়ে স্বজনতোষী রাজনৈতিক বন্দোবস্ত থেকে বেরিয়ে আসার মধ্যেই সমাধান নিহিত। কথামালার চোরাবালিতে মোহাচ্ছন্নতা তৈরির সময় এখন না।