বন্ধু দেশ, কাছে আছে পাশে নেই

  • এ এইচ খান রতন
  •  ০৩ অক্টোবর ২০২২, ১৯:৫৪
বন্ধু দেশ, কাছে আছে পাশে নেই – প্রতীকী ছবি

প্রকৃতিগতভাবে মানুষ অধিকারসচেতন। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সরল সমীকরণে, জন্মগত এই স্বয়ংক্রিয় অনুভূতিতে বাধা এলে, স্বভাবজাত মানুষ প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। সৃষ্টির শুরু থেকে এই অধিকারসচেতনতার কারণেই যুগে যুগে মানবজাতি অসংখ্য যুদ্ধে জড়িয়েছে; সভ্যতার বিনাশ, আর রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। মিথ আছে, পাগলেও নিজের স্বার্থ বোঝে। নিকট অতীতে ফিরে তাকালে একশত নব্বই বছরের ব্রিটিশ শাসনে, অধিকারসচেতন মানুষের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থতার দায়ই ১৯৪৭-এর দেশ বিভাগ। আবার ’৪৭-এর দেশ ভাগের কিছু কালের ব্যবধানেই অধিকারসচেতন মানুষের মনে হলো, তারা বঞ্চিত ও শোষণের শিকার। শুরু হলো প্রতিবাদ ও স্বাধিকার আন্দোলন। দীর্ঘ ২৪ বছরে, পর্যায়ক্রমে স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিসংগ্রামে অর্জিত হয় ’৭১-এর বিজয়। ১৯০ বছর ধরে ব্রিটিশ শাসনে মানুষের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির অসন্তোষ যেমন ’৪৭-এর দেশ ভাগ, পরবর্তী ঠিক একই অভিযোগ; অর্থাৎ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ফারাকই ডেকে আনে ’৭১। তাই যুগে যুগে আত্মত্যাগ, শোষণ আর অধিকারবঞ্চিত এ ভূখণ্ডের মানুষ ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর স্ফীতবক্ষে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে ভেবেছিল; এবার আমরা মুক্ত।

কিন্তু দীর্ঘ ৫০ বছর পর, সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, শোষণে জর্জরিত অন্তঃসারশূন্য, বঞ্চিত এক জাতির বক্ষস্ফীত আত্মতৃপ্তির সেই নিঃশ্বাসটি, কতটা সার্থক ছিল। যদিও এ প্রশ্ন আজ নিতান্তই অবান্তর। আর বাস্তবতা এড়িয়ে যাওয়ার অর্থ, ইতিহাস অস্বীকার করা, যা অসম্ভব; কারণ, ইতিহাস তার গতিপথ বদলায় না। ’৭১ থেকে ২০২২, অর্ধশতাব্দীর এ কাল পরিক্রমায় জাতিসত্তা হিসেবে আমাদের অগ্রগতি, আর একই অবস্থানের ব্রিটিশ শাসনমুক্ত অন্য দু’টি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, উদাহরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে। ১৯৫৭ সালে স্বাধীনতা লাভ করে মালয়েশিয়া। তার মাত্র ২০ বছরের ব্যবধানে চোখধাঁধানো উন্নয়নে গোটা পৃথিবীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয় দেশটি। তার আট বছর পর ১৯৬৫ সালে স্বাধীনতা লাভ করে সিঙ্গাপুর এবং এ দেশটি আরো কম সময়ে, এমনি এক জাদুকরী উন্নয়নে গোটা দুনিয়াকে অবাক করে দেয়, যা আজও পৃথিবীর কাছে এক বিস্ময়। এশিয়ার অর্থনৈতিক Emerging Tiger এর রূপ ধারণ করে দেশ দু’টি। নিজ দেশের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে, মুক্তবাজার অর্থনীতির কারণেই তাদের এ উন্নয়ন। স্বাধীনতা লাভের পর দু’টি দেশই National Development Manifesto প্রণয়ন করে, তা বাস্তবায়নে মনোযোগী হয়। শুরু হয় সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনিক ও প্রতিযোগিতামূলক কার্যক্রম। আজ গোটা পৃথিবীর সামনে তারা উদাহরণ।

আর আমরা? প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছি অন্তর্দ্বন্দ্ব, খুন, দুর্নীতি আর ক্ষমতা দখলের মহোৎসবে। ফলে ’৭১-এর ডিসেম্বর ১৬ আত্মতৃপ্তির মুক্ত সেই নিঃশ্বাসটি অবলীলায় বাতাসে মিলিয়ে গেল। অর্ধশতাব্দী ধরে রাজনীতিকদের উন্নয়নের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, আলেয়ার পেছনে ছুটছি আমরা। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, আমরা এমনি এক ভূখণ্ডের অধিবাসী, যাদের উর্বর ভূমি, দক্ষ শ্রমশক্তিসহ উন্নয়নের সব উপকরণ থাকার পরও উন্নত দেশগুলোর তুলনায় আমাদের অর্থনীতি নাজুক। শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শ্রমিক শ্রেণীর বিদেশ নির্ভরতা, আর পোশাক শিল্পের Remittance আজ রিজার্ভের মূল ভরসা। আজ এক শ্রেণীর শিক্ষিত সরকারি আমলা ও বেসরকারি লুটেরারা স্ত্রী-সন্তানসহ বিদেশে অর্থ পাচারেই ব্যস্ত; যা প্রতিরোধ প্রায় অসম্ভব। যেহেতু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশ গড়ার দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের, সুতরাং এ ব্যর্থতার দায় অদূরদর্শী রাজনীতিকদের। নিঃসন্দেহে জনগণের জবাবদিহিতার কাঠগড়ায় অবস্থান আমাদের রাজনীতিবিদদের।

একটা দেশের জাতীয় ঐতিহ্য নির্ভর করে তার সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক সক্ষমতার ওপর; নতজানু পররাষ্ট্র নীতির মাধ্যমে নয়। আমাদের কথিত বন্ধুরাষ্ট্রের সাথে ব্রিটিশ আমলের মহাজনি ঋণের মতো ভারসাম্যহীন ঋণের ফাঁদে আজো আমরা আটকে আছি; পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে যা বহুকাল পূর্বে। বন্ধুদেশ-বন্ধুদেশ বলে মুখে সফেদ সাদা ফেনা তুলে ফেললেই, কোনো দেশ বন্ধু হয়ে যায় না। প্রতিটি দেশের নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি রয়েছে, জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েই তা নির্ধারণ করা হয়। বিষয়টি open secret এবং একেক দেশের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে আমেরিকার অবস্থান যেমনটি হবে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তেমনটি নাও হতে পারে। বিষয়টি জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট, ব্যক্তিগত বন্ধুত্বের পর্যায়ের নয়। রাষ্ট্রীয় অতিথিকে সংবর্ধনার ক্ষেত্রে গালিচা কতটা লাল ছিল, আর বিমানবন্দরে কে স্বাগত জানাল, এগুলো নিয়ে যারা অযাচিত চর্চায় ব্যস্ত তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে; পররাষ্ট্রনীতিতে তারা জ্ঞানপাপী। ঝুলে থাকা তিস্তা চুক্তিই এর বড় উদাহরণ; দু’দেশের সরকারের মাঝে উষ্ণ বন্ধুত্বপূর্ণ গভীর সম্পর্কের ব্যাপক প্রচারণা থাকার পরও; নিয়মিত আম, ইলিশ, শাড়ি আদান-প্রদান হলেও জাতীয় স্বার্থে কোনোরূপ ছাড় দেয়নি দেশটি।

লক্ষ্য করুন: কথিত বন্ধুরাষ্ট্রটি ২০১০ সালে তাদের এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে সাত বিলিয়ন ডলার ঋণ মঞ্জুর করে; যেটিকে LOC বা লাইন অব ক্রেডিট বলা হয়। শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়, এই ঋণের অর্থে কেনাকাটার ৭৫ শতাংশই তাদের দেশ থেকে ক্রয় করতে হবে, বিশেষ করে বাস, ট্রাক ও লোকোমোটিভ বা রেল ইঞ্জিন ক্রয় বাধ্যতামূলক করে দেয়। শুধু তাই নয়, তাদের Transshipment বা পণ্যপরিবহনের সুবিধার্থে আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার সড়কপথ নির্মাণ হচ্ছে। এই প্রকল্পে ৩৫৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ের ৬৪ শতাংশ মঞ্জুরীকৃত LOC বা লাইন অব ক্রেডিট থেকে ব্যয় করতে হবে। পৃথিবীর কোথাও এমন আত্মঘাতী শর্তযুক্ত বন্ধুত্ব ঋণের উদাহরণ আগে কেউ শুনেছেন বলে জানা নেই। ঋণের এই অভিনব শর্তযুক্ত পদ্ধতিটি গিনেস বুক অব রেকর্ডে স্থান পেতে পারে। কারণ, এ জাতীয় শর্তযুক্ত ঋণ পৃথিবীতে আর নাও হতে পারে।

আগেই উল্লেখ করেছি, প্রতিটি দেশের নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি রয়েছে যা আমাদেরও আছে। মনে রাখতে হবে, ব্যক্তিগত আর্থিক সচ্ছলতা একজন মানুষকে যেমন পরিবার আত্মীয় বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী ও সামাজিকভাবে মর্যাদাশীল করে তোলে, দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলোর সাথে, শক্তিশালী দেশের বিষয়টিও তেমনি। বর্তমান Globalization এর যুগে দুর্বল দেশগুলো শক্তিশালী কোনো দেশের সাথে স্বাভাবিকভাবেই ঘোষিত-অঘোষিত সব বিষয়ে নতজানু নীতিতে বাধ্য হয় বা পেরে ওঠে না। আয়তনের তুলনায় আমাদের দেশ সিঙ্গাপুরের মতো ২০৪টি দেশের সমান। স্থানাভাবে যে দেশটিতে বিমান ল্যান্ড করে ফ্লাইওভারের মাধ্যমে। এত ক্ষুদ্র একটি দেশের জনগণ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের জন্য কোনো প্রকার ভোগান্তির শিকার হয়নি। এতে সহজেই অনুমেয়, বিশ্বদরবারে তাদের অবস্থান কোথায়; এর কারণ অবশ্যই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। অথচ দুঃসময়ে ভ্যাকসিনের জন্য অগ্রিম অর্থ পরিশোধের পরও কথিত বন্ধু রাষ্ট্রটি আমাদের সাথে কী আচরণ করেছে তা সবারই জানা। আকস্মিকভাবে পেঁয়াজ নিয়ে বন্ধু রাষ্ট্রটি যে লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়েছে, এ দেশের মানুষ সেটাও দেখেছে; বন্ধুত্বের এমন নিদর্শন খুঁজে পাওয়া ভার। এ ছাড়া গরু রাজনীতি, ভিসা রাজনীতি, চাল নিয়ে চালবাজির তো শেষই নেই।

গত চার দশকেও নির্বিচার সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি বরং চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার আগেই পার্শ্ববর্তী দেশের সীমান্তের অভ্যন্তরে একজন বাংলাদেশী নাগরিকের লাশ পড়ে থাকার সংবাদ প্রকাশিত হয়। এই হলো আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র। বলা হচ্ছে, এবারের সফরে প্রায় দুই ডজনের মতো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অদ্ভুত সিদ্ধান্ত; সীমান্তহত্যা কমিয়ে আনা, যে ঘোষণার মাঝেই সীমান্ত হত্যার স্বীকৃতি লুকিয়ে আছে। ‘কমিয়ে আনা’ অর্থাৎ সীমান্ত হত্যা চলবে তবে কম; কি ‘অদ্ভুত সিদ্ধান্ত’! বন্ধুরাষ্ট্রটি প্রকৃতির শাশ্বত নিয়মে চলমান জলধারায় বাঁধ নির্মাণ করে শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে উত্তরবঙ্গে মরুভূমি সৃষ্টি করে, আবার বর্ষাকালে অপ্রয়োজনে পানি ছেড়ে দিয়ে ডুবিয়ে মারে। দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা চুক্তির মুলা ঝুলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে সে সমাধান তো নয়ই বরং ফেনী নদীর পানি চেয়ে আরো অবাক করে দিয়েছে দেশটি।

’৭১-এর ৬ ডিসেম্বর আমাদের স্বাধীনতার স্বীকৃতি প্রদান করে দেশটি; যা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণীয়। কিন্তু অদ্যাবধি যতগুলো দ্বিপক্ষীয় চুক্তি কথিত বন্ধুদেশটির সাথে হয়েছে, তার অধিকাংশই, বাংলাদেশের স্বার্থ বিবেচনার তো প্রশ্নই আসে না, সমতার ভিত্তিতেও করা হয়নি। আমাদের প্রয়োজন ছিল স্বাধীনতার, আর তারা আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী দেশ। সমরাস্ত্র, শরণার্থী আশ্রয়, বহির্বিশ্বের স্বীকৃতি আদায়সহ সর্বাত্মক সহযোগিতা ও অবদান অবশ্যই শ্রদ্ধার সাথে স্বীকার করি। কিন্তু এই সহযোগিতা তারা কেন করেছিল; তার উত্তর এ ক্ষুদ্র লেখায় প্রকাশ অসম্ভব। স্বল্পপরিসরে বলা যেতে পারে, কোনো প্রকার বন্ধুত্বের টানে নয়, দেশটির প্রয়োজনেই আমাদের স্বাধীন করা তাদের অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল এবং সেটাই তারা করেছিল। বিনিময়ে বিশ কোটি জনসংখ্যার এক Monopoly বাণিজ্যিক বাজারে পরিণত করেছে তারা আমাদের দেশকে। যেখানে এমনিতেই বিশাল বাণিজ্যিক ঘাটতিসহ, অসম দ্বিপক্ষীয় অসংখ্য ব্যবধান বিদ্যমান। আমদানিনির্ভর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণও তাদেরই হাতে। এ দেশের মানুষ জানে না, যে দামে আজ চাল, ডাল ও পেঁয়াজ কিনছে কাল তার দাম কী হবে। একটা স্বাধীন দেশের জনগণের সাথে প্রতিবেশী দেশের এ আচরণ যদি বন্ধুত্বের হয়, তাহলে বাংলা অভিধানে ‘বন্ধুত্ব’ শব্দটির অর্থ নতুন করে লিখতে হবে।

আজ পরমুখাপেক্ষিতার এই দায়ভার আমাদের রাজনীতিকদের, সাধারণ জনগণের নয়, কথিত বন্ধুদেশটিরও নয়। এ দায় তাদের যারা বারবার কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক মুক্তির মিথ্যা আশ্বাসে জনগণকে প্রলুব্ধ করছে। আক্ষেপের সূরে বলতে হয় স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরও খাদ্যে, শিল্পে, প্রযুক্তিতে কোনো ক্ষেত্রেই আমরা স্বনির্ভর নই। সাইন বোর্ডসর্বস্ব জাতীয়তাবাদের মিথ্যা দেশপ্রেমের স্লোগানে লক্ষ্য উদ্দেশ্যহীন এক গন্তব্যের যাত্রী আমরা; যে জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির চূড়ান্ত পরিকল্পনা বা রোডম্যাপ রাজনীতিবিদরা আজো দিতে পারেনি। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশ নিজেদের উন্নতির এমন স্তরে নিয়ে গেছে যে, তাদের দেশে উন্নয়ন প্রকল্পের প্রয়োজন না থাকায়, আমাদের মতো দেশকে বিনিয়োগের নামে শোষণ ক্ষেত্র বিবেচনা করছে; পুঁজিবাদ চক্রান্তের নতুন সংস্করণে ফেঁসে যাচ্ছি আমরা। কারণ প্রযুক্তি ও সক্ষমতা না থাকায় পরনির্ভরশীলতাই আমাদের বাধ্য করছে বিনিয়োগকারীদের অসম শর্তে ঝুঁকি জেনেও তা গ্রহণ করতে। ভৌগোলিকভাবে এমনি এক স্থানে আমাদের অবস্থান, যেখানে নিজেদের মানচিত্র খুঁজে পেতে অন্য একটি দেশের মানচিত্রের ভেতরে অবস্থান খুঁজে নিতে হয়। ভাগ্যিস, বিধাতার আশীর্বাদে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত, না হলে আমাদের জনগণের সাথে কথিত বন্ধুরাষ্ট্রটির আচরণ কিরূপ হতো, তা বলাই বাহুল্য।

বৃহৎ একটা দেশ, সামরিক অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সব সক্ষমতা থাকার পরও, অর্ধশতাব্দী ধরে পার্শ্ববর্তী ক্ষুদ্র একটি দেশের সাথে যে কৌশলী বন্ধুত্বের ছদ্মবেশী অবন্ধুসুলভ আচরণ তারা করছে, তা নিতান্তই দুঃখজনক। তাই আমেরিকার নাকের ডগায় ফিদেল ক্যাস্ত্রোর ভেনিজুয়েলা কেউ আমাদের বানিয়ে দেবে না, আমাদেরই হয়ে উঠতে হবে। কারণ কথিত ‘বন্ধুদেশটি কাছে আছে, পাশে নেই’।

E-mail: ahkhanratan71@gmail.com