বন্দি রাজনীতি কি মুক্ত হতে চলেছে?

বন্দি রাজনীতি কি মুক্ত হতে চলেছে? এমন আভাস-ইঙ্গিত মিলছে নানা মহল থেকে। সরকারের সিদ্ধান্তে পুলিশি অ্যাকশনে রাজনীতি অনেকদিন ধরেই বন্দি। এর পেছনে বিদেশি শক্তির প্রচ্ছন্ন হাত রয়েছে। এর মাঝে নির্বাচনও হলো। সরকার গঠন হলো। কিন্তু সংকট থেকেই গেল।আন্তর্জাতিকভাবেও প্রশ্নবিদ্ধ রয়ে গেল নির্বাচন। এই মুহূর্তে উপজেলা নির্বাচন ঘিরে বড় দুই দলের ভেতরেই অস্বস্তি। সরকারের আদেশ অমান্য করে চলেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।  বিএনপি’র অবস্থা আরও টালমাটাল। দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত অমান্য করে একশো-এর কাছাকাছি প্রার্থী হওয়ার ঘটনা চলমান রাজনীতিতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। জাতীয় নির্বাচনে শত প্রলোভন সত্ত্বেও প্রার্থী হতে যাননি বিএনপি’র নেতাকর্মীরা।

 

উপজেলা নির্বাচনে কী এমন ঘটলো যে প্রার্থী হওয়ার জন্য দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করছেন! রাজনৈতিক পণ্ডিতরা বলছেন, স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা আর অপেক্ষা করতে রাজি নন। তারা বলছেন, লক্ষ্যহীন রাজনীতি বিএনপি’র ভবিষ্যতকে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এই অবস্থার মধ্যেও রাজনীতিতে এক ধরনের লড়চড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শাসকদলের ভেতরেও রাজনীতি মুক্ত করার ব্যাপারে কথাবার্তা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, এভাবে রাজনীতিকে ‘হাতকড়া’ পরিয়ে রাখা হলে আখেরে দেশের ক্ষতি হবে। আওয়ামী লীগের ক্ষতি তো হয়েই গেছে। কেউ কেউ বলছেন, ভারতের নির্বাচনের পর কিছু বিষয় হয়তো খোলাসা হবে। বাংলাদেশের পুরো রাজনীতির উপর ভারতের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এই অঞ্চলের রাজনীতি আর মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই সোচ্চার। বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে। ইদানিং ভারতের রাজনীতি নিয়েও তারা সরব। বাংলাদেশের বিগত নির্বাচনের আগে আচমকা নীরব হয়ে গিয়েছিল। কী কারণে তা স্পষ্ট নয়। এখন কেউ কেউ বলছেন, কিছুদিনের মধ্যেই বিষয়টি খোলাসা হবে। এসবই গুজব এবং অনুমাননির্ভর। ওদিকে বেগম খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তার নিয়ে ভিন্ন অবস্থানের কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বলেছে, বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। এতোদিন তারা কথা বলতো মেপে মেপে। ছিল অনেকটাই কৌশলী।

২০১৮ সনে  খালেদা জিয়াকে এক দুর্নীতি মামলায়  কারাগারে পাঠানো হয়। এক নির্বাহী আদেশে এখন তিনি বাসায় অবস্থান করছেন। সরকারের তরফে এটাই স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। বিএনপি কি এই সুযোগে কোনও ফায়দা তুলতে পারবে? অবস্থাদৃষ্টে তা মনে হয় না। কারণ দলটি অগোছালো। নেতায় নেতায় বিরোধ চরমে। নির্বাচন আর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। বলছেন, এভাবে নির্বাচন বর্জন করতে থাকলে জনবিচ্ছিন্নতার দিকে এগিয়ে যাবে দলটি। এতে লাভবান হবে সরকার। ২৮শে অক্টোবর কেন ব্যর্থ হলো এ নিয়েও কোনো মূল্যায়ন হয়নি এখনো। বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ব্যর্থতার কথা কবুল করেছেন। তবে কোনও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি। ভারত প্রশ্নে দলটির ভেতরে ভিন্নমত স্পষ্ট। স্থায়ী কমিটির কেউ কেউ বলছেন, এই বিষয়টি নিয়ে দলের ভেতরে কোনও আলোচনাই হয়নি। এর ফলে যে যার মতো বক্তব্য রাখছেন। যেমনটা দেখা যায় ‘ইন্ডিয়া আউট’ কর্মসূচি নিয়ে। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্যের পর তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেছেন কতিপয় নেতা। কিন্তু কেউ তলিয়ে দেখছেন না রিজভী এতোবড় সিদ্ধান্ত একা একা কি নিতে পারেন? নিশ্চয়ই এর পেছনে কোথাও থেকে উৎসাহ পেয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে, কোনো ‘আশ্বাস’ কি এখানে কাজ করেছে? যার জন্য তারা অপেক্ষায় রয়েছেন?

 

এই যখন অবস্থা, জাতীয় পার্টির নেতা জিএম কাদের তার অবস্থান আবারো খোলাসা করতে চেয়েছেন। যদিও তিনি দলের ভেতরেই নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছেন। নানা চাপের মধ্যে নির্বাচনে গিয়েছিলেন এমনটা জানিয়েছেন। তিনটি বৃহৎ শক্তি যারা এই সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে এটাও বলেছেন। নাম প্রকাশ না করলেও এটা স্পষ্ট যে- ভারত, চীন ও রাশিয়ার কথাই তিনি বুঝিয়েছেন। জিএম কাদের ইচ্ছে থাকলেও বেশিদূর যেতে পারবেন না – এটা নতুন করে কিছু বলার নেই। মেরুদণ্ড সোজা করা তার পক্ষে খুবই কঠিন। কারণ রওশনের জাতীয় পার্টিকে স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে তাকে মোকাবিলা করার জন্য। এটা এখন ওপেন সিক্রেট।

manbzamin