বড় নির্বাচনি ঐক্যের পথে বিএনপি

বাছির জামাল
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৮: ৩৮

 

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মেরূকরণ ততই স্পষ্ট হচ্ছে। দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনি ঐক্য নিয়ে শুরু হয়েছে জোরালো আলোচনা। কোন দল কার সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে বা আসন সমঝোতার ভিত্তিতে ভোটযুদ্ধে অংশ নেবেÑতা নিয়ে চলছে দর কষাকষি।

এরই মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদের আইনিভিত্তি এবং সেই অনুযায়ী আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েকটি দাবিতে ছয়টি দলকে নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করছে দেশের বড় বৃহত্তম ধর্মভিত্তিক দল জামায়াতে ইসলামী। যদিও এটিকে নির্বাচনি জোট বলতে রাজি নয় আন্দোলনে যুক্ত দলগুলো।

দলগুলোর দায়িত্বশীল নেতারা জানান, তারা আরো বৃহৎ জোট গঠনের কাজ করছেন। এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণতন্ত্র মঞ্চ ও সিপিবির নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোটও নির্বাচনকে সামনে রেখে নয়া মেরূকরণ করতে চায়। এর পাশাপাশি বিভিন্ন দল নিয়ে একটি বড় নির্বাচনি জোট গঠন করতে চায় দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি।

দলটি এরই মধ্যে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে যেসব জোট ও দল সম্পৃক্ত ছিল তাদের কাছে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা চেয়েছে। এসব দলের কিছু সম্ভাব্য প্রার্থীকে তারা গ্রিন সিগন্যালও দিয়েছে। এর বাইরে অন্যান্য দলের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা করছে বিএনপি। এর মধ্যে নির্বাচনি জোট গঠনে এনসিপির সঙ্গে বিএনপির পর্দার আড়ালে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বৃহত্তর নির্বাচনি জোট গঠন প্রক্রিয়া চালু আছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাদের সঙ্গে কথা বলেছি তা যথাসময়ে প্রকাশ করব।

বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় তাদের দল একটি বৃহৎ নির্বাচনি জোট গঠন করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমমনা দল ও আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমমনা দল ও জোটসহ অন্যান্য উদার গণতান্ত্রিক, ইসলামি ও আলেমদের সমন্বয়ে এ জোট গঠন করা হবে। যুগপতের দল ও জোটের কাছে এরই মধ্যে আসনের তালিকা চেয়েছে বিএনপি।

যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির মিত্র দল ও জোটগুলো হলোÑছয় দলের সমন্বয়ে গঠিত গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি), লেবার পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদ।

জানা গেছে, যুগপতের এ দলগুলোর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছে বিএনপি। দলটির নেতৃত্বে যে বৃহৎ নির্বাচনি মোর্চা হতে যাচ্ছে, সেখানে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য, গণফোরাম ও লেবার পার্টি থাকছে।

এ বিষয়ে ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার আমার দেশকে বলেন, বিএনপির সঙ্গে আমরা যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম। আগামী নির্বাচনেও একসঙ্গে অংশগ্রহণ করব। আমরা এরই মধ্যে বিএনপির আহ্বানে ৩০-৩৫টি আসনের একটি তালিকা দিয়েছি।

গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে যে নির্বাচনি জোট হতে যাচ্ছে, তাতে আমরা আছি। ইতোমধ্যে আমরা সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকাও জমা দিয়েছি।

এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেন, ২০১২ সাল থেকে তার দল বিএনপির সঙ্গে আছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিয়ে যে মেরূকরণ হচ্ছে, তাতেও বিএনপির সঙ্গে থাকবে তার দল।

গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সাবেক সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, তারা বিএনপির উদ্যোগে যে নির্বাচনি জোট হতে যাচ্ছে, তাতে থাকছেন। এরই মধ্যে তাদের জোট সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকাও জমা দিয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ আমার দেশকে বলেন, তার দল বিএনপির জোটের সঙ্গে আছে। পার্থ ঢাকার একটি আসন থেকে নির্বাচন করার কথা জানিয়েছেন।

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের প্রধান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে আমাদের জোট ছিল। আগামীতেও যেকোনো মেরূকরণে বিএনপির সঙ্গে থাকব।

লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান জানান, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি যে জোট করতে যাচ্ছে, তার সঙ্গে তার দল রয়েছে।

ইলেকটোরাল পলিটিক্স জেনেই

সিদ্ধান্ত নেবে গণতন্ত্র মঞ্চ

যুগপতের অন্যতম শরিক জোট গণতান্ত্রিক মঞ্চকে নয়া নির্বাচনি মেরূকরণে চায় বিএনপি। জানা গেছে, এ নিয়ে জোটের নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠাানিকভাবে কথাও বলেছে দলটি। মঞ্চের কাছে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকাও চেয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চ এরই মধ্যে ১২০টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু বিএনপির কাছে এখনো তালিকা দেয়নি।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, বিএনপির সঙ্গে আমরা যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম। সামনে নির্বাচন আসছে। কোনো জোট নয়, তাদের সঙ্গে আমাদের আসন সমঝোতার আলোচনা অব্যাহত আছে।

তিনি বলেন, অন্যদিকে আমাদের জোট গণতন্ত্র মঞ্চ দেশের উদার গণতন্ত্রমনা দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছেÑজোটটি আরো সম্প্রসারণ করা যায় কি না তা এসব আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়া। জুলাই সনদ নিয়ে এরই মধ্যে আমাদের জোট ৩০ দলের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা বিএনপির সঙ্গে শুরু থেকেই আছি। তারা তালিকা চেয়েছে, আমরা তালিকা তৈরি করছি। ইতোমধ্যে ১২০টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছি। এর পরই বৈঠক হবে বিএনপির সঙ্গে। তবে শুধু আসন সমঝোতাই সবকিছু নয়, রাজনীতিটাও দেখব।

গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, বিএনপির সঙ্গে বিভিন্ন আন্দোলনে ছিলাম, এখনো আছি। তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়। তারা আমাদের কাছে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকাও চেয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছেÑইলেকটোরাল পলিটিক্স (ভোটের রাজনীতি) নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কথাবার্তা হবে। এর ওপরই নির্ভর করছে আসন সমঝোতা হবে কি না বা ওই নির্বাচনি মেরূকরণে জোটে যোগ দেব কি না।

তফসিল ঘোষণার পরই আসন সমঝোতা বা নির্বাচনি জোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে গণঅধিকার পরিষদ। এ বিষয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, আমরা বিএনপির সঙ্গে ২০২২ সাল থেকে আছি। ২০২৪ সালে তো আমরা একসঙ্গে ফ্যাসিবাদকে তাড়িয়েছি। আমরা ইতোমধ্যে ৫০টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছি। বাকি আসনেও ঘোষণা করব।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যখন একসঙ্গে বসে, তখন জোট নিয়ে অনেক ধরনের আলোচনা হয়। আমরা বিএনপি, এমনকি জামায়াতের সঙ্গেও জোট করার সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছি। নিজেদের মধ্যে জোট করার বিষয়েও আলাপ হয়েছে। তবে সবকিছু নিয়ে আলোচনা করব তফসিল ঘোষণার পর।

এ ব্যাপারে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, বিএনপির সঙ্গে সরাসরি বা যুগপৎ কোনো ধরনের জোটে যুক্ত না হয়েই এবি পার্টি স্বতন্ত্রভাবে আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সামর্থ্য অনুযায়ী ভূমিকা রেখেছি। গণঅভ্যুত্থানের পর বিএনপি নেতাদের সঙ্গে জুলাই সনদ চূড়ান্তকরণ এবং এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আগে-পরে বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনি জোট নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। এবি পার্টি এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটের ব‍্যাপারে অনানুষ্ঠানিক কিছু আলোচনা হলেও এ ব‍্যাপারে উল্লেখ করার মতো এখনো কোনো ফরম্যাট দাঁড়ায়নি।

এদিকে বিএনপি তার বলয়ে আনার জন্য সিপিবির সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা করছে। একটি সূত্র জানায়, বিএনপির কয়েকজন নেতা অনানুষ্ঠানিকভাবে সিপিবির সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে সিপিবির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন আমার দেশকে বলেন, এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। আসলে কার সঙ্গে আমাদের নির্বাচনি ঐক্য হবে, তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। এর আগে চলতি বছরের এপ্রিলে সিপিবি ও বাসদের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক করে বিএনপি। বৈঠকটি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আদায়ে বৃহত্তর ঐক্যের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়।

বিএনপির জোটে এনসিপির যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো জোটে যাবে, নাকি নিজেরাই জোট করবেÑএসব চিন্তা নিয়ে কাজ করছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আদর্শে গঠিত দল এনসিপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাজনৈতিক লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান আরিফুল ইসলাম আদীব আমার দেশকে বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও উচ্চকক্ষে পিআর নিয়ে আমরা এতদিন ব্যস্ত ছিলাম। এজন্য এখনো কোনো জোটে যাওয়ার আলোচনায় যাইনি।

তিনি বলেন, তবে গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, গণতন্ত্র মঞ্চ ও এনসিপির দুটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সংস্কারের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনের কোনো মেরূকরণ তৈরি করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি দলের নির্বাহী কমিটির এক সভায় বিএনপির সঙ্গে জোট করা এবং নির্বাচনের আগে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা চূড়ান্ত করার প্রস্তাব দেন অনেক নেতা। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, সংসদে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব রাখতে চায় এনসিপি।

সূত্র জানায়, এনসিপির অপর একটি অংশ জামায়াতের সঙ্গেও জোট করতে চায় অথবা বিকল্প হিসেবে নতুন একটি জোট করতে চায়। এর অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর উত্তরায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসায় গণতন্ত্র মঞ্চ, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপির নেতারা বৈঠক করেন।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেন, বৈঠকটি ছিল মূলত পারস্পরিক বোঝাপড়ার; জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং আগামী নির্বাচন সামনে রেখে কে কী ভাবছেন, সেটা নিয়ে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হওয়া অর্থাৎ ঐক্যবদ্ধভাবে পথচলা যায় কি না, নিজেরা জোটবদ্ধ হয়ে অন্য বৃহৎ জোটের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায় কি না, যারা জোট করতে আগ্রহী তাদের সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নেওয়াÑআলোচনাটা মোটামুটি এর ভেতরই সীমাবদ্ধ ছিল।

এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর এনসিপি, এবি পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে গণতন্ত্র মঞ্চ। অবশ্য সেখানে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সৃষ্ট দূরত্ব কমানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।

জোট কিংবা আসন সমঝোতা নিয়ে এনসিপির সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা হচ্ছে কি নাÑজানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তাদের সঙ্গে আমাদের পলিটিক্যাল যোগাযোগ আছে, আলাপ-আলোচনা আছে।

ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে নয়া মেরূকরণ হচ্ছে, সেটা মাথায় রেখে জামায়াতের বাইরে ইসলামি দল ও আলেমদের একত্রিত করার কাজ করছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ ধর্মীয় দলুগলোর সঙ্গে আলোচনা করছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

এরই মধ্যে চাউর হয়েছে, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি ও হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীবকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনটি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হয়েছে।

দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির সঙ্গে জোট করার ব্যাপারে তাদের দল ইতিবাচক। আসন ভাগাভাগি নিয়ে মোটামুটি আলোচনাও হয়েছে। বিএনপির এক নীতিনির্ধারক জানান, তার দল জমিয়তকে আসন ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক।

এ বিষয়ে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মনির হোসাইন কাসেমী বলেন, জোটের বিষয়ে অনেক দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হককে লালবাগের আসনটি ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে এ নিয়ে কেউ উদ্ধৃত হতে চান না।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এখন উচ্চকক্ষে পিআরসহ কয়েকটি দাবিতে জামায়াতের সঙ্গে আন্দোলন করছে। সংগঠনটির আমির মাওলানা মামুনুল হক এ নিয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, তারা এখন পর্যন্ত কোনো নির্বাচনি জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেননি। আপাতত তারা ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে আছেন।

এ বিষয়ে মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, আগামী ২৫ অক্টোবর সংগঠনের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য নেওয়া হবে। তারপর ওই দিন বিকালে মজলিসে শূরার বৈঠকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস কোন জোটে যাবে।

আলেমদেরও পাশে চায় বিএনপি

দেশের আলেম সমাজ ও তাদের গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। এজন্য এসব আলেমকেও পাশে চায় বিএনপি। এজন্য দলটির নেতারা ইতোমধ্যে হাটহাজারী মাদরাসা, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির, ছারছীনা পীর, আলিয়া মাদরাসাধারার যেসব মুরুব্বি আছেন, তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন।

বিএনপি বলেছে, এর উদ্দেশ্য একটাইÑবাংলাদেশের সব জনগোষ্ঠীকে আমরা একত্রিত ও ঐক্যবদ্ধ করে এমনভাবে দেশ পরিচালনা করতে চাই, যেখানে বিভক্তি থাকবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here