বড় দলগুলো অংশ না নিলে নির্বাচনের বৈধতা শূন্যের কোঠায় পৌঁছাতে পারে: সিইসি

logo

স্টাফ রিপোর্টার

৭ এপ্রিল ২০২৩, শুক্রবার

mzamin

বড় রাজনৈতিক দলগুলো অংশ না নিলে নির্বাচনের আইনগত ভিত্তি নিয়ে কোনো সংকট না হলেও তার বৈধতা শূন্যের কোঠায় পৌঁছাতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গতকাল নির্বাচন কমিশন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।  কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, শতভাগ সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করা ইভিএমেও যেমন পুরোপুরি সম্ভব নয়, ব্যালটেও সম্ভব নয়। বিষয়টা আপেক্ষিক হতে পারে, অধিকতর ভালো। যেটা আমরা সব সময় বিশ্বাস করেছিলাম যে যান্ত্রিক কারণে ব্যালটের চেয়ে ইভিএমে ভোটটা অনেক বেশি নিরাপদভাবে গ্রহণ করা সম্ভব হয়। কাজেই শতভাগ নিশ্চিত করার কথা আমি বলতে চাচ্ছি না। ইভিএম ছাড়া নির্বাচন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ইভিএম বা ব্যালট কিন্তু আমাদের নির্বাচনের মোটেই বড় চ্যালেঞ্জ নয়। আমাদের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজনৈতিক সংকট। প্রধান দলগুলো অংশগ্রহণ করবে কি করবে না, সেটা হচ্ছে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। ইভিএম সংশ্লিষ্ট শুধু পোলিং প্রসেসের (নির্বাচনী প্রক্রিয়া) সঙ্গে।

আর নির্বাচনে যদি বড় দলগুলো একেবারেই অংশগ্রহণ করলো না, নির্বাচনের আইনগত ভিত্তি (লিগ্যালিটি) নিয়ে কোনো সংকট হবে না, তবে বৈধতা (লেজিটিমেসি) শূন্যের কোঠায় চলে যেতে পারে। ইভিএম থেকে চাপে সরে এসেছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ইভিএম থেকে আমরা সরেছি মাত্র সেদিন। এটা নিয়ে কিছু কিছু সংশয় বাজারে দেখা দিয়েছে। সেটি হলো এটা কী চাপে করা হলো, নাকি ওটা করা হলো। এটা নিয়ে আমরা দীর্ঘ সময় আলোচনা করেছি। ইভিএম নিয়ে কোনো একটি দলের আশা ছিল ৩০০টি আসন। সবকিছু শুনে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, ইভিএমে আমরা ১৫০টি আসনে ভোট করবো। এজন্য ৯ হাজার কোটি টাকার একটা প্রকল্প দিয়েছিলাম। উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে সেটাতে সরকার এগ্রি (অনুমোদন না দেয়া) করতে পারেনি। এরপর আরও একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছিল উল্লেখ করে সিইসি বলেন, আমরা যদি ৮০ থেকে ৯০টা আসনেও নির্বাচন করতে পারি, এজন্য ১২০০ কোটি টাকার প্রস্তাব পাঠাই। সেখানে বলা ছিল, ৪০ হাজার মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে, বাকি যে ১ লাখ ১০ হাজার আছে, সেগুলো যদি আমরা মেরামত করে নিতে পারি। সেটাও এগ্রি করতে পারেনি সরকার। তখন আমরা দেখলাম ২৫ থেকে ৩৫টি আসনে নির্বাচন করার মতো ইভিএম রয়েছে। সিইসি বলেন, আমাদের মধ্যেও আমরা দ্বিধাবিভক্ত হলাম। আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আলোচনা করলাম। আমাদের দু’জন কমিশনার বললেন, ২৫ থেকে ৩০টা আসনে আমরা নির্বাচন করে ফেলি। আমরা দেখলাম ওদের লাইফটাইম শেষ হয়ে আসবে। একটা অনিশ্চয়তা, দোদুল্যমানতা আমাদের মধ্যে কাজ করেছে। আমি নিজেও তখন এর পক্ষে ছিলাম না। আমরা তাহলে আর ইভিএমেই যাবো না। আমাদের আরও দু’জন সহকর্মী ইভিএমের পক্ষে থাকেননি। দীর্ঘ সময় আলাপ-আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইসি সব দলকেই ভোটে চায় জানিয়ে সিইসি বলেন, কাউকে জোর করে আমরা আনতে পারছি না। কিন্তু যেটা করার সে আপিল করেই যাচ্ছি। আমাদের ডাকে সাড়া দেবেন তাও নয়। সংকটটা যদি রাজনৈতিক দলগুলোর হয়ে থাকে অথবা সরকারি দলের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের হয়ে থাকে, আমরা বলবো সে রাজনৈতিক সংকটগুলো আপনারাই নিরসন করলে নির্বাচনটা সহজ ও ইসির জন্য অনুকূল হয়ে যাবে। রাজনৈতিক সংকট সমাধানে ইসির ভূমিকা না রাখার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এখানে ইসির কোনো বড় রোল প্লে করতে পারবে না। এটাই আমাদের বড় রোল-প্লিজ আসেন নির্বাচনে। আপনারা নিজেদের মধ্যে সংলাপ করুন, বিরাজমান দূরত্ব ও সংশয়, বিরোধ থাকলে তা মিটিয়ে ফেলেন। এ কথায় বলেছি, সব দলগুলো অংশগ্রহণ করলে গণতান্ত্রিক চেতনা থেকে সেই নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ও অনেক প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। সুষ্ঠু ভোট করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে সিইসি বলেন, আমাদের চেষ্টার ত্রুটি থাকবে না। সুষ্ঠু ভোট করতে চেষ্টা করবো। এটা সত্য, ব্যালটে রিগিং (জালিয়াতি) প্রতিহত করা যতটা কষ্টকর, ইভিএমে মোটেই অতটা কষ্টকর নয়। অনেকে বলে থাকে-ব্যালটে রাতে ভোট হয়ে গেছে, সত্য মিথ্যা আমি একেবারেই জানি না। কিন্তু পারসেপশন ক্রিয়েট করেছে রাতেও ভোট হতে পারে। ইভিএম কিন্তু সকাল ৮টার আগে চালুই হবে না, এটা সো অটোমেটিক। এখানে ন্যূনতম সম্ভাবনা ছিল না, ওদিক থেকে ইভিএমে বেশকিছু ইতিবাচক দিক ছিল। তিনি বলেন, কেন্দ্রের নিরাপত্তা সবচেয়ে বেশি ভালো হয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বীপূর্ণ হলে। ধরেন কোনো দল অংশ নিল না, একটা দল অংশ নিল, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে সন্দেহ নেই। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো থাকলে কেন্দ্রে ভারসাম্য হয়, যা আর্মি, নেভি, র‌্যাব, পুলিশ করে না। সেখানে ভারসাম্য রক্ষা করতে সনাতন পদ্ধতি হচ্ছে দল থাকবে, এজেন্ট থাকবে। কেন্দ্রের বাইরেরটা আমরা দেখতে পারবো। কিন্তু ভেতরেও কারচুপির সুযোগ থাকে। এটা রাজনৈতিক দলগুলো বুঝবেন, অংশগ্রহণমূলক ভোটের জন্য তারা আলোচনা করে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি এনে দিলে আমাদের সহায়ক হবে।