দেশের শেয়ারবাজারে গতকাল বুধবার বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ছিল একেবারেই নগণ্য। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সহিংসতার ঘটনায় কারফিউ জারির কারণে গত তিন কার্যদিবস শেয়ারবাজারে কোনো লেনদেন হয়নি। কারফিউ শিথিল ও ব্যাংক চালুর ফলে গতকাল বুধবার শেয়ারবাজারে তিন ঘণ্টার লেনদেন শুরু হয়েছে। তবে সহিংসতা-পরবর্তী প্রথম কার্যদিবসে শেয়ারবাজারে বড় দরপতন ঘটেছে।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ৯৬ পয়েন্ট বা পৌনে ২ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৩৫১ পয়েন্টে নেমেছে। মোট লেনদেন হয়েছে ১৫৯ কোটি টাকার। চলতি বছরে এটিই এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন লেনদেন। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে এখনো পুরোদমে ইন্টারনেট সেবা চালু হয়নি। এ কারণে এদিন শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের বড় অংশই লেনদেনে অংশ নিতে পারেননি। বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ না থাকায় সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে কম শেয়ার হাতবদল হয়েছে। যদিও এদিন সব ব্রোকারেজ হাউস লেনদেনে অংশ নেয়।
স্বাভাবিক সময়ে শেয়ারবাজারে সকাল ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত একটানা সাড়ে চার ঘণ্টা লেনদেন চলে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গতকাল লেনদেন হয়েছে বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা। এদিন লেনদেন শুরুর আগেই ২৭৬টি ব্রোকারেজ হাউস ডিএসইর লেনদেনযন্ত্রের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। পরে এ সংখ্যা আরও বেড়ে ২৯১টিতে দাঁড়ায়। স্বাভাবিক সময়েও ব্রোকারেজ হাউসগুলোর এ রকম অংশগ্রহণ দেখা যায়। সেই হিসাবে সক্রিয় সব ব্রোকারেজ হাউসই গতকাল লেনদেনে অংশ নিয়েছে বলা যায়। তবে বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ কম থাকায় বাজারে লেনদেন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। সেই সঙ্গে দরপতন হয়েছে বেশির ভাগ শেয়ারের।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ যে একেবারেই নগণ্য ছিল, তা বোঝা যায় গতকালের হাতবদল হওয়া সিকিউরিটিজ এবং ক্রয় বা বিক্রয়াদেশের সংখ্যা দেখে। ঢাকার বাজারে গতকাল মাত্র ৪ কোটি ৩৫ লাখ শেয়ার হাতবদল হয়। স্বাভাবিক সময়ে যখন ৫০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়, তখন ১৫ থেকে ২০ কোটি শেয়ারের হাতবদল হয়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার মধ্যেও শেয়ারবাজারে প্রায় ১১ কোটি শেয়ার হাতবদল হয়েছিল।
ডিএসইতে গতকাল ট্রেডের সংখ্যা ছিল ৩৮ হাজার ৩৯১। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা ৩৮ হাজার ৩৯১টি আদেশের মাধ্যমে শেয়ার বিক্রি বা কিনেছেন। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ক্রয় বা বিক্রয়ের যে আদেশ দেন, সেটি ট্রেড সংখ্যা বা হাওলা হিসেবে বিবেচিত হয়। ডিএসই ক্রয় বা বিক্রয়াদেশের যেকোনো একটি বিবেচনায় নিয়ে ট্রেড বা হাওলার সংখ্যা হিসাব করে। গতকাল ডিএসইতে যে ক্রয়াদেশ বা ট্রেড সংখ্যা ছিল, তা চলতি বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ঢাকার বাজারে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার লেনদেনের আদেশের সংখ্যা ছিল প্রায় ৯৭ হাজার। সেই হিসাবে সর্বশেষ কার্যদিবসের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ বিনিয়োগকারী সক্রিয় ছিলেন বাজারে।
ঢাকার বাজারে গতকাল ৩৯০ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে আগের তুলনায় দাম বেড়েছে ২০টির, কমেছে ৩৫৫টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১৫টির। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ কারণে গতকাল বাজারে ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতাই ছিল বেশি। কারণ, লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করে দেন।
Prothom alo