ঢাকা
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু বলেছেন, যাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে এবং যে নেতা দেশ স্বাধীন করেছেন, সেই নেতাকে হত্যা করা কোনো চাট্টিখানি ষড়যন্ত্র ছিল না। এটা মহাপরিকল্পনা ছিল। এর ভেতরে বহু সামরিক জান্তা ছিলেন, বহু আন্তর্জাতিক যড়যন্ত্র ছিল।
আজ শনিবার ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড: অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র ও মার্কিন যোগসাজশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন আমির হোসেন আমু। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
এ সময় ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধু বাকশাল ঘোষণা করার পর প্রতি জেলায় আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট বাকশালের কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রতিটি জেলায় গভর্নর নিয়োগ করা হয়। এই পাঁচজন নেতা ও গভর্নরকে ঢাকায় নিয়ে এসে আলাদা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রতিটি জেলার ৫ জন নেতার সঙ্গে ৫০০ জন করে কর্মী এসেছিলেন। এটা হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারীরা অবগত ছিলেন। অর্থাৎ কোনো জেলা থেকে যাতে প্রতিবাদ না হয়।
একটি জেলা থেকে যদি প্রতিবাদ হতো তাহলে সারা দেশে আগুন জ্বলে উঠত বলে মন্তব্য করেন আমির হোসেন আমু। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, কেন আমাদের নেতা–কর্মীরা সেদিন ঘোষণা দিতে পারলেন না। কী দ্বিধাদ্বন্দ্ব, কী চিন্তা তাঁদের ছিল, এটা এখন বলতে চাই না।’
আলোচনা সভায় অংশ নেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। মুক্তিযুদ্ধের পর পঁচাত্তরের মতো একটি ঘটনা ঘটবে, তা কল্পনা করতে পারেননি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা একাত্তরের পরে আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক বা তৎকালীন সরকারের পক্ষ–বিপক্ষ ছিলাম। এটা দিনের মতো পরিষ্কার। সংসদে গণতন্ত্রের চর্চা হয়েছে। ৭৩–এ নির্বাচন হয়েছে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অনেক দল ভোট করেছে এবং পার্লামেন্টে (সংসদে) ও পার্লামেন্টের বাইরেও ছিল। এই হত্যাকাণ্ড কেবল মাত্র একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।’
১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড শুধু কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল সেনা সদস্যের হঠকারিতা নয় বলে মন্তব্য করেন হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, এটা ব্যক্তি মুজিবকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নয়। একাত্তরের পাকিস্তানি রাজাকার, আলবদরদের পরাজয়ের প্রতিশোধের ঘটনা। এটা বাংলাদেশকে পাকিস্তানের দিকে ঠেকে দেওয়ার একটি মহাচক্রান্ত।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় অনুষ্ঠানে তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনানো হয়। এতে রাশেদ খান মেনন বলেন, অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু হত্যায় মার্কিন যোগসাজশের বিষয়টি সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের ‘মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড’ বইতে দেখা যায়। মিজানুর রহমান খানের ওই বইয়ে তিনি উল্লেখ করেছেন, ১৯৭২ সালে খুনি ফারুক অস্ত্র সংগ্রহের নামে মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ করেছিলেন। ১৯৭৪ সালের এপ্রিলে মেজর ফারুক–রশিদ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সরকারবিরোধী কোনো অভ্যুত্থান হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কী মনোভাব হবে সেটা জানতে চাওয়া হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) সম্পৃক্ত বলে মন্তব্য করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে, বিশেষ করে সেই নেতা যদি স্বাধীনচেতা হয়েছিলেন, সিআইএ কাউকে ছাড়েনি। তাদের সম্পৃক্ততা খুব স্বাভাবিক। মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলৎজ তাঁর বইতে স্পষ্টভাবে দেখিয়েছেন, আমেরিকা সম্পৃক্ত। আর এটা খুব স্বাভাবিক। কারণ, মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকা বাংলাদেশের বিপক্ষে ছিল ও জামায়াতের পক্ষে ছিল।
প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা ছিল, পটভূমি কীভাবে তৈরি হয়েছিল, তখনকার রাজনীতিক, লেখক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা কী ছিল, তা নিয়ে গবেষণার তাগিদ দেন। তিনি বলেন, তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কেন হয়েছিল সেটাও ভাবতে হবে। কারণ, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর অনেক আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ১৪ দলগুলো রাজনৈতিক মতানৈক্য থাকতে পারে। কিন্তু তেলের দাম আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এক নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়ন করতে হবে। আদর্শিক জোট হিসেবে ১৪ দলকে টিকে থাকতে হবে।