- গাজীপুর সংবাদদাতা ২০ এপ্রিল ২০২০
বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে সোমবার রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে গাজীপুরের কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এ সময় বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে রাখে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার আরিফ রাইয়ানসহ শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গাজীপুরের অধিকাংশ কারখানা ছুটি ঘোষণা করে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। হঠাৎ করে ছুটি ঘোষণা করায় নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে জেলার বেশকিছু কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ পাওনাদি পরিশোধ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এসব কারখানার শ্রমিকরা গত কয়েক দিন ধরেই মার্চ মাসসহ তাদের পাওনা পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল।
ইতোমধ্যে কিছুসংখ্যক কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করলেও বেশ কিছু কারখানার শ্রমিকদের পাওনাদি এখনো পরিশোধ করা হয়নি। সোমবারে জেলার সাত থেকে আটটি কারখানার পোশাকশ্রমিকরা বেতন পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
তিনি জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বোর্ডবাজার এলাকায় অবস্থিত কনসিস্ট এ্যাপারেলস পোশাক কারখানার শ্রমিকরা গত কয়েক দিন ধরেই মার্চ মাসসহ তাদের পাওনাদি পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল। বেতন-ভাতা পরিশোধ না করায় শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়। সোমবার সকালে শ্রমিকরা কারখানার গেইটে জড়ো হয়ে বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও মালিক পক্ষের কাছ থেকে কোনো আশ্বাস না পাওয়ায় শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। একপর্যায়ে শ্রমিকরা কারখানার পাশের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে।
শ্রমিকদের অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয়দিকে যানবাহন আটকা পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধকারীদের মহাসড়কের ওপর থেকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়। বিকেলে পুলিশের মধ্যস্থতায় কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে শ্রমিকদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর মো: রেজ্জাকুল হায়দার জানান, সাতাইশ এলাকার এমএইচ ফ্যাশন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা একই দাবিতে সকাল থেকে কারখানার গেইটে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে কর্তৃপক্ষের সাড়া না পেয়ে শ্রমিকরা সকাল ১০টার দিকে কারখানার পাশের সড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
এ সময় বেতন পরিশোধের ব্যাপারে মালিক পক্ষের সাথে শ্রমিকদের আলোচনার আশ্বাস দিয়ে সড়কের ওপর থেকে তাদেরকে সরিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে শ্রমিকরা বেতন পরিশোধের দাবিতে বিকেল পর্যন্ত কারখানার সামনে অবস্থান করছিল। ওই এলাকার ওয়াশিং কারখানার শ্রমিকরাও একই কারণে দুপুর পর্যন্ত বিক্ষোভ করেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অপরদিকে গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর রেজাউল করিম রেজা জানান, মার্চ মাসের ২০ দিনের বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে সোমবার সকাল হতে কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকার এসকো ওভেন লিমিটেড পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। ওই মাসের ১০ দিনের বেতন ইতোমধ্যে শ্রমিকদের পরিশোধ করা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা হয়। দুপুরে আলোচনা শেষে আগামী ২৩ এপ্রিল বেতন-ভাতা পরিশোধের আশ্বাস দেয়া হলে শ্রমিকরা তাদের আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করে ওই এলাকা ত্যাগ করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার সিদ্দিকুর রহমান জানান, শ্রমিক অসন্তোষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে আনতে মালিক পক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মালিক পক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে বেগ পেতে হয়।
তিনি আরো জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গাজীপুরের আড়াই হাজার কারখানার অধিকাংশ কারখানা ছুটি ঘোষণা করে বন্ধ করে দেয়া হয়। ইতোমধ্যে গাজীপুর জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে সুরক্ষা পোশাক পিপিই, মাস্কসহ গোখাদ্য ও ওষুধ উৎপাদনের জন্য প্রায় ১২০টি কারখানা চালু রাখা হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরেই লকডাউন ভেঙ্গে এসব বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্নস্থানে তাদের মার্চ মাসের বেতন-ভাতাসহ বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে।