ফ্যাসিবাদের দালালী করেও রেহাই পেলেন না ড. ইমতিয়াজ আহমদ

 আমার দেশ
৭ এপ্রিল ২০২৩

ড. ইমতিয়াজ আহমদ-ছবি : সংগৃহীত

ড. ইমতিয়াজ আহমদ-ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফ্যাসিবাদের দালালী করেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. ইমতিয়াজ আহমদের রেহাই মিলেনি। বিভিন্ন ইস্যুতে আওয়ামীপন্থী টেলিভিশন গুলোর টকশো’তে অংশ নিয়ে ফ্যাসিবাদের দালালী করতে দেখা গেছে তাঁকে। কেউ কেউ তখন বলতেন ইমতিয়াজ আহমদ আগামীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তাই এমন দালালি করছেন। যদিও অবসরে যাওয়ার আগে ভিসি হওয়া তাঁর কপালে জুটেনি।

শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এখন অভিযোগ ৭১-এর পরাজিত শক্তির দোসর ছিলেন তিনি। তাঁরই সহকর্মীরা এই অভিযোগ তুলেছেন। এনিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে তাঁকে ১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তির দোসর বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

শুক্রবার (৭ এপ্রিল) ঢাবি শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তাঁকে দোসর বলেই শেষ করেনি। তার বিরুদ্ধে তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণে দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. নিজামুল হক ভূইয়া ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. জিনাত হুদা।

বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর ও জেনোসাইড স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ, তার লেখা বই (শিরোনাম: হিস্টোরিসাইজিং ১৯৭১ জেনোসাইড স্টেট ভার্সেস পার্সন)-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ই মার্চ ভাষণ শেষে ‘জয় বাংলা’র সাথে ‘জয় পাকিস্তান’ বলেছেন বলে দাবি করেছেন (পৃ. ৮০)। এছাড়াও একই বইয়ে একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে অযথা বিতর্কের অবতারণা করেছেন (পৃ. ১৫ ও ১৬) ও ১৯৭১-এর গণহত্যার বিচার না হওয়ার পিছনে বিভিন্নভাবে বঙ্গবন্ধু ও তার সরকারকে দায়ী করেছেন (পৃ. ১২, ১৩) এবং একাত্তরের গণহত্যার বিচারের ক্ষেত্রে ওই সময়ে বাঙালীদের দ্বারা বিহারীদের হত্যার বিচার করা উচিত বলে দাবি করেছেন (পৃ. ৮১-৮২)’।
উল্লেখ্য, ইতিহাসের ঘটনাবলি নিয়ে ইমতিয়াজ আহমদের তথ্য ও বিশ্লেষণকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা ন্যাকারজনক ইতিহাস বিকৃতি বলে মনে করছেন। তারা তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইমতিয়াজ আহমদের লেখা গ্রন্থটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছেন।

শিক্ষক সমিতির আওয়ামীপন্থী নেতারা মনে করে, উপরোক্ত বিষয়গুলো ইতোমধ্যে রাষ্ট্রীয় ও একাডেমিকভাবে সুরাহা হয়েছে। এগুলো নিয়ে অযথা বিতর্ক তৈরির সুযোগ নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৭ই মার্চের ভাষণ যেটি তিনি সমাপ্ত করেছিলেন ‘জয় বাংলা’ বলে সেই ভাষণটি ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল হিসেবে স্বীকৃত।’ বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, ‘জোনোসাইড স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ইমতিয়াজ আহমেদ যে ‘জয় পাকিস্তান’ শ্লোগানের কথা বলছেন তা একদিকে যেমন ইতিহাস বিকৃতির অকাট্য প্রমাণ ঠিক একইভাবে আন্তর্জাতিক পরিসরে স্বীকৃত ‘জয় বাংলা’ সম্বলিত বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণটিকে চ্যালেঞ্জ করণের অপচেষ্টা।’

বিবৃতিতে তাদের ভাষায় উল্লেখ করা হয়, ‘এদেশে একমাত্র ৭১-এর পরাজিত শক্তিই উপরোক্ত নিষ্পত্তিকৃত বিষয়সমূহ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিতর্কিত করা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা করে। প্রফেসর ইমতিয়াজ তার গ্রন্থে একই অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে ৭১-এর পরাজিত শক্তির দোসর হিসেবে কাজ করেছেন।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি তাকে অনতিবিলম্বে জেনোসাইড স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান ও তার গ্রন্থে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির তদন্তের জন্য সিন্ডিকেট কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস বিষয়ে পণ্ডিত শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি প্রণয়নের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছে। একইসাথে শিক্ষক সমিতি প্রফেসর ইমতিয়াজ আহমেদের বই-এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে বলেও বিবৃতি উল্লেখ করা হয়।