প্রকাশ : সোমবার ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:৫৫

পতিত স্বৈরাচার ফের ফিরে আসার মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গোয়েন্দা রিপোর্টসহ নানা সূত্রে তাদের ভয়ঙ্কর সব ষড়যন্ত্রের খবর প্রকাশ পাচ্ছে। বলা হচ্ছে, সরকার সতর্ক আছে এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
খবর অনুযায়ী, কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে মাঠে নামানো হচ্ছে। এরপর নাশকতার মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে জনমনে সরকারবিরোধী অবস্থান তৈরি করা হবে। এ জন্য দেদার অর্থ ঢালা হচ্ছে দেশ-বিদেশ থেকে। বিদেশে পালিয়ে যাওয়া এবং দেশে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের নেতা এবং তাদের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এ নৈরাজ্য সৃষ্টির কাজে অর্থের জোগান দিচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল করেছে। পুলিশের ওপর হামলা, আসামি ছিনিয়ে নেয়া এমনকি পুলিশের হেফাজতে থাকা অপরাধীকে ষড়যন্ত্রমূলক কাজে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
একটি বিষয় স্পষ্ট করা ভালো যে, পুলিশ বাহিনীকে এখনো পুরোপুরি সক্রিয় করা যায়নি। সেনাবাহিনী মাঠে আছে। সবার জানা, নাশকতার আরেক নাম আওয়ামী লীগ। তারা পারে না হেন কোনো কাজ নেই। ১৯৯১ থেকে ’৯৫ পর্যন্ত প্রায় লাগাতার হরতালের নামে যে সঙ্ঘবদ্ধ সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়; তাতে দলটির ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা স্পষ্ট। এর বাইরে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর দেশে একের পর এক ভয়ানক নাশকতার ঘটনা অনেকের মনে আছে।
২০০১ সালের জানুয়ারিতে পল্টন ময়দানে সিপিবির জনসভায় বোমা হামলায় পাঁচজন নিহত ও অনেকে আহত হন। এপ্রিলে রমনা বটমূলে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে উৎসবমুখর মানুষের ওপর গুচ্ছ বোমা হামলায় নিহত হয় ১০ জন। জুনে নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের জনসভায় বোমা হামলায় নিহত হয় ২২ জন। এরপর ঘটে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের অবিশ্বাস্য গ্রেনেড হামলা। এসব নাশকতার পেছনে কারা ছিল কখনো জানা যায়নি। তবে ঠাণ্ডামাথায় নিরীহ মানুষের ওপর কারা এমন হত্যাযজ্ঞ চালাতে পারে জনমনে তার একটা ধারণা আছে।
শুধু বিরোধী দলে থাকতে আওয়ামী লীগ উন্মত্ত হয়ে ওঠে তা নয়। ক্ষমতায় থাকলে তাদের কর্মকাণ্ড আরো বেশি মারাত্মক ও সুদূরপ্রসারী হতে পারে। তার প্রমাণ ২০০৯ সালে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ। ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে ওই ঘটনায় হত্যা করা হয়।
গত বছর জুলাইয়ে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের নির্বিচার গণহত্যার ঘটনা জাতি কখনো ভুলতে পারবে না। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দেশে তারা যে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করবে তাতে সন্দেহ নেই। আওয়ামী লীগকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে এর মধ্যে নতুন করে মাঠে নেমেছে দলটির সুবিধাভোগী ও দোসর গণমাধ্যমের একটি অংশ। এদের ভূমিকা দিন দিন আরো খোলাসা হবে।
আসন্ন সেই অনিশ্চিত সময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি আমরা। এ সময় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো চাওয়া-পাওয়ার হিসাব একপাশে রেখে পতিত আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দরকার দুর্বার জনপ্রতিরোধ।