ঢাকা
টানা তিন দিন খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির (ওএমএস) ট্রাকের সামনে লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও চাল কিনতে পারেননি আবদুর রহিম। গতকাল সোমবার চতুর্থ দিনের মতো এসেছিলেন পরিবারের সবাই মিলে। কারণ, এদিন বাসায় দুপুরে রান্নার চাল ছিল না। তাই এদিন যাতে চাল না কিনে ফিরতে না হয়, সে জন্য পরিবারের সবাইকে নিয়েই লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকার ওএমএসের লাইনে আজ সোমবার দুপুরে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত তিন দিন চাল না পেয়ে ফিরে গেছি। লাইনে আমার পালা আসার আগেই চাল শেষ হয়ে যায়। এ কারণে আজ সকাল আটটার দিকেই লাইনে দাঁড়িয়েছি। সঙ্গে আমার স্ত্রী ও দুই সন্তানকেও নিয়ে এসেছি। যাতে চাল কিনে ফিরতে পারি, এ জন্যই পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছি।’
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যখন নির্মাণশ্রমিক আবদুর রহিমের সঙ্গে কথা হয়। তখনো তিনি পণ্য পাননি। লাইনে অপেক্ষায় ছিলেন। পাশেই তাঁর স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েও আছে। চার সদস্যের পরিবারে তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। মোহাম্মদপুর জাকির হোসেন রোডের ভাড়া বাসায় থাকেন। মাসে আয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। তার মধ্যে বাসাভাড়া বাবদ দিতে হয় ৬ হাজার টাকা।
আবদুর রহিম আরও বলেন, ‘মাসে আমার যে আয়, তা দিয়ে এখন আর সংসার চলে না। গ্রামে বাবা-মায়ের জন্য টাকা পাঠাতে হয়। এ কারণে সংসারে টানাটানি লেগেই থাকে। মাস শেষে হাতে একেবারে টাকাপয়সা থাকে না। তখন কম কিনি, কম খাই।’
আবদুর রহিমের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেল, সাত বছরের ছেলের কিডনি জটিলতায় গত মাসে চিকিৎসা খরচ বাবদ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তখন ধারকর্জ করেছেন। তাতে চাপ আরও বেড়েছে। নিত্যপণ্যের বাড়তি দামের কারণে ১০ মাস বয়সী মেয়ের মুখে পুষ্টিকর কোনো খাবারও তুলে দিতে পারছেন না। বাবা হিসেবে সেই আক্ষেপ প্রতিনিয়ত তাড়া করে বলে প্রথম আলোকে জানান।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনসংগ্রামে টিকে থাকতে হিমশিম খাওয়া আবদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই আসে তাঁর পালা। তড়িঘড়ি করে চাল কিনতে যান তিনি। তখন তাঁর স্ত্রী রোকেয়া বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত কয়েক দিন চাল না পাওয়ায় আজকে তাঁকে আসতে দিতে চায়নি। কারণ, এখানে এসে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তাতে কাজের ক্ষতি হয়। কিন্তু বাসায় দুপুরে রান্নার চাল নেই। এ জন্য বাধ্য হয়ে আসতে হলো।’
বেলা দেড়টার দিকে আবদুর রহিম ওএমএসের ট্রাকে বিক্রি হওয়া ভর্তুকি মূল্যের ৫ কেজি চাল পান। এ চাল প্রতি কেজি ৩০ টাকা করে কিনতে হয়েছে তাঁকে। চাল পেয়ে কিছুক্ষণ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পুরো পরিবার মিলে দম নিলেন। চোখে–মুখে আনন্দের ছোঁয়া। মিনিট দশেক পর পরিবার নিয়ে বাসার পথে পা বাড়ান আবদুর রহিম। দ্রুত পা হেঁটে চলেন পরিবারের সবাই। কারণ, বাসায় ফিরে ওএমএসের চালেই হবে দুপুরের রান্না।