ফরিদপুরে দুই নির্মাণশ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গণসংহতি আন্দোলনের নিন্দা ও প্রতিবাদ

গণসংহতি আন্দোলন

ফরিদপুরের মধুখালীতে দুই নির্মাণশ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাটি দেশে যে অগণতান্ত্রিক ও অসহিষ্ণু সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তারই ফল বলে মনে করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল। একই সঙ্গে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তাঁরা অবিলম্বে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আহ্বান জানিয়েছেন। আজ রোববার এক যৌথ বিবৃতিতে তাঁরা এ আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে গণসংহতির নেতারা বলেছেন, তাঁরা মনে করেন, এ ঘটনা দেশে যে অগণতান্ত্রিক ও অসহিষ্ণু সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তারই ফল। যখন রাষ্ট্র নিজেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড করে এবং তাকে প্রশ্রয় দেয়, তখন জনগণের ভেতরেও এই ধরনের পিটিয়ে মারার সংস্কৃতি চালু হয়। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, এই শ্রমিকেরা অভিযোগকৃত মন্দিরের প্রতিমায় আগুন দেওয়ার ঘটনায় আদৌ জড়িত ছিলেন, এমন কোনো প্রমাণ নেই। এমনকি যদি প্রমাণ থাকতও, তবু তাঁদের পিটিয়ে মেরে ফেলার অধিকার কারও নেই। এ রকম পরিস্থিতিতে তাঁদের আটক করে আইনের হাতে সোপর্দ করাই হলো নাগরিকের কর্তব্য।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো বাংলাদেশ এ ধরনের কোনো ঘটনার বিচার এবং দোষী ব্যক্তিদের আইনগতভাবে শাস্তি দেওয়ার নজির দেখতে পাই না। বর্তমান সরকারের শাসনামলে হিন্দুমন্দির বা বৌদ্ধমন্দিরে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর—এগুলোর কোনোটিরই বিচার সম্পন্ন হয়নি। এর আগে ইসলাম ধর্ম অবমাননার কথা বলে সাম্প্রদায়িক উসকানি তৈরি করা হয়েছে। সেসব ক্ষেত্রেও পুলিশ প্রশাসনের নীরবতা এবং সরকারি দলের অংশগ্রহণের নজির আছে। এখন হিন্দুধর্ম অবমাননার কথা বলে মানুষ পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। অথচ প্রতিটি ক্ষেত্রেই ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব নাগরিকের নিরাপত্তা বিধানের ও তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্র ও সরকারের। তারা শুধু সেটা পালনে ব্যর্থই হয়নি, বরং সেগুলোতে নানাভাবে ইন্ধন জুগিয়েছে এবং রাজনৈতিকভাবে তাকে ব্যবহার করেছে।

একই সঙ্গে তা ভারতের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির একটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের এই দুই নেতা। তাঁদের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এ ঘটনা ও পরবর্তীকালে তার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া দেশে একটি সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরির কাজে ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশের জনগণকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে এবং কুচক্রীদের সাম্প্রদায়িক মতলবকে ব্যর্থ করে দিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা অবিলম্বে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের বিচারের আহ্বান জানাই। বাংলাদেশের জনগণের কাছে আহ্বান জানাই, বাংলাদেশকে একটি উদার গণতান্ত্রিক পরমতসহিষ্ণু দেশ হিসেবে তৈরির রাজনৈতিক সংগ্রামকে বেগবান করুন। বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক, উগ্র, নিপীড়নকারী দেশ হিসেবে চিহ্নিত করার অপতৎপরতা রুখে দিন।’

prothom alo

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here