প্রীতিভাজনেষু: আপনাদের প্রশ্ন, সম্পাদকের জবাব
বাংলাদেশে প্রায় গোটা সপ্তাহ কেটে গেল ঈদের ছুটিতে। অনেকেই আজ বা কাল কাজে ফিরে যাচ্ছেন। আশা করি আপনাদের ঈদ ভালই কেটেছে।
এবারের ঈদের আনন্দ নি:সন্দেহে ঐসব পরিবারে একটু বেশি যাদের বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়া সন্তানরা বিভিন্ন আন্দোলনের সময় গ্রেফতার হয়েছিল কিন্তু গত কয়েকদিনে জামিনে মুক্তি পেয়েছে। তাদেরকে নিয়েই আজকের প্রথম চিঠি, লিখেছেন নীলফামারীর জলঢাকা থেকে মনির হোসেন:
”বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইট থেকে জানতে পারলাম ঈদের আগেই “নিরাপদ সড়ক চাই” আন্দোলনে গ্রেফতার হওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬জন শিক্ষার্থী জামিনে মুক্তি পেয়েছে। খবরটি পড়ে ঈদের আগেই যেন আমার কাছে ঈদের আনন্দ মনে হল। শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে আনন্দের উচ্ছ্বাস দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না। ধন্যবাদ জানাই মাননীয় আদালতকে।”
আদালত তার কাজ করেছে মিঃ হোসেন। তবে প্রশ্ন উঠতে পারে, তাদের এতদিন পুলিশ রিমান্ড বা জেল হাজতে থাকতে হলো কেন। জামিন পাওয়াটাই তো স্বাভাবিক ছিল। তবে এমনও হতে পারে, যে আইনে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছিল, সে আইনে জামিন পাওয়া কঠিন। তবে মূল কথা হলো, তারা এখন মুক্ত। ভবিষ্যতে কী হবে তা নির্ভর করবে তদন্তের ফলাফলের ওপর। আপনাকে ধন্যবাদ। (আরো জানতে এখানে ক্লিক করুন)।
নিরাপদ সড়কের দাবীতে আন্দোলনরত ছাত্রদের নিরাপত্তা নিয়ে লিখেছেন সুইডেনের স্টকহোম থেকে বাংলাদেশি ছাত্র তাহা, যিনি শুধু একটি নামই ব্যবহার করেছেন:
”আমি দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ছাত্রদের হয়রানী করছে। প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছাত্ররা নির্যাতনে শিকার হচ্ছে কিন্তু স্থানীয় গণমাধ্যম বিষয়টি অবহেলা করছে। সম্প্রতি আমি একজন ছাত্রের আত্মহত্যার খবর দেখে হতবাক হলাম। আত্মহত্যার আগে সে ফেসবুকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তার হতাশার কথা জানিয়েছিল।
”আমি বিবিসি বাংলাকে অনুরোধ করবো, তারা যেন এই ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।‘‘
আপনার চিঠির জন্য ধন্যবাদ মিঃ তাহা। বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন নিয়ে আমরা নিয়মিত রেডিও, টেলিভিশন এবং অনলাইনে রিপোর্ট করছি। আপনি যে আত্মহত্যার ঘটনার কথা বলছেন, সেটা নিয়ে আমার সেদিনই খোঁজ নিয়েছিলাম। কিন্তু এটা যে কোন রাজনৈতিক কারণে আত্মহত্যা, তার কোন প্রমাণ আমরা পাইনি। এমনকি ক্যান্টনমেন্ট কর্তৃপক্ষ আত্মহত্যা সম্পর্কেও নিশ্চিত নন, কারণ তারা মনে করেন এটা দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুও হতে পারে।
বিবিসি বাংলা সম্পর্কে একটি গুরুতর অভিযোগের কথা শুনে একটি প্রশ্ন করে লিখেছেন, রংপুর উপশহর পার্বতীপুর দোলাপাড়া থেকে এস.এম.মোহাম্মদ লিয়াকত আলী:
”বিবিসি বাংলা আমার নিকট নিরপেক্ষ গণমাধ্যম মনে হয়। বেশ কিছু দিন থেকে বাংলাদেশে অরাজনৈতিক আন্দোলন সংগঠিত হচ্ছে এবং এই আন্দোলনের খবরগুলো আমরা বিবিসি বাংলা থেকে সঠিক ভাবে পেয়েছি। কিন্তু অনেকে বলে বিবিসি বাংলা নাকি মুসলিম বিদ্বেষী। এটা শুনলে আমি একটু কষ্ট পাই। অভিযোগটা কতটা সত্য?”
আপনার চিঠিতে বলেছেন মিঃ আলী, যে আপনি ২০০০ সাল থেকে বিবিসি বাংলা শুনছেন। তাহলে কোন জাতি বা ধর্মের প্রতি বিবিসির কোন বিদ্বেষ থাকলে, সেটা আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারতেন? এই কথা আমাকে বেশ বিস্মিত করে। কারণ ধর্মীয় বা জাতিগত বিদ্বেষ বা বর্ণবাদ, এই সব বিষয়ে আমরা সব সময় সতর্ক থাকি। আমাদের অনুষ্ঠানে ইসলাম কেন, কোন ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ প্রদর্শন করা সম্ভব না।
তবে হ্যাঁ, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ইসলামিক স্টেট, আল কায়েদা বা অন্যান্য মুসলিম নামধারী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আক্রমণের খবর আমাদের অনুষ্ঠানে প্রচুর থাকে। সেটা শুনে কেউ কেউ এ’ধরণের ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করতে পারেন। কিন্তু সেখানে আমাদের করার কিছু নেই – ঘটনাগুলো সত্য এবং সেজন্য খবরে স্থান পাচ্ছে। যেমন, বাংলাদেশে ২০১৬ সালে হোলি আটিজান বেকারিতে হত্যাযজ্ঞের এক বছর পর জঙ্গি-বিরোধী অভিযান নিয়ে তৈরি বিবিসি বাংলার এই ভিডিও রিপোর্ট :
এবারে বিবিসি বাংলার অনলাইনে বিজ্ঞাপন নেবার বিষয়ে একটি চিঠি, লিখেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাকামে মাহমুদ চৌধুরী:
”বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে ঢুকলে প্রায়ই এখন ওয়েব পেইজটির যেখানে সেখানে বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখতে পাওয়া যায়। খবরের মাঝে এসব অনলাইন বিজ্ঞাপনের কারণ কী? বিজ্ঞাপনগুলো কি শুধু আমার মোবাইলে আসে নাকি সেগুলো থেকে বিবিসি অর্থ পেয়ে থাকে? আমার জানা মতে বিবিসি তো এত ছোট কোনো সংবাদ মাধ্যম নয় বা বিবিসির তো এমন কোনো দিন আসেনি বা ভবিষ্যতে আসবেও না যে, বিবিসি বাংলাকে অনলাইন বিজ্ঞাপন থেকে টাকা সংগ্রহ করতে হবে।”
ভাল প্রশ্ন করেছেন মিঃ চৌধুরী, কিন্তু আমার মনে হয় আপনি বিজ্ঞাপনের বিষয়টি ভুল বুঝেছেন। কোন প্রতিষ্ঠান ছোট বলে বা দুর্দিনে পরে বিজ্ঞাপন গ্রহণ করে না। সব প্রতিষ্ঠানকেই অর্থ সংগ্রহ করতে হয় তার কার্যক্রম চালানোর জন্য, সম্প্রসারণের জন্য এবং বিনিয়োগের জন্য। বিবিসি মূলত ব্রিটিশ জনগণের দেয়া অর্থে চলে। কিন্তু বিবিসির কাছে তার বাণিজ্যিক সম্ভাবনাটাও এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। সে কারণেই বেশ কয়েক বছর হলো বিবিসি তাদের আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইটগুলোতে বিজ্ঞাপন নিচ্ছে।
বিবিসি বাংলায় যে বিজ্ঞাপনগুলো দেখেন, সেগুলো থেকে বিবিসি অর্থ অবশ্যই পায়। তবে সেই অর্থ সরাসরি বিবিসি বাংলায় আসে না। সেটা বিবিসির কেন্দ্রীয় তহবিলে চলে যায়।
মাস পাঁচেক আগে সকালের একটি এবং রাতের একটি রেডিও অনুষ্ঠান বন্ধ করায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু সেই জায়গায় বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের ইংরেজি অনুষ্ঠান দেয়ায় অসন্তুষ্ট হয়ে লিখেছেন লালমনিরহাটের মহেন্দ্রনগর থেকে আহসান হাবিব রাজু:
”বিবিসি বাংলার জায়গায় দুটি ইংরেজি অধিবেশন বন্ধ করার জোর দাবি জানাচ্ছি । সকালসাড়ে ছয়টা ও রাত সাড়ে দশটায় ইংরেজি খবর । যে খবর জনগণের কাজে লাগে না , সে অধিবেশন প্রচার করার কী প্রয়োজন । বাংলাদেশে ইংরেজি খবর কতজন শোনে? আমার মনে হয় কোন শ্রোতাই এই দুটি অধিবেশন শোনে না ।
”তাই বিবিসি বাংলার কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি এই দুটি অধিবেশন বন্ধ করে দেওয়া হোক আর আঞ্চলিক বেতার কেন্দ্র গুলো তাদের নিজেদের অনুষ্ঠান প্রচার করুক ।”
আমি স্বীকার করছি বিবিসির ইংরেজি খবরের শ্রোতা খুব বেশি নেই। কিন্তু একবারেই নেই, তা তো বলা যাবে না মিঃ হাবিব । অনেকেই শোনেন। আর কিছু না হোক, ইংরেজি ভাষা চর্চা করার জন্য অনেকে শুনে থাকেন। আপনি কেন তাদের বঞ্চিত করতে চান? ইংরেজির জায়গা করার জন্য কিন্তু বাংলা অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয়নি। বাংলা বন্ধ হয়েছে বলে জায়গাটা খালি ছিল এবং বিবিসি সেখানে ইংরেজি খবর দিচ্ছে।
আর আঞ্চলিক বেতার কেন্দ্র গুলো যদি তাদের নিজেদের অনুষ্ঠান প্রচার করতে চায়, তাহলে সেটা বাংলাদেশ বেতার কর্তৃপক্ষের ব্যাপার, সেখানে বিবিসির কোন ভূমিকা নেই।
এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই। ছোট একটি প্রস্তাব দিয়ে লিখেছেন ফরিদপুর থেকে নারায়ণ চন্দ্র বিশ্বাস:
”আমি ABBA সংগীত দলের উপর একটা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেখতে বা শুনতে চাই। তাঁহারা বর্তমানে কে কী অবস্থায় আছেন এবং কেমন আছেন? সবাই কি জীবিত আছেন?”
এখানে ঠিক অনুসন্ধানের প্রয়োজন নেই মিঃ বিশ্বাস। ABBA সংগীত দলের সকল সদস্য বহাল তবিয়তে আছেন, তাদের দেশ সুইডেনেই বাস করেন এবং সঙ্গীত নিয়েই কাজ করছেন। শুধু তাই না, এবছরের শেষ দিকে তারা আবার এক সাথে কাজ করবেন এবং নতুন রেকর্ড তৈরি করবেন। এটা হবে ৩৬ বছর আগে দল ভেঙ্গে যাবার পর তাদের প্রথম পুনর্মিলন। অপেক্ষায় থাকেন।
ফিচার অনুষ্ঠানের অডিও নিয়ে লিখেছেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থেকে মুহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল:
”আজ মিস করছি আমার পছন্দের সব ফিচার অনুষ্ঠানগুলোকে যা আমাকে বিবিসির প্রতি চরমভাবে আকৃষ্ট করেছিল। কিন্তু সেই ফিচার এখন আছে শুধু ওয়েব সাইটে। বিশ্বাস করুন আপনাদের কণ্ঠের সেই ফিচার খুব আকর্ষণ করে শ্রোতাদের। আপনারা ইচ্ছা করলেই ফিচারগুলোকে রেকর্ডিং বা ভিডিও করে আপনাদের ফেসবুক পেইজ ও ওয়েবসাইট এ দিতে পারেন। আমার ধারনা আপনাদের সেই জনবল আছে। শুধু ইচ্ছা করলেই হয়।”
আপনার মত আমিও বিশ্বাস করি মিঃ খলিল, যে ইচ্ছা থাকলে উপায় অবশ্যই বের হবে। তবে আমরা অনলাইনে বিষয়-ভিত্তিক ফিচার খুব একটা করছি না। যেমন, মাঠে-ময়দানে, বিজ্ঞানের আসর, গান-গল্প, এ’সপ্তাহের সাক্ষাৎকার ইত্যাদি ফিচারগুলো আর নেই। শুধু আছে প্রীতিভাজনেষু, ইতিহাসের সাক্ষী আর বিশেষ প্রতিবেদন। আরেকটি জিনিস আমরা খেয়াল করেছি, অনলাইনে মানুষ যত পড়তে পছন্দ করে, শুনতে তত পছন্দ করে না। সেজন্য আমরা অনলাইনের পরিবেশনায় অডিও রাখছি না। আপনাকে ধন্যবাদ।
এবারে আমাদের চিঠি-পত্রের আয়োজন প্রীতিভাজনেষু নিয়ে কয়েকটি চিঠি। প্রথমে কিছুটা বিক্ষুব্ধ হয়েই লিখেছেন কাউনিয়া থেকে বিলকিস আক্তার:
”প্রীতিভাজনেষু রেডিওতে ফিরে আসায় আমি ভীষণ খুশি! কিন্তু একটা বিষয় উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, আপনাদের অনলাইনের চিঠির সাথে জবাব দেয়া চিঠির নামের সিরিয়ালগুলো কেন জানি মিলছে না! এক্ষেত্রে আপনারা কিসের ভিত্তিতে মাঝখান থেকে চিঠি বেঁছে নিয়ে জবাব দিচ্ছেন, তা বোধগম্য নয়!
”আর প্রীতিভাজনেষু নামটি ভালো কিংবা খারাপ যাই হোক না কেন, প্রীতিভাজনেষুতে যেহেতু একবার চার মাসের বিরতি পড়েছে, তাই আমার নিজস্ব মতামত এটার নতুন নামকরণ দরকার। কিন্তু সম্পাদক শ্রোতাদের কথায় একবার করবো, আরেকবার করবো না – এমনটি বললে, আমরা আসলে কোন পথে হাঁটব?”
আপনার ক্ষোভের আসলে কোন কারণ নেই মিস আক্তার। এখানে কিছুটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে যেটা সহজেই দূর করা সম্ভব। প্রথমে, অনলাইন আর রেডিওর প্রীতিভাজনেষুর স্ক্রিপ্ট ভিন্নভাবে লেখা হয়, কারণ মাধ্যম দুটি ভিন্ন। রেডিওতে নির্দিষ্ট কয়েকটি চিঠি ছোট আকারে নিয়ে জবাব দেয়া হয়, যেহেতু সেটা সাড়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হয়। কিন্তু অনলাইনে আরো বেশি চিঠি নেয়া যায়, কিছু ভূমিকা যোগ করা যায়, উত্তর আরেকটু লম্বা করা যায় ইত্যাদি।
চিঠিগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে এবং বিষয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার লক্ষ্য নিয়ে চিঠিগুলো সাজানো হয়। তাই রেডিও আর অনলাইনের স্ক্রিপ্ট-এ ভিন্নতা থাকবে। তবে আমি কিন্তু প্রীতিভাজনেষুর নাম বদলের ক্ষেত্রে হ্যাঁ -না করছি না। অনলাইন ভার্সনের ভিন্ন নাম দেয়ার কথা বলেছি। রেডিওর নাম প্রীতিভাজনেষুই থাকবে।
প্রীতিভাজনেষুর নামকরণ নিয়ে বিভ্রান্তি বেশ ভাল ভাবেই চলছে। সে বিষয়ে আরেকটি চিঠি, লিখেছেন খুলনার দাকোপ থেকে মোহাম্মদ নুর জামাল ঢালী:
”মাঝে মাঝে সাবির মুস্তাফার কী যে হয়, আমি তা বুঝে উঠতে পারি না। দুই সপ্তাহআগে এক বন্ধুর মতামতের সাথে সহমত পোষণ করে বলেছিলেন, শ্রোতাদের পাঠানো নতুন নামের মাঝ থেকে প্রীতিভাজনেষুর নাম করণ করা হবে। কিন্তু পরের সপ্তাহের প্রীতিভাজনেষুতে আর এক বন্ধুর চিঠির মতামতের সাথে সুর মিলিয়েপ্রীতিভাজনেষুর নতুন নামকরণ করার বিষয়টি হাওয়া হয়ে গেল।
”বিবিসি একটি আলোচিত ও জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম যেখানে নিয়মিত হাস্যকর বিষয় উপলব্ধি করছি। প্রীতিভাজনেষু চার মাস বন্ধ রেখে এখন প্রীতিভাজনেষু দুই দিনে ভাগ করে শনি ও রবিবার করা হয়েছে। তাহলে প্রীতিভাজনেষু কি আগের সেই অবস্থায় আছে?”
এক দিক থেকে আপনি ঠিকই বলেছেন মিঃ ঢালী। আমি মত পাল্টিয়েছি। সব চেয়ে বড় ডিগবাজি ছিল প্রীতিভাজনেষু চার মাস বন্ধ রেখে আবার সেটা চালু করা। অনেকের কাছেই সেটা হাস্যকর মনে হতে পারে। কিন্তু আমি সেটা করেছি আপনাদের অনেকের মতামত গ্রহণ করে। আর দু’ ভাগ করার কারণ আমি একাধিকবার ব্যাখ্যা করেছি – ১০ মিনিট ফিচারের জায়গা নেই, তাই হয় দু’ভাগ হবে, নয় থাকবে না। ফিরিয়ে আনার জন্য দু’ভাগ করা হয়েছে।
আর নামকরণ নিয়েও আমি কয়েকজনের মতামত শুনেছি, যুক্তি বুঝেছি এবং সব বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রেডিওতে নাম বদলানো হবে না, তবে অনলাইনের জন্য উপযুক্ত নাম কেউ প্রস্তাব করলে তা গ্রহণ করা হবে। আপনাকে ধন্যবাদ।
প্রীতিভাজনেষুতে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে লিখেছেন নীলফামারীর, মাগুরা ফুলের ঘাট থেকে মোহাম্মদ তারিফ হাসান:
”গত শনিবার রেডিও তে প্রচারিত বিবিসি বাংলার প্রীতিভাজনেষু অনুষ্ঠান শুনেলক্ষ করলাম কয়েক জন শ্রোতার পত্র বিবিসি বাংলার অনলাইনে থাকা সত্ত্বেও রেডিও তে সেগুলো প্রচার করা হল না। শ্রোতাদের প্রতি এটা পক্ষপাতিত্ব নয় তো….‘‘
না মিঃ হাসান, এখানে কোন পক্ষপাতিত্বের প্রশ্ন ওঠে না। রেডিওতে জায়গা সীমিত তাই প্রতিটি পর্বে ৫-৬ টার বেশি চিঠি নেয়া এবং ৬-৮ টার বেশি চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করা সম্ভব না। কিন্তু অনলাইনে সেই সীমাবদ্ধতা নেই। সেখানে আরো বেশি চিঠি নেয়া সম্ভব। আমার নিজের ভূমিকা এবং উত্তরেও রেডিওর চেয়ে একটু বেশি কথা রাখতে পারি। আপনাকে ধন্যবাদ।
বিবিসি বাংলার অতীত নিয়ে স্মৃতিচারণ করে দীর্ঘ চিঠি লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান থেকে শঙ্কর হালদার। তিনি ১৯৭০ এবং ৮০-র দশকের অনেক অনুষ্ঠান এবং উপস্থাপকে প্রশংসা করেছেন, তবে এখানে চিঠির শেষ অংশটুকু শোনা যাক:
”বর্ধমানে শেষ দুইটি শ্রোতা সম্মেলনে হাজির ছিলাম আমি । প্রথমে দেখা হয়েছে জন রেনার ও দীপঙ্কর ঘোষের সাথে । পরে বিবিসি বাংলা বিভাগের ৫০ বছর উপলক্ষে বিশাল এক শ্রোতা সম্মেলন এর আয়োজন করা হয়েছিল, সেই সময়ে বাংলা বিভাগের উপ-প্রধান সিরাজুর রহমান এবং এশিয়া বিভাগগুলির প্রধান ব্যারি ল্যাংরিজ এর সহিত অনুষ্ঠান নিয়ে গঠন মূলক আলোচনা করেছি ।
”এছাড়া কোলকাতার আই,টি,সি, হোটেলে বিবিসি বাংলা বিভাগের আয়োজিত এক শ্রোতা সম্মেলনে বাংলা বিভাগের বর্তমান প্রধান সাবির মুস্তাফার কথাতে বুঝতে পেরেছিলাম বিবিসির স্বর্ণ যুগ শেষ হতে চলেছে। লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া ।”
আসলেই, অতীতকে অনেক সময় স্বর্ণযুগই মনে হয় মিঃ হালদার। আমাদের কার্যক্রমে আধুনিকতার ছোঁয়ার খুবই প্রয়োজন ছিল। আপনি যেভাবে ৩০ বছর আগের বিবিসি বাংলার রেডিওর মূল্যায়ন করছেন, হয়তো আজকের শ্রোতা-দর্শক এবং পাঠকরা ৩০ বছর পরে আমাদের বিভিন্ন মাধ্যমের পরিবেশনার মূল্যায়ন করবে।
ফিচার, দর্শক বা পাঠক সংখ্যা, ফেসবুক, টেলিভিশন সব কিছু মিশিয়ে একটি জটিল অভিযোগ উপস্থাপন করেছেন কুড়িগ্রামের ফরিদুল হক:
”ইতিহাসের সাক্ষী বা এ’সপ্তাহের সাক্ষাতকার কিংবা মাঠে ময়দানে সিরিজগুলো বেশ জনপ্রিয় সিরিজ। রেডিও অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ওয়েবসাইটেও বেশ ভালভাবেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে স্থান করে নিয়েছে এই সব সিরিজগুলি। তবে বিবিসি যদি এতটাই রেডিও অনুষ্ঠানের চেয়ে ইন্টারনেট বা টেলিভিশনের দিকে আকৃষ্ট বা আগ্রহী হয় শুধুমাত্র শ্রোতা বা দর্শক বাড়ানোর জন্য, তবে ফেসবুকের মতো এতো জনপ্রিয় একটা গণমাধ্যম কেন বিবিসি এইসব জনপ্রিয় সিরিজগুলোর ভিডিও তাদের ফেসবুক পাতায় আপলোড করছে না? নাকি ফেসবুকে বিবিসির সম্পাদক তেমন জনপ্রিয়তা খুঁজে পাচ্ছেন না?”
ফেসবুকে আমরা বলতে গেলে অসাধারণ জনপ্রিয়তা পাচ্ছি মিঃ হক। সেজন্য শুধু ফেসবুকে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার জন্য একজন সাংবাদিক নিয়োজিত থাকছেন সপ্তাহে পাঁচ দিন। আপনি যদি সম্প্রতি ফেসবুকে আমাদের লাইভগুলো বা ভিডিওগুলো দেখে থাকেন বা পরিসংখ্যান খেয়াল করে থাকেন, তাহলে জানবেন।
তবে যেসব ফিচারের কথা আপনি বললেন, সেগুলো কখনোই ভিডিও হিসেবে তৈরি করা হয়নি। ফিচারগুলো আর রেডিওতে প্রচার করা হয় না এবং তাদের কোন অনলাইন সংস্করণও নেই। তাদের জনপ্রিয়তার তথ্য আপনি কোন পরিসংখ্যান থেকে পেলেন তা জানালে আমি আরো আলাপ করতে পারবো। আপনাকে ধন্যবাদ।
সব শেষে, ভারতের একজন শ্রোতা প্রীতিভাজনেষুর মাধ্যমে শোক প্রকাশ করছেন, লিখেছেন কলকাতার বেহালা থেকে প্রীয়ঞ্জিত কুমার ঘোষাল:
”গত কয়েকদিনের ব্যবধানে ভারতের কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব পরলোকগমন করেছেন। এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপায়ী। তার আগে মারা গেছেন লোকসভার প্রাক্তন স্পীকার সোমনাথ চ্যাটার্জী, এবং ভারতের ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক অজিত ওয়াদেকার। আমি তাদের মৃত্যুর খবরে শোক জ্ঞাপন করছি।”
আপনাকে ধন্যবাদ মি: ঘোষাল। তাদের মৃত্যুতে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে সমবেদনা জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপায়ীর শেষকৃত্যের ভিডিও এখানে দেখতে পারেন:
এবার কিছু চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করা যাক:
মুকুল চৌধুরী, সৈয়দপুর, নীলফামারী।
বাপ্পা সরকার, শিলিগুড়ি, পশ্চিমবঙ্গ।
এ.জি মোহাম্মদ ফাইজু মিয়া, কুলিয়ারচর, কিশোরগঞ্জ।
সুজন আহাম্মেদ, পঞ্চগড়।
বিজন রায়, পাইকগাছা, খুলনা ।
মেনহাজুল ইসলাম তারেক, পার্বতীপুর, দিনাজপুর।
কেশব চন্দ্র বর্মন, দিনহাটা, পশ্চিমবঙ্গ।
মুকুল সরদার, দাকোপ, খুলনা।
নূরে আলম সিদ্দিকী নূর, বিরামপুর, দিনাজপুর।
মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, লালমোহন, ভোলা।
রফিক সরকার, গুলশান,ঢাকা।
মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, সৈয়দপুর, নীলফামারী।
বিবিসি বাংলার খবর সম্পর্কে আপনাদের মতামত, প্রতিক্রিয়া, অভিযোগ কিংবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কাছে লিখুন:
ইমেইল: [email protected]
ফেসবুক: www.facebook.com/BBCBengaliService/