স্টাফ রিপোর্টার
৭ অক্টোবর ২০২২, শুক্রবার
বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকার দেশকে একটা কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। দেশের মানুষ যেন সত্য ও সঠিক তথ্য জানতে না পারে, গণমাধ্যম যাতে সরকারের দুর্নীতির তথ্য প্রচার করতে না পারে এ জন্য ২৯টি দপ্তরের তথ্য গোপন করার ব্যবস্থা করেছে। ফলে তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য নেয়া যাবে না, তারা কাউকে কোনো তথ্য দেবে না। সরকারের দুর্নীতি গোপন রাখতে, স্বেচ্ছাচারিতা ঢেকে রাখার জন্য এই সার্কুলার জারি করেছে তারা। নিজের স্বেচ্ছাচারিতা ঢেকে রাখার জন্য সরকার আজকে সমগ্র জাতিকে সঠিক খবর থেকে বঞ্চিত করে রাখতে চায়। ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকারকে আর কোনো সময় দেয়া যায় না। গতকাল বিকালে নয়াপল্টনে এক শোক র্যালিতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। দেশব্যাপী দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে দলীয় কর্মসূচি পালনকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৫ নেতা-কর্মী নিহত হয়। তাদের স্মরণে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শোক র্যালি করে দলটি। এ সময় বিএনপি’র মহাসচিব বলেন, এই সরকার এখন জাতির জন্য একটা বোঝা।
এ জন্য দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। জেগে উঠেছে আমাদের তরুণ-যুবকরা। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। ফখরুল ইসলাম বলেন, আজকের র্যালি একটি শোক র্যালি। আমাদের শহীদ নুরে আলম, শহীদ শহিদুল ইসলাম শাওন, শহীদ শাওন প্রধান, শহীদ আব্দুর রহিম, শহীদ আব্দুল আলিম নিজেদেরকে দেশে ও দেশের মানুষের জন্য আত্মাহুতি দিয়েছেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এই কর্তৃত্ববাদী সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা। তার জন্য মিছিলে এসে এই জালেম সরকারের পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। কারও চোখ চলে গেছে, কারও বুক বন্দুকের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়েছে। আরও অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে। অসংখ্য মামলা হয়েছে। অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিদিন এই স্বৈরাচার সরকারের পতনের লক্ষ্যে মিছিলে মিছিলে আরও মানুষ বাড়ছে। আজকে সরকার এত ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যে, আমাদের নেতাকর্মীদের ঘরে ঘরে গিয়ে পুলিশ তল্লাশি করছে, নাম নিচ্ছে। অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ করতে হবে। একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। রক্ত আমরা অনেক দিয়েছি।
আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা সামনে এগিয়ে যাবো। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার করছে সরকার। তার সমালোচনা করায় সোনিয়া আক্তার স্মৃতি নামের এক নারীকে মধ্যরাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার ফুটফুটে দুটি ছোট বাচ্চার সামনে। তার অপরাধ ছিল-ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সমালোচনা করে পোস্ট দিয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সমালোচনা করা যাবে না? তিনি কি গড? এ সময় বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলন করছি। সেই আন্দোলনে আমাদের চার জন নেতাকে গুলি করে হত্যা করেছে খুনি হাসিনার পুলিশ বাহিনী। আমরা সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবো না। বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র যৌথ উদ্যোগে এ র্যালি শুরু হয়। র্যালিটি কাকরাইল মোড় হয়ে আরামবাগ হয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।
সারা দেশে সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ও পুলিশের গুলিতে নিহত ভোলা জেলা ছাত্রদল সভাপতি নূরে আলম, মুন্সীগঞ্জ জেলা যুবদল নেতা শহীদুল ইসলাম শাওন, ভোলা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আব্দুর রহিম, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদল নেতা শাওন প্রধান এবং বেনাপোল পৌরসভার ৩৭ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র নেতা মো. আব্দুল আলিমের স্মরণে এ র্যালি করে ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) বিএনপি। শোক র্যালিতে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা আমান উল্লাহ আমান, মো. আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মীর সরাফত আলী সপু, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, শিরিন সুলতানা, নাজিম উদ্দিন আলম, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, রফিকুল আলম মজনু, মো. আমিনুল হক, মৎস্যজীবী দলের মো. আব্দুর রহিম, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আব্দুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, রাজীব আহসান, নাজমুল হাসান, শ্রমিক দলের মো. আনোয়ার হোসাইন, মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান সহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র কয়েক হাজার নেতাকর্মী।