সমকাল প্রতিবেদক ০৫ অক্টোবর ২১
অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক জোট আইসিআইজে প্রকাশিত প্যান্ডোরা পেপারসে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল মিন্টুর নাম এসেছে। নেপালের ধনকুবের বিনোদ চৌধুরীর সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পৃক্ত ব্যক্তি হিসেবে মিন্টুর নাম এসেছে।
সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম, নেপাল (সিআইজে-এন) এ তথ্য প্রকাশ করেছে, যা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে নেপাল টাইমস। এতে বলা হয়, বিনোদ চৌধুরী ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে সিনোভেশন নামে একটি কোম্পানির নিবন্ধন নিয়ে অর্থ পাচার করেছেন। ওই কোম্পানির সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য দেশের যেসব ব্যক্তির লেনদেন বা সংযোগের তথ্য এসেছে, সে তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল মিন্টুর নাম। তবে মিন্টু ওই কোম্পানির সঙ্গে কোন ধরনের লেনদেন করেছেন, তার কোনো তথ্য নেপাল টাইমসের প্রতিবেদনে নেই।
সিআইজে-এন আইসিআইজের অংশীদার সংগঠন। আইসিআইজে প্যান্ডোরা পেপারসের ডাটা উন্মুক্তভাবে প্রকাশ না করলেও অংশীদারদের সঙ্গে বিনিময় করেছে। প্যান্ডোরা পেপারস হচ্ছে আইসিআইজে প্রকাশিত প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ নথি ফাঁসের ডকুমেন্ট। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধনকুবের, রাজনীতিবিদ ও ক্ষমতাবান ব্যক্তির অর্থ পাচার, কর ফাঁকি ও গুপ্ত সম্পদের তথ্য সামনে এসেছে। ১১৭টি দেশের ছয় শতাধিক সাংবাদিক কয়েক মাস ধরে ১৪টি উৎস থেকে নথিগুলো সংগ্রহ করেছেন। ইতোমধ্যে ৫০ জনের বেশি প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের ওপর আইসিআইজে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আইসিআইজে তাদের ‘অফশোর লিকস’ ডাটাবেজ সংযুক্ত করবে।
আব্দুল আউয়াল মিন্টু দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মাল্টিমোড গ্রুপের অধীনে বীজ, জাহাজ, টেক্সটাইল, মৎস্য আহরণ, ব্যাংক ও বীমার ব্যবসা রয়েছে। তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়াও অন্যান্য খাতভিত্তিক ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। পাশাপাশি রাজনীতিতেও সক্রিয়। বর্তমানে তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান।
এর আগে আইসিআইজের ফাঁস করা প্যারাইডস পেপারসেও আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও তার পরিবারের সদস্যদের নাম আসে। এ ছাড়া ২০১৮ সালে রাজস্ব ফাঁকি, সন্দেহজনক লেনদেন, বিদেশে অর্থ পাচার, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনসহ বিভিন্ন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান শুরু করে। মিন্টু ছাড়া আরও কয়েকজন বাংলাদেশির নাম প্যারাডাইস পেপারসে ছিল। আইসিআইজে প্রকাশিত ফাঁস করা অপর ডকুমেন্ট পানামা পেপারসেও কয়েকজন বাংলাদেশির নাম ছিল।
আব্দুল আউয়াল মিন্টুর সঙ্গে গতকাল যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল ফোনটি রিসিভ করেন হুমায়ুন কবির নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘স্যার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না। অনেকেই যোগাযোগ করেছেন; কারও সঙ্গে কথা বলেননি। ওই পেপারে (প্যান্ডোরা পেপারস) কী বলা হয়েছে, তা জেনে প্রয়োজনে আপনাদের (সাংবাদিকদের) জানানো হবে।’
প্যান্ডোরা পেপারসে নাম আসা নেপালের ধনকুবের বিনোদ চৌধুরীর বাংলাদেশে বিনিয়োগ রয়েছে। তার মালিকানাধীন সিজি ফুডস বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে এসে ‘সিজি ফুডস বাংলাদেশ’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে। শুরুতে সিজি ফুডস বাংলাদেশ আব্দুল আউয়াল মিন্টুর মালিকানাধীন কে অ্যান্ড কিউ নামে কোম্পানির ধামরাইয়ের এক লাখ ১৪ হাজার ৬৮০ বর্গফুট জায়গা এবং ৩ হাজার ২৫০ বর্গফুট অফিস স্পেস ১৫ বছরের জন্য ভাড়া নেয়। পরে মাল্ডিমোড এ কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয় বলে জানা গেছে।
নেপাল টাইমস জানিয়েছে, প্যান্ডোরা পেপারসে নেপালের একমাত্র বিলিয়নেয়ার বিনোদ চৌধুরী ও তার প্রতিষ্ঠান চৌধুরী গ্রুপের (সিজি) নামও রয়েছে। বিনোদ চৌধুরীর পরিবারের আরও চারজন সদস্যের নাম আছে। সেই সঙ্গে নেপালের সবচেয়ে পুরোনো ব্যবসায়িক পরিবার গোলচা অর্গানাইজেশন এবং ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রভাবশালী আরও কিছু ব্যক্তির নাম রয়েছে আইসিআইজের প্রতিবেদনে। তদন্তে উঠে এসেছে, এসব নেপালি কোম্পানি ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে নিজ পরিবারের সদস্য ও পরিচিতদের নামে কোম্পানির নিবন্ধন করিয়ে শেল কোম্পানির মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছে। নেপাল টাইমসকে বিনোদ চৌধুরীর ছেলে রাহুল চৌধুরী বলেছেন, তারা দেশের বা কোনো আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেননি। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চৌধুরী গ্রুপের বেশ কিছু বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্ব আছে, যার সব তথ্য উন্মুক্ত।