পেশাদাররা কেন বাংলাদেশ ছাড়ছেন?

logo

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, রবিবার

সাম্প্রতিক সময়ে, বাংলাদেশের পেশাদারদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য প্রবণতা দেখা যাচ্ছে: উচ্চ অধ্যয়ন বা আরো ভাল ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন দক্ষ ব্যক্তিরা। দৈনন্দিন এবং পেশাগত জীবনে একাধিক অসুবিধার সম্মুখীন হওয়ার জেরে এই ঘটনাটি বাড়ছে। এই অভিবাসনের পেছনে কারণগুলি কী কী?

যারা দেশ ছাড়ছে তাদের মধ্যে অনেকেই  স্নাতক হয়ে চাকরির জগতে সদ্য যোগ দিয়েছে, এখন  উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি  যারা পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে চাকরি করছেন, সদ্য বিবাহিত, পরিবারে শীঘ্রই একটি সন্তানের প্রত্যাশা করছেন, অথবা  একটি  ছোট শিশু আছে তারাও বিদেশে যেতে আগ্রহী । এই লোকেরা বেশিরভাগই সাধারণ কোনো পরিবার থেকে উঠে এসে বিশ্ব বাজারে নিজের আলাদা একটা পরিচয় তৈরি করছে।  বাংলাদেশি পেশাদারদের  বিদেশের মাটিতে পা রাখার সবথেকে লোভনীয় কারণ উচ্চতর কর্মজীবনের সুযোগ।

আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারগুলি প্রায়শই উচ্চতর পারিশ্রমিক প্যাকেজ, ব্যাপক সুবিধা এবং পেশাদার অগ্রগতির অনন্য সুযোগ দিচ্ছে । এছাড়াও, দক্ষতা ও যোগ্যতার  স্বীকৃতি  সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে। কিছু পেশাদার বিশ্বাস করেন, তাদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে অধিকতর প্রশংসিত হয়েছে, বেড়েছে আর্থিক পারিশ্রমিক। বৈচিত্রপূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জন এবং স্বতন্ত্র সংস্কৃতি ও  কাজের পরিবেশের এক্সপোজার পেশাদারদের অনুপ্রেরণার আরো একটি উৎস। অভিবাসনের একটি অবিচ্ছেদ্য দিক হলো একটি উন্নত মানের জীবনযাত্রা ।

সংস্কৃতি ও ইতিহাসে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এখনও উচ্চ-স্তরের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং জীবনযাত্রার সুযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।এই ডোমেইনগুলিতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী দেশগুলির প্রলোভন মানুষকে বিদেশে পাড়ি  দিতে ইন্ধন যোগাচ্ছে, কারণ পেশাদাররা নিজেদের এবং তাদের পরিবারের জন্য উন্নতমানের জীবন কামনা করে। পরিবারের উন্নত মানের জীবনযাত্রার পাশাপাশি বাইরের দেশগুলি প্রায়শই মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দেয়, অভিভাবকদের সন্তানদের সর্বোচ্চ মানের শিক্ষা দিতে সেদিকে আকৃষ্ট হন। এই আকাঙ্ক্ষার জন্য প্রায়শই বাবা-মায়েরা সন্তানদের নিয়ে বিদেশে পাড়ি দেন, এমনকি  বিদেশে তাদের ক্যারিয়ার অসুবিধার সম্মুখীন হলেও তারা পরোয়া করেন না।

অর্থনৈতিক কারণগুলি স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে।  অনুকূল মুদ্রা বিনিময় হার এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের বৈষম্য পেশাদারদের আর্থিক দৃষ্টিভঙ্গিকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করেছে। পেশাদাররা প্রায়ই দেখতে পান যে, বিদেশে তাদের উপার্জন তাদের আরও বেশি ক্রয়ক্ষমতা এবং আর্থিক নিরাপত্তা দেয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ অনিশ্চয়তার মুখে  দাঁড়িয়ে। এই ধরনের অপ্রত্যাশিত একটি সমাজ কেবল ব্যবসার পরিবেশই নয়, ব্যক্তিগত জীবনকেও ব্যাহত করতে পারে। এই উদ্বেগের প্রতিক্রিয়া হিসাবে, কিছু পেশাদাররা সেইসব দেশগুলি বেছে নেয় যেখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে। এইভাবে, বাংলাদেশি পেশাদারদের আন্তর্জাতিক কর্মসংস্থান খোঁজার সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত, পেশাদার এবং অর্থনৈতিক কারণগুলির ওপর  নির্ভর করে। যদিও প্রেরণাগুলি ব্যক্তিভিত্তিক ভিন্ন হতে পারে যেমন-  উন্নত কর্মজীবনের সম্ভাবনা, উন্নত জীবনের মান, উচ্চতর শিক্ষার সুবিধা, দক্ষতার স্বীকৃতি,  বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে চ্যালেঞ্জিং কাজের পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক প্রণোদনাগুলি এক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা নেয় ।

গ্লোবালাইজিং বিশ্বের কথা মাথায় রেখে  আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে বাংলাদেশি পেশাদারদের আগ্রহ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।  গার্হস্থ্য জীবন, শিক্ষার মান এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সুবিধার প্রাপ্যতার সাথে একটি ভাল কর্মক্ষেত্রের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের চিন্তাভাবনাও প্রয়োজন।

সূত্র : দ্য ডেইলি ষ্টার
লেখক- মামুন রশিদ,  একজন অর্থনৈতিক বিশ্লেষক