এম সাখাওয়াত হোসেন : আগামীকাল ২৮ অক্টোবর ঘিরে অনেক জল্পনা-কল্পনা চলছে। দুই দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ আমরা দেখছি। সংঘাত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে; নাও হতে পারে। তবে সংঘাত পরিস্থিতি তৈরি হলে সেটি আগামী রাজনীতির জন্য ভালো হবে না। তার প্রভাব নির্বাচনে পড়বে এবং আরও বড় ধরনের সংঘাতের পরিবেশ তৈরি হবে। সে জন্য আশা করি, সংঘাত হবে না। দুই দল যার যার মতো কর্মসূচি পালন করবে।
পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির সংস্কৃতি মোটেও ভালো নয়। এগুলো সংঘাতে ইন্ধন জোগায়। তা ছাড়া উভয় দল যেভাবে নিজ নিজ অবস্থানে অনড়, তাও ভালো লক্ষণ নয়। এই অবস্থানে থেকে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা কতখানি গ্রহণযোগ্য হবে বা আদৌ গ্রহণযোগ্য হবে কিনা, সেটি বড় প্রশ্ন।
সংঘাতের মধ্যে নির্বাচন হলে খারাপ সংস্কৃতিই আমরা দেখব। এমনিতেই নির্বাচনের প্রতি মানুষের আস্থা নেই বললেই চলে। ভোটাররা এখন ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে চান না। ভোটারদের নিয়ে যাওয়ার জন্য অর্থকড়ি খরচ, পেশিশক্তির ব্যবহার, ভোটকেন্দ্র দখল– এগুলোই হয়তো আমরা দেখব এবং এগুলোই হতে থাকবে।
নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিদেশিদের একটি প্রচেষ্টা আমরা দেখেছি। এর সুফল কতটা পাওয়া যাবে, সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তাদের দৌড়ঝাঁপ তো আমরা কম দেখিনি। বিদেশিদের তৎপরতায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো হতেও পারে, নাও পারে। এখানেও সেটিই বলতে হবে, পরিস্থিতি ভালো না হলে খারাপই হয়তো আমরা দেখব এবং সেই শঙ্কা আছে। নিজেদের সমস্যা তো আমাদের নিজেদেরই সমাধান করার কথা। এর আগে ২০১৪ সালে বিদেশিদের তৎপরতা দেখেছি। তবে এবার দৌড়ঝাঁপ বেশি দেখা যাচ্ছে এবং সবাই যে যার মতো করে বলছে। চীন একদিকে, রাশিয়া একদিকে। আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সবাই নির্বাচনের ব্যাপারে কথা বলছে; পদক্ষেপ নিচ্ছে। এটি যদিও একটি দেশের জন্য গৌরবের কোনো বিষয় নয়। রাজনীতিবিদদের পরিস্থিতি অনুধাবন করা উচিত। সম্প্রতি বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন গণমাধ্যমে পাঠানো একটি ধারণাপত্রে বলেছে, ‘অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য যে অনুকূল পরিবেশ প্রত্যাশা করা হয়েছিল, সেটি এখনও হয়ে ওঠেনি।’ নির্বাচন কমিশন হয়তো আগে থেকে জোরালো ভূমিকা রাখলে কিছু একটা করতে পারত। এখন সিইসির কাজ হলো নির্বাচন পরিচালনা করা। এ অবস্থায় নির্বাচন করতে গেলে তার আগের নির্বাচন কমিশনগুলো থেকে আলাদা কিছু হবে বলে মনে হয় না। তবে নির্বাচন কমিশন সময় থাকতে যদি দৌড়ঝাঁপ করত, তবে মানুষের মধ্যে এক ধরনের আস্থা ফিরে আসত। এখন তাদের হাতে সেই সময় নেই। দু’এক সপ্তাহ পরই তাদের নির্বাচনী তপশিল ঘোষণা করতে হবে। সেটা যদি না করে তবে নির্বাচন কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কী করবে। কিন্তু আপাতত সে পথে নির্বাচন কমিশন হাঁটবে বলে মনে হয় না।
তারপরও শেষ কথা বলার এখনও সময় শেষ হয়ে যায়নি। এবার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার একটা চাপ রয়েছে। এর মধ্যে সংকটের সমাধানও সম্ভব হতে পারে রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে। কিন্তু সেরকম কোনো উদ্যোগ কই? এর মধ্যেই আসছে ২৮ অক্টোবরের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি। সেটি আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে, তার জন্য আসলে অপেক্ষা করা ছাড়া বলা মুশকিল। ড. এম সাখাওয়াত হোসেন: সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল
সূত্র : সমকাল