প্রকাশ : রোববার ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:৪৭

পার্বত্য জেলাগুলোতে সবসময় একটা বিশেষ অবস্থা বিরাজমান। পুরো বাংলাদেশের জীবনযাত্রায় যে সাবলীলতা ও স্বাভাবিকতা রয়েছে, পার্বত্য তিন জেলায় তা নেই। এ ধরনের অস্বস্তিকর পরিবেশ কৃত্রিমভাবে তৈরি করে রাখা হয়েছে। কোনো ধরনের আইনশৃঙ্খলা বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হলে তাকে বিশেষভাবে চিত্রিত করতে বিভিন্ন পক্ষ সেখানে সক্রিয় হয়ে ওঠে। চুরি-ডাকাতি, খুন-ধর্ষণ যাই ঘটুক না কেন, এটিকে বাঙালি বনাম পাহাড়ি গোষ্ঠীর বিরোধ হিসেবে চিত্রিত করে চরম দেশবিরোধী প্রচারণা চালানো হয়। খাগড়াছড়িতে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগের পর পুরনো নিয়মে মিথ্যা, ভুল ও অপতথ্য ছড়িয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। এভাবে দুরভিসন্ধিমূলকভাবে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেয়ার পুরনো অপচেষ্টা পার্বত্য অঞ্চলের জনমনের বিভক্তিকে আরো উসকে দিচ্ছে। বরাবর বাংলাদেশের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে এর মাধ্যমে বিঘ্নিত করার ক্রমাগত অপচেষ্টা চললেও বিষয়টি ঠিকভাবে মোকাবেলা করা যাচ্ছে না।
এবারে অষ্টম শ্রেণী পড়–য়া মারমা সম্প্রদায়ের এক ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করা হয়। ঘটনাটি ঘটে ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ি শহরে। অভিযুক্ত ধর্ষকদের গ্রেফতার দাবিতে জুম্ম ছাত্র-জনতা সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ করে। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ৯ উপজেলার সড়ক যোগাযোগ অচল হয়ে পড়ে। অবরোধকালে সড়কে এলোপাতাড়ি গাছের গুঁড়ি ফেলা হয়। এ সময় দেদার গাছ কাটা হয়, হেনস্তা করা হয় পর্যটকদের। অবরোধের ওই এলাকায় তিন হাজার পার্যটক আটকা পড়েন। গুরুতর ব্যাপার হচ্ছে- পাহাড়িদের আন্দোলন বরাবরের মতো বাঙালিদের সাথে সংঘর্ষে রূপ নেয়। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হামল-ভাঙচুর করা হয়। আগের মতো পাহাড়ি-বাঙালি পরস্পরকে দোষারোপ করছে। সামাজিকমাধ্যমে গুজব অপতথ্য ছড়িয়ে দিয়ে পরিস্থিতি আরো অবনতির অপচেষ্টা হচ্ছে। এ দিকে বরাবরের মতো সেনাবাহিনীকে নিশানা করে অপপ্রচার শুরু হয়ে গেছে।
যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছে সে প্রকৃত অপরাধী কি না তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এর আগেও একই ধরনের ঘটনায় পাহাড়ি-বাঙালি মুখোমুখি হলে পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়। পরে দেখা যায়, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে সে দোষী নয়। মোটকথা, পার্বত্য জনপদে আইনশৃঙ্খলাজনিত কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তা পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটাতে ব্যবহার হচ্ছে। পাহাড়িদের রাজনৈতিক গোষ্ঠীর একটি অংশ এতে জড়িত হলেও উসকানি দিচ্ছে দেশবিরোধী শক্তি। সম্প্রতি এর সাথে যুক্ত হয়েছে পতিত আওয়ামী লীগ, অপপ্রচার চালিয়ে অবস্থার অবনতি ঘটিয়ে তা থেকে ফায়দা নিতে চায় তারা।
পার্বত্য তিন জেলা নিয়ে ষড়যন্ত্র সবসময় আছে। ধর্ষণসহ স্পর্শকাতর ঘটনা থেকে যাতে দেশবিরোধী চক্র স্বার্থ হাসিল করতে না পারে সে জন্য সব পক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে। বারবার দেখা যায়, পাহাড়ি ও বাঙালিরা মাথা গরম করে নিজেরাই পরিস্থিতির শিকার হয়ে যায়। পাহাড়ের সব জনগণের স্বার্থে স্বার্থান্বেষী চক্রের ফাঁদে পড়া থেকে তাদের বিরত থাকতে হবে। ধর্ষণের ঘটনাটির সঠিক তদন্ত দরকার। অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি যারা এ ধরনের ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে ফায়দা নিতে চায় তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে সজাগ থাকতে হবে।