- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০২ জুলাই ২০২০
সংস্কার ও আধুনিকয়ানের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে শ্রমিকদের শতভাগ পাওনা বুঝিয়ে দেয়ারও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আর শ্রমিকদের পাওনা টাকার অর্ধেক নগদ এবং বাকি অর্ধেক মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র আকারে পরিশোধ করবে সরকার।
ধারাবাহিকভাবে লোকসানে থাকা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকলের ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী কর্মচারীর চাকরি ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের’ মাধ্যমে অবসায়নের সিদ্ধান্ত গত রোববার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জানান বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।
বস্ত্র ও পাট সচিব লোকমান হোসেন মিয়া ওই দিন বলেন, শ্রমিকদের অবসায়নের পর আগামী ছয় মাসের মধ্যে পিপিপির (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব) আওতায় আধুনিকায়ন করে এসব পাটকলকে উৎপাদনমুখী করা হবে। তখন এসব শ্রমিক সেখানে চাকরি করার সুযোগ পাবেন।
মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর বিরাজমান পরিস্থিতি স্থায়ী সমাধানসহ পাটখাতে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো ১ জুলাই থেকে বন্ধ ঘোষণা এবং গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধার আওতায় কর্মরত ২৪ হাজার ৮৮৬ জন শ্রমিকের সমুদয় পাওনা এককালীন পরিশোধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।’
পাওনা বুঝিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্ত
‘শ্রম আইন অনুযায়ী নোটিশ মেয়াদের অর্থাৎ ৬০ দিনের মজুরি। চাকরিবিধি অনুযায়ী প্রাপ্য গ্রাচ্যুইটি, পিএফ তহবিলে জমাকৃত অর্থ এবং নির্ধারিত হারে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধা পাবেন।’
প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, প্রতি শ্রমিক সর্বনিম্ন ১৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫৪ লাখ টাকা পর্যন্ত পাবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। সরকার বলছে, একই সাথে ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত অবসরে যাওয়া ৮ হাজার ৯৫৬ জন শ্রমিক ও বদলি শ্রমিকদের সমুদয় পাওনা একসঙ্গে পরিশোধ করা হবে।
কীভাবে এই টাকা পরিশোধ করা হবে তার ব্যাখ্যায় বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শ্রমিকের পাওনার অর্ধেক নগদ এবং বাকি অর্ধেক তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র আকারে দেওয়ার ফলে শ্রমিকরা এক প্রকারের বাধ্যতামূলক সঞ্চয়ের সুযোগ পাবেন, যা তাকে প্রতি তিন মাস অন্তর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মুনাফা দেবে। এতে শ্রমিকদের জন্য একটি বাড়তি আর্থিক সুরক্ষা তৈরি হবে।
যারা ১৪ লাখ টাকা পাবেন তাদের ৭ লাখ টাকা নগদ দেয়া হবে। আর বাকি ৭ লাখ টাকার মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র থেকে তিন মাস পরপর ১৯ হাজার ৩২০ টাকা করে পাবেন।
যাদের পাওনা ২৪ লাখ টাকা তারা তিন মাস পর পর সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৩ হাজার ১২০ টাকা, যাদের পাওনা ৩৮ লাখ টাকা তারা সঞ্চয়পত্র থেকে ৫২ হাজার ৪৪০ টাকা এবং যাদের পাওনা ৫৪ লাখ টাকা তারা তিন মাস অন্তর সঞ্চয়পত্র থেকে ৭৪ হাজার ৫২০ টাকা করে পাবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
শ্রমিকদের কল্যাণের কথা ভেবেই গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের সিদ্ধান্ত: প্রতিমন্ত্রী
শ্রমিকদের ‘শতভাগ’ পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত সরকার চূড়ান্ত করেছে বলে বৃহস্পতিবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস জানিয়েছেন।
মুখ্য সচিব জানান, দুই লাখ টাকার কম যাদের পাওনা হবে, তাদের পুরো টাকা তাৎক্ষণিকভাবে নগদ দেয়া হবে।
আর দুই লাখের বেশি পাওনা হলে ৫০ শতাংশ টাকা তাৎক্ষণিকভাবে নগদ দেয়া হবে। বাকি ৫০ শতাংশ টাকা তাদের দেয়া হবে তিন মাস মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের আকারে।
‘প্রকৃত অর্থে একজন শ্রমিক যা এখন নগদে পেত তার চেয়ে বেশি পাবে যদি আমি মাসিক মুনাফাটা হিসাব করি। নিম্নআয়ের শ্রমিক ভাই-বোনদের জীবনের নিশ্চয়তার জন্যই প্রধানমন্ত্রী এটি করেছেন।’