পাকিস্তান থেকে সেই জাহাজে এসেছে সোডা-আলু-পেঁয়াজ-খেজুর

জাহাজটি থেকে ৩৭০ একক কনটেইনার চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে খালাস করা হয়

জাহাজটি থেকে ৩৭০ একক কনটেইনার চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে খালাস করা হয়

পাকিস্তানের করাচি থেকে পণ্যবাহী একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিল গত সোমবার। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো দুই দেশের মধ্যে নৌপথে সরাসরি পণ্য পরিবহন যোগাযোগ শুরু হলো। আগে পাকিস্তানের কনটেইনার পণ্য তৃতীয় দেশ হয়ে চট্টগ্রামে আসতো। এবার ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ জাহাজে করে সরাসরি পাকিস্তান থেকে কনটেইনারে কী পণ্য আনা হয়েছে, তা নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে অনেকের। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, কনটেইনার জাহাজটি দুবাই থেকে করাচি হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে সোমবার (১১ নভেম্বর)। এদিন জাহাজটি থেকে ৩৭০ একক কনটেইনার চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে খালাস করা হয়। এর মধ্যে করাচি বন্দর থেকে আনা হয়েছে ২৯৭ কনটেইনার। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আনা হয়েছে ৭৩ একক কনটেইনার। ১২ নভেম্বর ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় জাহাজটি। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ শুক্রবার ৩১৭ কনটেইনারের কথা জানালেও শনিবার টার্মিনালে গিয়ে ৩৭০ একক কনটেইনার পেয়েছে বলে জানিয়েছে কাস্টমস।

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান থেকে আমদানি হওয়া কনটেইনারে রয়েছে শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য। এসব পণ্যের ওজন ছয় হাজার ৩৩৭ টন। পাকিস্তানের ১৮টি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য সরবরাহ করেছে।

কাস্টমসের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী, পাকিস্তান থেকে জাহাজটিতে করে সবচেয়ে বেশি আনা হয়েছে সোডিয়াম কার্বনেট বা সোডা অ্যাশ। টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় এটি। মোট ১১৫ কনটেইনারে রয়েছে সোডা অ্যাশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমদানি পণ্য হলো খনিজ পদার্থ ডলোমাইট। ডলোমাইট রয়েছে ৪৬ কনটেইনারে। মোট ৩৫ একক কনটেইনারে আনা হয়েছে চুনাপাথর। ম্যাগনেশিয়াম কার্বোনেট আনা হয়েছে ছয় কনটেইনারে।

এ ছাড়া কাচশিল্পের কাঁচামাল ভাঙা কাচ আনা হয়েছে ১০ কনটেইনারে। শতভাগ রফতানিমুখী পোশাকশিল্পের কাঁচামাল কাপড়, রং ইত্যাদি রয়েছে ২৮ কনটেইনারে। একটি কনটেইনারে রয়েছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। এসব পণ্য আমদানি করেছে আকিজ গ্লাস কারখানা, নাসির ফ্লোট গ্লাস, প্যাসিফিক জিনস, এক্স সিরামিকস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

পাশাপাশি ৪২ একক কনটেইনারে পেঁয়াজ আনা হয়েছে। যার পরিমাণ ৬১১ মেট্রিক টন। এর বাইরে ১৪ একক কনটেইনারে আলু আমদানি হয়েছে ২০৩ টন। এই দুটো পণ্য আনা হয়েছে হিমায়িত কনটেইনারে। পেঁয়াজ-আলু এনেছে ঢাকার হাফিজ করপোরেশন, এম আর ট্রেডিংস ও চট্টগ্রামের আল্লাহর রহমত স্টোর।

পাকিস্তান ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আনা কনটেইনারে রয়েছে খেজুর, জিপসাম, পুরোনো লোহার টুকরো, মার্বেল ব্লক, কপার ওয়্যার, রেজিন ইত্যাদি পণ্য। শুধু একটি কনটেইনারে এসেছে হুইস্কি, ভদকা ও ওয়াইন। আরব আমিরাতের ট্রুবেল মার্কেটিং অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানি থেকে এই পণ্য এনেছে ঢাকার ডিপ্লোমেটিক ওয়্যারহাউস সাবির ট্রেডার্স।

সাধারণত ঘোষণা অনুযায়ী পণ্য ঠিক আছে কিনা, তা যাচাই করে ছাড়পত্র দেয় কাস্টমস। এরপরই খালাস করে নেন আমদানিকারকরা। ইতোমধ্যে পণ্যের আমদানিকারকরা কাস্টমসে বিল অব এন্ট্রি জমা দিয়েছেন।

পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানিকারক খাতুনগঞ্জের ফারুক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার ফারুক আহমেদ বলেন, ‌‘পণ্য পরিবহনের এই সেবা চালুর আগে পাকিস্তানের করাচি থেকে প্রথমে জাহাজে করে শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া কিংবা সিঙ্গাপুরের বন্দরে আনা হতো চট্টগ্রামমুখী কনটেইনার। পরে এসব বন্দর থেকে চট্টগ্রামমুখী ফিডার জাহাজে তা তুলে দেওয়া হতো। সরাসরি সেবা চালুর পর এখন করাচি থেকে জাহাজে বোঝাই করার পর কোনও বন্দরে ওই কনটেইনার নামানোর দরকার হবে না। এতে লাভবান হবেন ব্যবসায়ীরা।’

এসব তথ্য শনিবার (১৬ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের করাচি থেকে একটি জাহাজ কনটেইনারভর্তি বিভিন্ন পণ্য নিয়ে চট্টগ্রামে এসেছিল। আমরা যাচাই করে দেখেছি, পাকিস্তান থেকে আসা কনটেইনারে রয়েছে সোডা অ্যাশ, ডলোমাইট, চুনাপাথর, ম্যাগনেশিয়াম, কাচশিল্পের কাঁচামাল, পোশাকশিল্পের কাঁচামাল, রং, গাড়ির যন্ত্রাংশ ও আলু-পেঁয়াজ। আর সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আসা কনটেইনারে আছে খেজুর, জিপসাম, মার্বেল ব্লক ইত্যাদি।’

তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান থেকে প্রতি সপ্তাহে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য আমদানি হয়। তবে এতদিন সরাসরি পাকিস্তান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আসতো না। তৃতীয় কোনও দেশে খালাসের পর ভিন্ন জাহাজে চট্টগ্রামে আনা হতো। এটিই প্রথম জাহাজ যার মাধ্যমে সরাসরি করাচি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যবাহী কনটেইনার নিয়ে আসা হয়। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে নৌপথে সরাসরি যোগাযোগ শুরু হলো।’

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘ইতোমধ্যে কাস্টমসে বিল অব এন্ট্রি জমা দিয়েছেন আমদানিকারকরা। জাহাজটি কনটেইনারগুলো নামিয়ে পরদিন বন্দর ত্যাগ করেছে। ওই দিন আমাদের জানানো হয়েছিল, ৩১৭টি কনটেইনার এসেছিল। আজ আমরা দেখলাম ৩৭০টি। এর মধ্যে সবই কাঁচা পণ্য।’

উৎসঃ   বাংলা ট্রিবিউন