পাঁচ মাসে রিজার্ভ থেকে ৫.৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি

 বৈদেশিক মুদ্রার মজুত (রিজার্ভ) থেকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৫৯০ কোটি (৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত জ্বালানি, সার ও খাদ্য আমদানির জন্য এই ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ডলার বিক্রির ফলে কমে যাচ্ছে রিজার্ভ। নভেম্বর শেষে গ্রস নিট রিজার্ভ (জিআইআর) কমে হয়েছে ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। গত জুন শেষে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে যে রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে চার মাসের কিছু কম সময়ের আমদানি দায় মিটবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসেবে রিজার্ভ রয়েছে ২৫ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, সে হিসেবে প্রতি মাসে ১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন করে ডলার বিক্রি হয়েছে। গত ২ নভেম্বর পর্যন্ত ডলার বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে রিজার্ভ কমেছে ৫ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ প্রতি মাসে রিজার্ভ থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি কমছে। মূলত ডলার বিক্রির কারণে রিজার্ভের ক্ষয় থামানো যাচ্ছে না।

যদিও রিজার্ভ সব সময় সব আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় না। শুধু সরকারি অতি প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সূত্র জানায়, করোনার সময় দেশে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় আসে। তখন ডলারের বাজার ও দাম স্থিতিশীল রাখতে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজার থেকে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কিনে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসেবে রিজার্ভ বেড়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছেড়ে যায়। ২০২১-২২ অর্থবছর রিজার্ভ থেকে সব মিলিয়ে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত অর্থবছর (২০২২-২৩) বিক্রি করে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। এই ধারা অব্যাহত আছে চলতি অর্থবছরও। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ৫৯০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব মিলিয়ে গত ১৭ মাসে রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার বাজারে ছেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক আগে বেসরকারি আমদানিকারকদের ডলার দিলেও এখন দিচ্ছে না। ফলে ডলারের জন্য ব্যাংকগুলোর শেষ আশ্রয়স্থল বলে কিছু নেই। ডলার-সংকটের কারণে আমদানির ঋণপত্র খোলা কমিয়ে দিয়ে ব্যাংকগুলো। বর্তমানে ছোট-বড় সব আমদানিকারকই ঋণপত্র খুলতে সমস্যায় পড়ছেন।

ডলার-সংকট, আমদানিতে নিয়ন্ত্রণের কারণে ব্যাংকে এখন ঋণপত্র খোলা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে এলসি বা ঋণপত্র খোলা কমেছে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। একই সময় ঋণপত্র নিষ্পত্তির পরিমাণ কমেছে ২৪ শতাংশের বেশি। মূলত ব্যাংকগুলো ডলার সংকটের কারণে নিষ্পত্তি কমে গেছে।

এদিকে ডলারের পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে দাবি বাংলাদেশ ব্যাংক ও ডলারের দর নির্ধারণ করে দেয়া দুই সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি)। ব্যাংকগুলো ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম কমালেও বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। এখন ডলার সংকট আরও তীব্র হয়েছে, দামও বেড়েছে। এখনও প্রবাসী আয়ে প্রতি ডলারের দাম ১২৩ টাকা দিচ্ছে। যদিও ঘোষণায় প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম ১০৯ টাকা ৭৫ পয়সা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু ব্যাংককে বেশি দামে ডলার কেনার সুযোগ দিচ্ছে। অন্যদিকে এসব ব্যাংক থেকে ডলার কিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ বাড়ানোর চেষ্টা করলেও তা বরং কমছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডলারের দর বাজারভিত্তিক না হওয়ার কারণে হুন্ডি প্রবণতা বেড়েছে। তাই প্রবাসী আয় বৈধ পথে না এসে অবৈধ পথে আসছে বেশি। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ না আসার কারণে ডলার সংকট আরও প্রকট হচ্ছে। তাই ডলার দর বাজারভিত্তিক ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, গত এক বছর দেশের রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। বর্তমানে দেশের রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় না বাড়ার কারণে ডলার সংকট রয়েছে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ডলার রেট বাজার করার পরামর্শ দিয়েছে। কারণ রিয়েল ইফেকটিভ এক্সচেঞ্জ রেট বর্তমানে আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারণ করা রেটের চেয়েও বেশি। এক্ষেত্রে ডলারের দাম একসঙ্গে অ্যাডজাস্ট না করতে পারলেও দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে।

শেয়ার বিজ