পাঁচটি সমস্যার সমাধান করতে হবে ইংল্যান্ডকে

  • নয়া দিগন্ত অনলাইন
  •  ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ২০:৩৮

ক্রিকেট-অ্যাশেজ

পাঁচটি সমস্যার সমাধান করতে হবে ইংল্যান্ডকে – ছবি : সংগৃহীত

হোবার্টে পঞ্চম ও শেষ টেস্টে ইংল্যান্ডকে ১৪৬ রানে হারিয়ে ৪-০ ব্যবধানে অ্যাশেজ সিরিজ জিতে নিজেদের কাছেই ট্রফি রেখেছে অস্ট্রেলিয়া। এ সিরিজে ইংল্যান্ড দলের বেশ কিছু দুর্বলতা ছিল চোখে পড়ার মত। তাই ভবিষ্যতে দলটির ভাল করতে হলে অবশ্যই কিছু ক্ষেত্রে সমস্যান সমাধান করতে হবে। আগামী মার্চে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগেই অন্তত পাঁচটি সমস্যার সমাধান করতে হবে ইংলিশ দলটির।

ভুল নির্বাচন :
খেলোয়াড়দের ফিট রাখতে ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে নির্বাচনে গত বছর থেকেই সমালোচনার মুখে পড়েন অধিনায়ক জো রুট। তাই খুব কম সময়ই শক্তিশালী একাদশকে মাঠে নামাতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

কিন্তু ব্রিজবেনে প্রথম টেস্টে গাব্বার সবুজ উইকেটে একাদশ নিয়ে সবচেয়ে উপহাসই হয়েছে। সবুজ পীচে ইংল্যান্ড দলের সেরা দুই পেসার জেমস এন্ডারসন এবং স্টুয়ার্ট ব্রডকে বাদ দেয়া হয়েছিল। যে কন্ডিশনে তারাই সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত ছিলো। এছাড়া বাঁ-হাতি স্পিনার জ্যাক লিচকে বেছে নিয়েছিলো ইংল্যান্ড। বল হাতে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তিনি। তবে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের দলে ফিরেছিলেন অভিজ্ঞ এই পেস জুটি।

প্রথম টেস্ট হেরে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে ইংল্যান্ড। অ্যাডিলেডে দিবা-রাত্রির টেস্টে ফ্ল্যাট উইকেটে রাতের সেশনে আলোর নীচে গোলাপি বল সাধারনত ভিন্ন ধর্মী আচরণ করতে ।

পেসার মার্ক উড এবং স্পিনার লিচকে বাদ দিয়ে পাঁচ পেসার নিয়ে একাদশে সাজানো হলো। এন্ডারসন, ব্রড, রবিনসন, ওকস এবং বেন স্টোকসসহ পাঁচ পেসারের বোলিং আক্রমণে কোনও বৈচিত্র্য ছিল না।

ভঙ্গুর ব্যাটিং :
এবারের অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের পক্ষে একমাত্র সেঞ্চুরি ম্যান জনি বেয়ারস্টো। কোন ইনিংসেই দলীয় রান ৩শ স্পর্শ করতে পারেনি।
ব্যাটিং অর্ডারের শীর্ষ ব্যাটারদের আত্মবিশ্বাস কম থাকায় বেপরোয়া শট খেলে নিজেদের ভুলে আউট হয়েছেন।

২০২১ সালে টেস্টে মোট ১৭০৮ রান করেছেন রুট। যা এক বর্ষ পঞ্জিকায় তৃতীয় সর্বোচ্চ রান । কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের সামনে প্রায়ই একাই প্রতিরোধ গড়েছিলেন রুট। তবে নিজ থেকে অ্যাশেজ জিততে চাননি তিনি। ররি বার্নসকে পেছনের পায়ে বোল্ড করতে মিচেল স্টার্কের সিরিজের প্রথম থেকেই পরিকল্পনা করা ছিলো। উল্লেখযোগ্য কিছু জুটি ছিলো, ব্যাটিং ধসের পর সেগুলো হয়েছিলো।

রুটের অধিনায়কত্ব :
ব্যাট হাতে রুটের প্রতিভা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই, তবে হয়তো সময় এসেছে অধিনায়কত্বের গুরু দায়িত্ব থেকে তাকে নির্ভার করার। যেখানে রেকর্ড সংখ্যক খেলায় দায়িত্বে থাকার পরও রুটকে অস্বস্তিতে দেখা গেছে। বিশ্বের দুর্দান্ত বোলিং লাইন-আপ- স্টার্ক-হ্যাজেলউড-কামিন্সের সামনে ব্রিজবেনে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং নেয়াটা অনেক ভুলের মধ্যে অন্যতম প্রথম ভুল।

প্রায়শই রান বাঁচানোর জন্য রক্ষণাত্মক কৌশল ব্যবহার করার কথা বলেন রুট। তারপর অ্যাডিলেডে তার বোলারদের ‘সাহসী’ হবার পরামর্শও দেন তিনি। তবে অস্ট্রেলিয়ার টপ-অর্ডার ও মিডল-অর্ডারকে চাপে রাখতে ফিল্ডিংয়ের কৌশল সেভাবে করা হয়নি।
ইংল্যান্ডের জন্য সমস্যা হল দায়িত্ব নেয়ার মত একমাত্র প্রার্থী, অনুপ্রেরণামূলক বেন স্টোকস বলেছেন, তিনি দায়িত্ব নিতে চান না। এদিকে, কোচ ক্রিস সিলভারউডের অবস্থানও হুমকির মুখে।

মৌলিক ভুল :
ইংল্যান্ডের মৌলিক বিষয়গুলি সঠিকভাবে করতে ব্যর্থতার বৈশিষ্ট্য ছিল সিরিজের প্রথম বলে পায়ের সঠিক ব্যবহার না করে হাফ-ভলি বল মিস করেছিলেন বার্নস। স্টোকস এবং রবিনসন নো-বলে উইকেট নিয়েছিলেন এবং ফিল্ডিং ছিলো যাচ্ছেতাই । সহজ ক্যাচগুলো ড্রপ হয়েছে। বেশ কয়েকটি রান আউটের সুযোগ মিস হয়েছিলো।

বোলাররা ধারাবাহিকভাবে সঠিক লাইন-লেন্থ খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হয়েছে। খুব কম বলই অস্ট্রেলিয়ার বাউন্সি উইকেটে স্টাম্পে ভাঙ্গার জন্য যথেষ্ট ছিলো না, বিশেষ করে প্রথম তিনটি টেস্টে। এখানেই সিরিজ নির্ধারণ হয়েছিল।

খারাপ সময়সূচী :
কোভিড সকল পরিকল্পনাকে বাধাগ্রস্থ করেছে। অস্ট্রেলিয়া ঘরোয়া দলগুলোর বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ না নিয়ে অ্যাশেজ সিরিজে খেলতে নামা খুব খারাপ পদক্ষেপ ছিলো বলে মনে করা হচ্ছে। ইংল্যান্ডের প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিলো। কিছু খেলোয়াড় সরাসরি টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপ খেলে আসে এবং তাদের টেস্ট পারফরমেন্স থেকেই মনে হচ্ছিলো তারা সাদা বলের ক্রিকেট খেলার মুডে ছিলো।

বিপরীতে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের খেলোয়াড়রা ঘরোয়া শেফিল্ড শিল্ড টুর্নামেন্টে তাদের রাজ্য দলের জন্য লাল-বলের ক্রিকেট খেলার একাধিক সুযোগ পেয়েছিলো এবং যা তাদের আধিপত্য দেখাতে সহায়তা করে। এমনকি আবহাওয়ার কারনে কম খেলা হওয়ায় সিডনিতে একমাত্র ড্র করতে পেরেছিলো ইংল্যান্ড এবং খুব কম খেলা হয়েছে, খুব দেরিও হয়েছিলো।