পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মনে করে আওয়ামী লীগ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। এজন্য তারা ৬টি কারণ উল্লেখ করেছেন। এগুলো হচ্ছে- রাজপথে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি দেখানো, অন্তর্দ্বন্দ্ব ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকা, আন্তর্জাতিক চাপ সামলানো, আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ানো, বিএনপি-জামায়াতের আগের কর্মকাণ্ডের সঠিক প্রচারণা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর ভূমিকায় সহায়তা করা। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ আরও কয়েক স্তরের নেতাদের বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে।

দলটির নেতারা মানবজমিনকে বলেন, গত কয়েক মাস আওয়ামী লীগকে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। সরকার হঠাতে মহাসমাবেশের নামে নৈরাজ্য পরিস্থিতি তৈরি করা, টানা অবরোধ পালন, চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে জানমালের ক্ষতিসাধন থেকে শুরু করে মানুষ হত্যার মতো নির্মম ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এসবই হয়েছে নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যে। তারা জানান, বিএনপি-জামায়াতের প্রধান লক্ষ্য, যেকোনো মূল্যে দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করা। রাজপথে আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থানের জন্য তারা সেটা ব্যাপকভাবে পারেনি। তাদের লক্ষ্যবস্তু তফসিল ঠেকানো। এজন্য টানা অবরোধসহ চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়েছে।

কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তফসিল ঘোষণা করেছে। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগ এখন নির্বাচনের জন্য শনিবার থেকে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করেছে। অর্থাৎ পুরোপুরি ভোটের মাঠে নেমে পড়েছে আওয়ামী লীগ। তাই সার্বিকভাবে পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর যেকোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর অবস্থানে যাবে বলে জানান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। একইসঙ্গে নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য মাঠ ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর দলটি। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য নেমে পড়েছে। নির্বাচন যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে। যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোও গত ২৮শে অক্টোবরের পর বুঝতে পারছে যে স্বাভাবিকতা বাধাগ্রস্ত হয়ে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হলে শুধু আমরা নয় তারাও শান্তিতে থাকতে পারবে না।

পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আর মাহমুদ স্বপন মানবজমিনকে বলেন, প্রথমত বিএনপির মূল নেতৃত্ব বিভ্রান্ত ও রংহেডেড, তাদের দ্বিতীয় সারির নেতাগণ সংগ্রামী ও দৃঢ়চেতা নন। তারা মূল নেতৃত্বের ওপর চরম বিরক্ত ও আস্থাহীনতায় ভোগেন। তাদের কর্মীরা দীর্ঘদিন পর বেশ জেগে উঠেছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতাদের হাঁটুর তীব্র কম্পন দেখে তারা হতাশ। কেবল বিদেশ নির্ভরতার ওপর আন্দোলন হয় না। বড় দলের আন্দোলন জনসম্পৃক্ত না হলেও চলে, কর্মীরা মাঠে সাহস নিয়ে থাকলেই হয়। কর্মীদের সাহসের উৎস নেতারা। বিএনপি’র সেই নেতৃবৃন্দ নেই। ফলে তাদের পক্ষে  নাশকতা ব্যতীত তীব্র আন্দোলন রচনা করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল হয়েছে। যথাসময়ে নির্বাচন হবে। এবারের নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের হার গ্রহণযোগ্য পরিমাণ হবে। আওয়ামী লীগের সেই সক্ষমতা আছে। বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চাইলে নির্বাচন ভিন্ন অন্য কোনো পথ খোলা নেই। আশাকরি তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।

আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অসাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠার  সঙ্গে সম্পৃক্ততার শাস্তি প্রচলিত আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি। ফলে বাংলাদেশের কোনো নাগরিক বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য জীবনের ঝুঁকি নেবে না। বিদেশিরাও যে নেবে না এটা তো ২৮শে অক্টোবরের পর বিএনপি আঁচ করতে পেরেছে সম্ভবত। তাছাড়া বাইরের বিশেষ ওহি আসলেও নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে অসাংবিধানিক সরকার বসাতে হলে দেশের কোনো না কোনো সংঘবদ্ধ শক্তি লাগবে। দেশে সেই সংঘবদ্ধ শক্তি বিদেশিরা খুঁজে পাবেন না। সুতরাং নির্বাচনই একমাত্র পন্থা এবং সেই নির্বাচন হবে ইসির অধীনে। আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এই নির্বাচনের একদফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে বিএনপিসহ দলটির যুগপৎ আন্দোলন সঙ্গীরা। গত ৩১শে অক্টোবর থেকে বিএনপি ধারাবাহিক অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে আসছে। নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি’র আরও বড় ধরনের কর্মসূচি আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা প্রতিহত করে যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ ও সরকারের কঠোর অবস্থানও অব্যাহত আছে। নির্বাচন ঠেকাতে সহিংসতা, সন্ত্রাস, নাশকতা প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাজপথে অবস্থান নিয়েছেন। একইসঙ্গে তফসিল ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমও বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হয়েছে বলে দলের নেতারা জানান।

আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে নেতারা জানান, নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি ও দলটির সঙ্গীরা চেষ্টা করলেও তারা সফল হবে না। যদিও দলটি ইতিমধ্যেই দেশকে অস্থিতিশীল করতে সহিংসতা, নাশকতা শুরু করেছে। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এখন পরিস্থিতি যাতে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা যায় তার জন্য সরকার আরও কঠোর অবস্থানে যাবে। একই প্রসঙ্গে দলটির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, নির্বাচনের তফসিল হয়ে গেছে। এখন আমরা ভোটের মাঠে নেমে পড়েছি। পাশাপাশি আমাদের নেতাকর্মীরা রাজপথেও আছে। তিনি বলেন, এই নির্বাচনে বাধা দেয়া বা ভোটের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা জনগণ মেনে নেবে না। এই নির্বাচনে কোন দল এলো বা এলো না তার জন্য নির্বাচন থেমে থাকবে না। জনগণের অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে।

মানব জমিন