সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি। আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়ে জামিনও পেয়েছেন। তাঁর সহকর্মী অনেকেই গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে গেছেন। জামিন পাননি। এ নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন এম এ মান্নান। তিনি গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি চান। এম এ মান্নান বলেছেন, উচিত অভিযোগ ও সঠিক তদন্তের ভিত্তিতে উপযুক্ত পরিবেশে ন্যায্য আদালতে গণহত্যার উচিত বিচার চাই। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহেদ চৌধুরী
সমকাল : জামিনে বেরিয়েই বললেন, জেলে যাওয়ার কথা কল্পনাও করেননি। আপনি মন্ত্রী ও এমপি ছিলেন। রাজনীতি করলে কারাগারে যেতেই হতে পারে। তাহলে জেল থেকে বেরিয়ে এমন মন্তব্য করলেন কেন?
এম এ মান্নান : জেলে যাওয়ার কাজ করিনি। তাই জেলে যাওয়ার কথা কল্পনায়ও আসেনি।
সমকাল : আপনার সহকর্মী অনেকেই গ্রেপ্তার হয়ে একাধিকবার রিমান্ডে গেছেন। অনেকে পালিয়েছেন। পালাতে গিয়ে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ অবস্থায় আপনি জামিন পেয়েছেন। এ নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। কিছু বলবেন?
এম এ মান্নান : কে কী বললেন, সেটি তাদের বিষয়। তবে আমি পালাইনি। পালাব কেন? আর আমার বিরুদ্ধে খুনের মামলা হয়নি। তবুও তিন দফায় জামিন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। আদালত আরও আগেই আমাকে জামিন দিতে পারতেন। আমি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলাম। তাই এতটুকু বলতে পারি, ন্যায়সংগতভাবেই জামিন পেয়েছি।
সমকাল : জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলা হচ্ছে। ওই সরকারে আমন্ত্রণ জানানো হলে যাবেন কিনা?
এম এ মান্নান : এ প্রসঙ্গের মধ্যেই আমি নেই। তা ছাড়া এটি নিয়ে এখনই কিছু বলার সময় আসেনি।
সমকাল : মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৯০, এরপর এবার গণঅভ্যুত্থান হলো। এবারের গণঅভ্যুত্থান কেন হলো? এ জন্য কি আওয়ামী লীগ সরকার দায়ী নয়?
এম এ মান্নান : আওয়ামী লীগ সরকার দায়ী কিনা, সেটা ইতিহাস বিচার করবে।
সমকাল : দুর্নীতি-অনিয়ম ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ রাষ্ট্র পরিচালনায় আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ রয়েছে। মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে এসব বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কোনো পরামর্শ দিয়েছিলেন?
এম এ মান্নান : দুর্নীতি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি– এ দুটি ভয়ংকর শব্দ বাংলাদেশে বেশ পরিচিত। দুর্নীতি আছে। হয়তো আগামীতেও থাকবে। তবে এসব নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কখনও কথা হয়নি। দাপ্তরিক কাজে আমি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মানতাম। প্রয়োজনে ভিন্নমতও দিয়েছি। আমি সব দুর্নীতির বিচার চাই।
সমকাল : আওয়ামী লীগ মাঠে নেই। এ অবস্থায় কী করবেন? রাজনীতিতে থাকবেন?
এম এ মান্নান : অপেক্ষা করুন। তবে দয়া করে আমার বয়সটাও বিবেচনায় রাখুন। আমার বয়স ৭৮।
সমকাল : শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
এম এ মান্নান : একজন নাগরিক হিসেবে কষ্ট পেয়েছি। তিনি কেন দেশ ছাড়লেন, তা বুঝতে পারিনি। অবশ্য দুনিয়ার অনেক দেশেই এমন ঘটনার নজির রয়েছে।
সমকাল : অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?
এম এ মান্নান : এই সরকার দেশের ভালো করুক, সেটাই প্রত্যাশা। আমি দেশের ভালো চাই।
সমকাল : অন্তর্বর্তী সরকার কি মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে?
এম এ মান্নান : মহান আল্লাহই ভালো জানেন। মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হলে খুশি হবো।
সমকাল : বর্তমান পরিস্থিতিকে কোন দৃষ্টিতে দেখছেন?
এম এ মান্নান : আমরা ইতিহাসের একটি পর্যায় অতিক্রম করছি। আর ভালো-মন্দের বিচার করবে ইতিহাস। যাই হোক, সংস্কারের কথা শুনছি। আমিও সংস্কার সমর্থন করি। আমি আমলা ছিলাম। তাই বিশেষ করে আমলাতন্ত্রের সংস্কার চাই।
সমকাল : বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনের কথা বলছে। আপনার মতে, কবে নির্বাচন হওয়া উচিত?
এম এ মান্নান : দ্রুতই সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় ফিরে যাওয়া দরকার। এ জন্য দ্রুতই নির্বাচন হওয়া উচিত।
সমকাল : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সম্পর্কে কিছু বলবেন?
এম এ মান্নান : ওই সময়ে ঢাকার বাইরে থাকায় এ বিষয়ে আমার কাছে তথ্য কম। তবে মানুষের মৃত্যুর জন্য আমি লজ্জিত, দুঃখিত। স্বাধীন দেশে আমার সন্তান কেন মারা যাবে? আমার টাকায় কেনা গুলিতে ছাত্ররা মরবে কেন? এসব অন্যায়। আমি ৪ আগস্টেই গণমাধ্যমে এ কথাগুলো বলেছি।
সমকাল : কে দায়ী এই জন্য? তখন তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল।
এম এ মান্নান : আমার পাহারার সময় ঘরে চুরি হলে আমাকে সন্দেহ করবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু আমাকে দোষী প্রমাণ করতে হলে উপযুক্ত বিচার করে শাস্তি দিতে হবে।
সমকাল : সরকার পতনের পর আপনি পালালেন না। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা পালালেন কেন?
এম এ মান্নান : অনেকেই হুজুগে পালিয়ে গেছেন। প্রাণ বাঁচাতেও পালিয়েছেন কেউ কেউ। আমি কখনোই পালাব না।
সমকাল : গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি চান কিনা?
এম এ মান্নান : কেন চাইব না? অবশ্যই শাস্তি চাই। উচিত অভিযোগ ও সঠিক তদন্তের ভিত্তিতে উপযুক্ত পরিবেশে ন্যায্য আদালতে গণহত্যার উচিত বিচার চাই। মনে রাখতে হবে, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
samakal