নীরবে ঢাকা ঘুরে গেলেন রোনালদিনহো

শুধু একটু মুটিয়ে গেছেন, বাকি সবকিছু আগের মতোই। মুখের চিরচেনা মিষ্টি হাসি, নিজের নাম শোনার পর হাত তুলে অভিবাদন জানানো– ফুটবলের স্বপ্নের নায়ককে বাস্তবে দেখে কিছুটা সময়ের জন্য সবাই যেন কল্পনার রাজ্যে।

ড্রিবলিংয়ের জাদুকরের পায়ের শৈল্পিক কারুকাজের দৃশ্য সাদা-কালো আর রঙিন টেলিভিশনের পর্দায় দেখে এতটাই মোহিত ছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা, চোখের সামনে গতকাল সেই ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদিনহোকে পেয়ে ২০০২ বিশ্বকাপ ফুটবলের স্মৃতিতে ফিরে যান সবাই। পেস্ট কালারের টি-শার্ট আর কালো প্যান্ট পরে সাদা গাড়ি থেকে নামার পর ভুবন ভোলানো হাসি।

ভিড় সামলে র‍্যাডিসন হোটেলের ভেতরে ঢোকার পর চারপাশ থেকে শুধুই ক্যামেরার ঝলকানি। লিফটের ভেতরে ঢুকে‌ও বুঝতে পেরেছেন কতটা ভালোবাসেন বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা, তাই তো হ্যালো শোনার পর ‘ইয়েস’ বলে জবাবও দিয়েছেন বার্সেলোনার সাবেক এ তারকা। বিমানবন্দর থেকে বিকেল ৪টায় হোটেলে আসার পর কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যায় চলে যান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখানে শেখ হাসিনার সঙ্গে কিছু সময় কাটানোর পর আবার চলে আসেন হোটেল র‍্যাডিসনে। প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা‌ও রোনালদিনহোর সঙ্গে ক্যামেরায় বন্দি হন। এর পর এক ঘণ্টার আনুষ্ঠানিকতা শেষে নীরবেই রাতে ঢাকা ছেড়ে যান রোনালদিনহো। সময়স্বল্পতায় কোনো জাদু দেখাতে পারেননি ‘দ্য ম্যাজিশিয়ান’।

বিশ্ব ফুটবলে রোনালদিনহোর আগমনী বার্তা ২০০২ বিশ্বকাপ থেকে। ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করা এ তারকা সেই সময় ছিলেন টগবগে তরুণ। মাত্র ২২ বছর বয়সে শৈল্পিক ফুটবলে যে রং ছড়িয়েছিলেন রোনালদিনহো, ২১ বছর পর তাঁর বয়স এখন ৪৩। বয়স আর কারাবাসের নেতিবাচক খবরের কারণে জনপ্রিয়তায় কিছুটা ভাটা পড়ে তাঁর। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের কাছে রোনালদিনহো নাম মানেই ‘দ্য ম্যাজিশিয়ান’।

ফুটবলের এ জাদুকরকে ভক্তদের সামনে উপস্থাপন করতে তেমন কোনো আয়োজন ছিল না আয়োজকদের। গত জুলাইয়ে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে নিয়ে ভক্তদের যে উন্মাদনা ছিল, রোনালদিনহোর ক্ষেত্রে তা ছিল না। অ্যাস্টন ভিলার গোলরক্ষক মার্টিনেজকে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। ব্রাজিলিয়ান তারকার আগমন উপলক্ষে সীমিত সংখ্যক মিডিয়াকে আমন্ত্রণ জানায় তত্ত্বাবধায়ক ক্রিয়েশন ‌ওয়ার্ল্ড ও অফ ট্র্যাক।

১৬ অক্টোবর কলকাতায় গিয়ে পূজামণ্ডপ উদ্বোধন, ফুটবল একাডেমি ও মোহনবাগান ক্লাবে গিয়েছিলেন রোনালদিনহো। কিন্তু সাড়ে ৬ ঘণ্টার সফরে রোনালদিনহোকে ঢাকায় আনা হয়েছে বাণিজ্যিক কারণে। বিশ্ব ক্রীড়া মহাতারকার সঙ্গে ভক্তদের মিলনমেলার কোনো আয়োজন ছিল না। যেমন ছিল না এমিলিয়ানো মার্টিনেজের ক্ষেত্রে। শুধু হোটেলের দুই পাশে ‘ম্যাজিকেল নাইট উইথ ফুটবল লিজেন্ড’ লেখা সংবলিত ব্যানার চোখে পড়েছে। যে বলরুমে আয়োজন করা হয়েছে, সেটা খুবই ছোট। বলরুমটি লোকেলোকারণ্যে এতটাই পরিপূর্ণ ছিল, সত্যিকারের ফুটবল ভক্তদের সুযোগ মেলেনি প্রিয় তারকার সঙ্গে ছবি তোলার।

রোনালদিনহো ফ্যানদের সরাসরি দেখার সুযোগ দিয়েছিল ক্রিয়েশন ‌ওয়ার্ল্ড। তাদেরই একজন শুভ। যিনি গতকাল চুয়াডাঙ্গা থেকে আসেন। টিভির পর্দায় যার খেলা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন, সামনে তাঁকে দেখে শুভ ফিরে যান লি‌ওনেল মেসির সঙ্গে রোনালদিনহোর অতীতের মাঠ কাঁপানোর স্মৃতিগুলোয়। কিন্তু ভক্ত হয়ে‌ও রোনালদিনহোর সঙ্গে ছবি তুলতে না পারার আক্ষেপ রয়েই গেল শুভর মতো আরও অনেকের। প্রিয় তারকার ভক্তরা দেখতে না পারলে‌ও এবার রোনালদিনহোর সঙ্গে এক ফ্রেমে ছিলেন জামাল ভূঁইয়া। চার মাস আগে বিমানবন্দরে মার্টিনেজের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা করলে‌ও এজেন্ট শতদ্রু দত্তের কারণে পারেননি।

ফুটবলে বর্ণময় চরিত্রের কারণে বিশ্বে নন্দিত রোনালদিনহো। বাংলাদেশে‌ও যে দারুণ জনপ্রিয়, কিছুটা সময়ের সফরে সেটা অনুভব করেছেন নিশ্চয়ই! কিন্তু আয়োজকদের অব্যবস্থাপনায় সুন্দর আয়োজনে পড়েছে কলঙ্কের দাগ। রোনালদিনহোর অনুষ্ঠান কাভার করতে আসা সাংবাদিকদের জন্য বসার কোনো জায়গা নেই বলে তিনবার মাইকে আসে এমন ঘোষণা। অপমানিত হয়ে অনুষ্ঠান বয়কট করা সাংবাদিকরা শুনতে পারেননি রোনালদিনহোর বাংলাদেশ অভিজ্ঞতার গল্পটি।

সমকাল