নিশ্চিত জয় চায় আওয়ামী লীগের শরিক–মিত্ররা

নির্বাচন নিয়ে জোট ও মিত্রদের সঙ্গে এখনো আপসরফা করতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মিত্র জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের শরিকেরা তাদের আসনে প্রথমে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার চায়। আবার ভাগে পাওয়া আসনে যাতে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকেন, সেই নিশ্চয়তাও চায় তারা।

তিন-চার দিন ধরে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টি ও ১৪-দলীয় জোটের নেতাদের পৃথক বৈঠক হয়। এসব বৈঠকের সূত্রে এমনই আভাস পাওয়া গেছে।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, তারা মিত্র ও শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের আসনে সমঝোতায় যেতে রাজি। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী সরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে চায় না। কারণ, এতে ভোটার উপস্থিতি কমে যেতে পারে। এ ছাড়া প্রশাসনিক চাপ দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী সরিয়ে দিতে গেলে সমালোচনা হতে পারে।

গত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় মিত্র জাতীয় পার্টি (জাপা)। সমঝোতার মাধ্যমে ভোট করে গত দুটি সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় ছিল তারা। আরেকটি ভোট সামনে রেখে দুই দলের মধ্যে দর-কষাকষি শুরু হয়েছে। গত মঙ্গল ও বুধবার আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে জাপা।

সূত্রগুলো বলছে, আরও দু-একটি বৈঠকের পর আসন-ভাগাভাগি চূড়ান্ত হতে পারে। তবে সমঝোতা হলে সেই আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের প্রত্যাহার করানোটা এই মুহূর্তে জাপার দুশ্চিন্তা। দলটির নেতারা মনে করছেন, মাঠে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রেখে তাঁদের নির্বাচনে জয়ী হওয়াটা কঠিন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও ঝুঁকির কারণ ভাবছেন তাঁরা। মূলত এই দুটি বাধা দূর করে নির্বাচনী মাঠ ঝুঁকিমুক্ত করাই জাপার লক্ষ্য।

জাপার দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে গত দুটি বৈঠকে এ বিষয়গুলো আলোচনায় এনেছেন জাপার নেতারা। বিশেষ করে আগামী সংসদ নির্বাচনের কিছু কৌশলগত দিক নিয়ে আলোচনা করেছে দুই পক্ষ। জাপার নেতারা বলেছেন, বিএনপিসহ প্রধান দলগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়া ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে দেশে এবং আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন আছে। এমন পরিস্থিতি সামনে রেখেই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

এ অবস্থায় নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের মনোভাব বদলাতে হলে প্রথমে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন হবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মহলকে দেখাতে হবে সংসদে বিরোধী দলের ভালো প্রতিনিধিত্ব আছে।

এমন প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আওয়ামী লীগকে জাপার নেতারা ৭৫টি আসনের একটি তালিকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। কারণ, সরকার বিএনপি ভাঙার চেষ্টা করে সেভাবে সফল হতে পারেনি। দলটির নেতাদের কিংস পার্টি নামে পরিচিতি পাওয়া তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে (বিএনএম) আনা যায়নি। এ অবস্থায় জাপাই ভরসা। জাপা নেতাদের এই ধারণায় আওয়ামী লীগ সম্মত হলে তারা আসন বেশি পাবে। অন্যথায় ১৫ থেকে ২০ আসনে সন্তুষ্ট থাকতে হতে পারে।

অবশ্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে দলের বনানী কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতি চলমান রাখতেই নির্বাচনে যাচ্ছেন তাঁরা। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হবে। আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।

১৪ দলের শরিকেরা একই জটিলতায়

গত এক সপ্তাহের মধ্যে ১৪ দলের শরিকেরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এখনো শরিকদের চাওয়া আসনের সব কটির সুরাহা হয়নি। এ ছাড়া ভাগে পাওয়া আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ১৪-দলীয় জোটের শরিক কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতার আসনে ছাড় দেওয়া হবে—এমন একটা ধারণাও তাদের দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা; জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, তরীকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ও জাতীয় পার্টির (জেপি) আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর আসন রয়েছে।

নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী প্রথম আলোকে বলেন, আসন-সমঝোতার বিষয়টি শেষ পর্যায়ে। সামান্য কিছু বিষয় অমীমাংসিত আছে। তা-ও শিগগিরই মিটে যাবে বলে মনে করছেন তিনি।

জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার ও রেজাউল করিম তানসেন এবং ওয়ার্কার্স পার্টির মোস্তফা লুৎফুল্লাহ বর্তমানে সংসদ সদস্য আছেন। কিন্তু তাঁদের আসনগুলোতে আওয়ামী লীগ ছাড় দেবে—এমন নিশ্চয়তা নেই।

আসন-সমঝোতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সরিয়ে দেওয়ার আলোচনার মধ্যেই জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু গতকাল নিজ নির্বাচনী এলাকা ঝালকাঠি গেছেন।

আমির হোসেন মুঠোফোনে গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, জোটের আসন-ভাগাভাগির বিষয়ে ১০ ডিসেম্বরের পর শরিকদের সঙ্গে চূড়ান্ত সমঝোতা হবে।

প্রথম আলো